• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • বলশেভিক বিপ্লব
বলশেভিক বিপ্লব

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

বলশেভিক বিপ্লব

বলশেভিক বিপ্লবের ফলাফল

বলশেভিক বিপ্লব শুধু রাশিয়ার আর্থসামাজিক ব্যবস্থা পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে সংঘটিত হয়নি, বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদের অবসান ঘটিয়ে শোষণহীন সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংকল্পও ব্যক্ত করেছিল। তাই এ বিপ্লব রাশিয়াসহ সারা পৃথিবীর রাজনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে প্রভাব বিস্তার করেছিল। বিংশ শতাব্দীতে সারা পৃথিবীর নির্যাতিত, অবহেলিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তিসংগ্রামে নিরন্তর প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছিল।

বলশেভিক বিপ্লবের ফলাফল ছিল নিম্নরূপ-

প্রথমত: বলশেভিক বিপ্লব রাশিয়ার দীর্ঘদিনের সামন্ততান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে দ্রুত উচ্ছেদ করে। জমি ও শিল্পকারখানা রাষ্ট্রীয় মালিকানায় এনে আধা-পুঁজিবাদী, আধা-সামন্ততান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করে।

দ্বিতীয়ত: বলশেভিক বিপ্লবের ফলে রাশিয়া থেকে জারতন্ত্র ও বুর্জোয়া গণতন্ত্র উচ্ছেদ হয়। রাশিয়ার কৃষক ও শ্রমিকের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত সোভিয়েত শাসনব্যবস্থা কার্যকর করা হয়। নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শ্রেণিভিত্তিক সমাজের পরিবর্তে শ্রেণিহীন, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু হয়'। প্রতিষ্ঠিত হয় সর্বহারার একনায়কতন্ত্র।

তৃতীয়ত: বলশেভিক বিপ্লবের পূর্বে রাশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিকাশের পরও রাশিয়া ছিল ইউরোপের অন্যতম পিছিয়ে পড়া দেশ। বলশেভিক বিপ্লব শোষণব্যবস্থা উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান ঘুচিয়ে আনে। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হওয়ার সামান্য কয়েক বছরের মধ্যে রাশিয়ায় ধনী ও গরিবের পার্থক্য কমে আসে। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা লাভ করে ক্রমেই উন্নত জীবনে প্রবেশ করে।

চতুর্থত: বলশেভিক বিপ্লবের পূর্বে রাশিয়ার প্রশাসন ছিল সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীভূত ও একনায়কতান্ত্রিক। বিপ্লবের ফলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ এবং প্রশাসনে কৃষক ও শ্রমিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। স্থানীয় প্রশাসন পরিকল্পনার দায়িত্ব অর্পিত হয় আঞ্চলিক সোভিয়েতের উপর।

পঞ্চমত: বিপ্লবের প্রাক্কালে রাশিয়ায় প্রায় ১৩০টির মতো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ছিল, যাদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের কোনো সুযোগ ছিল না। শিক্ষার হার এদের মধ্যে প্রায় অনুপস্থিত ছিল। বিপ্লবের পর দেশের সকল নাগরিক ও জাতিসত্তার শিক্ষা-সংস্কৃতির মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গণশিক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে রুশ জাতি ছাড়াও অন্য জাতিগুলোও শিক্ষিত হয়ে ওঠে। জাতিগত বৈষম্য দূর হওয়ায় বিভিন্ন জাতির মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে ওঠে, যা উন্নত রুশ রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণে সাহায্য করে।

ষষ্ঠত: বিপ্লবের পর রাষ্ট্র তার প্রত্যেক নাগরিকের শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ফলে মানুষের ন্যূনতম মৌলিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

সপ্তমত: বলশেভিক বিপ্লব পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি সমাজতন্ত্রের ভাবধারায় আলোড়িত হয়। পূর্ব ইউরোপ, চীন, মঙ্গোলিয়া, উত্তর কোরিয়া ও কিউবায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। পৃথিবীব্যাপী সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন একটি প্রধান রাজনৈতিক মতাদর্শে পরিণত হয়।

অষ্টমত: বলশেভিক বিপ্লব এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার পরাধীন দেশগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে উপনিবেশের জনগণ স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য সংগ্রাম শুরু করে। ক্রমে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম। সমাজতন্ত্রের বেশকিছু মর্মবাণী ধারণ করে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়ও কল্যাণকামী রাষ্ট্রচিন্তার বিস্তার ঘটে।

বস্তুত জারশাসিত রাশিয়ার সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সর্বত্র যে পচনের সূত্রপাত হয়েছিল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ ধাক্কায় তা মুখ থুবড়ে পড়েছিল। বলশেভিকদের কৃষক-শ্রমিকবাদী নীতি, যুদ্ধের বিরোধিতা ও দক্ষ সাংগঠনিক তৎপরতা মানুষের মনে বিকাশ, প্রগতি ও উচ্চ আকাঙ্ক্ষার বাণী নিয়ে এসেছিল, যার ফল হচ্ছে ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লব।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ