- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
- হৃদযন্ত্রের যত কথা এবং অন্যান্য
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
হৃদযন্ত্রের যত কথা এবং অন্যান্য
হৃৎপিণ্ড (Heart)
হৃৎপিণ্ড রক্ত সংবহনতন্ত্রের অন্তর্গত একরকমের পাম্প। হৃৎপিণ্ড অনবরত সংকুচিত ও প্রসারিত হয়ে সারা দেহে রক্ত সঞ্চালন ঘটায়।
মানুষের হৃৎপিণ্ড বক্ষগহ্বরে ফুসফুস দুটির মাঝখানে এবং মধ্যচ্ছদার ওপরে অবস্থিত। হৃৎপিণ্ডের প্রশস্ত প্রান্তটি ওপরের দিকে এবং ছুঁচালো প্রান্তটি নিচের দিকে বিন্যস্ত থাকে (চিত্র: ৩.০৮)।
হৃৎপিণ্ডটি দ্বিস্তরী পেরিকার্ডিয়াম পর্দা দিয়ে বেষ্টিত থাকে। উভয় স্তরের মাঝে পেরিকার্ডিয়াল ফ্লুইড থাকে, যেটি হৃৎপিণ্ডকে সংকোচনে সাহায্য করে। মানুষের হৃৎপিণ্ড চারটি প্রকোষ্ঠ নিয়ে গঠিত। ওপরের প্রকোষ্ঠ দুটিকে যথাক্রমে ডান এবং বাম অলিন্দ (Atrium) এবং নিচের প্রকোষ্ঠ দুটিকে যথাক্রমে ডান ও বাম নিলয় (Ventricles) বলে। দুটি অলিন্দের ভেতরকার প্রাচীর পাতলা কিন্তু নিলয় দুটির প্রাচীর পুরু এবং পেশিবহুল। ডান অলিন্দের সঙ্গে একটি ঊর্ধ্ব মহাশিরা এবং একটি নিম্ন মহাশিরা যুক্ত থাকে।
বাম নিলয়ের সঙ্গে চারটি পালমোনারি শিরা যুক্ত থাকে। ডান নিলয় থেকে ফুসফুসীয় ধমনি এবং বাম নিলয় থেকে মহাধমনি উৎপত্তি হয়েছে।
ধমনি
যেসব রক্তনালির মাধ্যমে রক্ত হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে বাহিত হয়, তাকে ধমনি বা আর্টারি বলে। ধমনির প্রাচীর পুরু এবং তিনটি স্তরে গঠিত। এদের গহ্বর ছোট (চিত্র ৩.০৯)। ধমনিতে কোনো কপাটিকা থাকে না। ফলে ধমনি দিয়ে রক্ত বেগে প্রবাহিত হয়।
ধমনির স্পন্দন আছে। ধমনি শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয় এবং এদের শাখা ধমনি এবং অ্যার্টোরিওল বলে। এগুলো ক্রমশ শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে অবশেষে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কৈশিক জালিকায় শেষ হয়। ধমনির মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড থেকে দেহের বিভিন্ন অংশে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেনযুক্ত রক্ত পরিবাহিত হয়। তবে ফুসফুসীয় ধমনি এর ব্যতিক্রম, এই রক্তনালি দিয়ে হৃৎপিণ্ড ফুসফুসে রক্ত প্রেরণ করে বলে এটিকে ধমনি (Pulmonary Artery) বলা হলেও এটি উচ্চমাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইড-যুক্ত রক্ত পরিবহণ করে।
শিরা
যেসব রক্তনালির মাধ্যমে উচ্চমাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইড-পূর্ণ রক্ত দেহের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে, তাদের শিরা বলে। তবে পালমোনারি শিরা এর ব্যতিক্রম। এর মাধ্যমে রক্ত হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে বলে এটিকে শিরা বলা হয়। তবে এই শিরা ফুসফুস থেকে উচ্চমাত্রায় অক্সিজেন-সমৃদ্ধ রক্ত হৃৎপিণ্ডে নিয়ে আসে। শিরার প্রাচীর ধমনির মতো ৩টি স্তরে গঠিত হলেও প্রাচীর বেশ পাতলা এবং গহ্বরটি বড় (চিত্র ৩.০৯)। বেশিরভাগ শিরায় কপাটিকা থাকায় শিরা দিয়ে রক্ত ধীরে ধীরে একমুখে প্রবাহিত হয়।
ধমনি প্রান্তের কৌশিক জালিকাগুলো ক্রমশ একত্রিত হয়ে প্রথমে সূক্ষ্ম শিরা বা উপশিরা গঠন করে। উপশিরাগুলো পরস্পর মিলিত হয়ে পরে শিরা গঠন করে। কতগুলো শিরা মিলে মহাশিরা গঠন করে। এভাবে শিরা কৈশিক জালিকা থেকে শুরু হয় এবং হৃৎপিণ্ডে শেষ হয়।
উল্লেখ্য যে, ধমনি ও শিরা উভয়েরই রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড একত্রে উপস্থিত থাকে। পার্থক্য কেবল তাদের মাত্রা বা পরিমাপে।
কৈশিক জালিকা
ধমনি ও শিরার সংযোগস্থলে অবস্থিত কেবল এক স্তরবিশিষ্ট এন্ডোথেলিয়াম দিয়ে গঠিত যেসব সূক্ষ্ম রক্তনালি জালকের আকারে বিন্যস্ত থাকে, সেগুলোকে কৈশিক জালিকা বলে (চিত্র ৩.১০)। কৈশিক জালিকার রক্ত ও কোষের মধ্যে ব্যাপন প্রক্রিয়ার দ্বারা পুষ্টিদ্রব্য, অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, রেচন পদার্থ ইত্যাদির আদানপ্রদান ঘটে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ