• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • কৃষি প্রযুক্তি
কৃষি প্রযুক্তি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

কৃষি প্রযুক্তি

মৃত্তিকাভিত্তিক পরিবেশ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফসল নির্বাচন

আগের পাঠগুলোতে আমরা ফসলের শ্রেণি অনুযায়ী মাটির বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে শিখেছি। এই পাঠে আমরা মাটির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করতে শিখব। মাটির বৈশিষ্ট্য বলতে মাটির শ্রেণি, জৈব পদার্থের মাত্রা, পটাশজাত খনিজের মাত্রা, PH মাত্রা এবং মাটির বন্ধুরতাকে বোঝায়। আমরা নিশ্চয় জেনেছি যে মাটির প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাংলাদেশকে ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। কোনো একটি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল প্রকৃতপক্ষে সে অঞ্চলের মাটির প্রতিনিধিত্ব করে। এক একটি কৃষি অঞ্চল এক একটি প্রযুক্তিও বটে। কৃষি কর্মকাণ্ডের জন্য সবচেয়ে বড় কাজ হলো মাটির বৈশিষ্ট্য ও বন্ধুরতা অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করা। মাটির বৈশিষ্ট্যভিত্তিক ফসল নির্বাচন কৃষি কর্মের একটি অত্যাবশ্যক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি যত নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা যাবে কৃষিকাজের ফলাফলও তত বেশি লাভজনক হবে। মাটির গঠন ও প্রকৃতি অনুযায়ী ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলকে নিম্নোক্ত ৫টি ভাগে ভাগ করা যায়।

এই অঞ্চলগুলোর মাটির বৈশিষ্ট্যভিত্তিক ফসল নির্বাচন দেখানো হলো।

১। দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি অঞ্চল

২। কাদা মাটি অঞ্চল

৩। বরেন্দ্র অঞ্চল ও মধুপুর অঞ্চল

৪। পাহাড়ি ও পাদভূমি অঞ্চল

৫। উপকূলীয় অঞ্চল

মৃত্তিকা ভিত্তিক অঞ্চল
চাষ উপযোগী ফসল
দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি অঞ্চল এ অঞ্চলের ভূমির মাটি দোআঁশ থেকে পলি দোআঁশ প্রকৃতির। উঁচু ভূমি থেকে মাঝারি নিচু ভূমি এ অঞ্চলের অর্ন্তভুক্ত। দোআঁশ অঞ্চলের মাটিতে জৈব পদার্থের মাত্রা অল্প থেকে মাঝারি। এর pH মাত্রা ৫.২ হতে ৬.২ পর্যন্ত। পলি দোআঁশ অঞ্চলের মাটিতে জৈব পদার্থের মাত্রা খুবই সামান্য। PH মাত্রা ৪.৯ হতে ৬.১ পর্যন্ত।









কাদা মাটি অঞ্চল​
দোআঁশ মাটিতে প্রায় সব রকমের ফসল ফলে। দোআঁশ ফসল উৎপাদনের আদর্শ মাটি। বৃষ্টির উপর নির্ভর করে কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করেন। আবার সেচের উপর নির্ভর করেও কৃষকেরা ফসল উৎপাদন করেন। নিচে বৃষ্টি ও সেচ নির্ভর ফসলের নাম উল্লেখ করা হলো।

বৃষ্টিনির্ভর ফসল নির্বাচন

রবি মৌসুম: গম, মুলা, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, মরিচ, চিনা বাদাম ইত্যাদি
খরিপ-১: রোপা আউশ, বোনা আমন, পাট (সাদা), কাউন, বেগুন, তিল, মুগ, বোনা আউশ, ভুট্টা, ধৈঞ্চা ইত্যাদি
খরিপ-২: রোপা আমন (স্থানীয় উন্নত জাত ও উফশী)

সেচনির্ভর ফসল নির্বাচন

রবি মৌসুম: বোরো, আখ, আখ+আলু, আখ+মুগ, পিঁয়াজ, রসুন, গম, আলু, মুগ, সরিষা ইত্যাদি খরিপ-১: রোপা আউশ, পাট (তোষা), তিল, ভুট্টা খরিপ-২: রোপা আমন (স্থানীয় উন্নত জাত ও উফশী)
মাঝারি উঁচু ও মাঝারি নিচু এলাকার মাটি কর্দম বিশিষ্ট। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে পলি কাদা বিশিষ্ট মাটিও লক্ষ করা যায়। এই মাটিতে মাঝারি মাত্রায় জৈব পদার্থের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। ক্ষেত্র বিশেষে উচ্চমাত্রার জৈব পদার্থও আছে। পটাশজাত খনিজের মাত্রা মাঝারি।
মাঝারি নিচু ও নিচু অঞ্চলসমূহে কাদা মাটি বেশি দেখা যায়। কাদা মাটিতে ধানের উৎপাদন ভালো হয়। নিম্নে বৃষ্টিনির্ভর ও সেচনির্ভর ফসলের নাম উল্লেখ করা হলো।
বৃষ্টিনির্ভর বা সেচনির্ভর উভয় ক্ষেত্রেই এই অঞ্চলের ফসল প্রধানত ধান। রবি মৌসুমে সেচের ব্যবস্থা থাকলে কিছু পরিমাণ অন্যান্য ফসলও জন্মে।
বরেন্দ্র ও মধুপুর অঞ্চল
চাষ উপযোগী ফসল
উঁচু এবং মাঝারি উঁচু ভূমি বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য। মধুপুর অঞ্চল সমতল ও উঁচু ভূমি বিশিষ্ট্য। এর মাটি দোআঁশ। মাটিতে নিম্নমাত্রার জৈব পদার্থ ও পটাশজাত খনিজ পদার্থ রয়েছে। এর pH মাত্রা ৫.৫-৬.৫।
এই অঞ্চলের মাটি দোআঁশ হওয়ার কারণে ঠিকমতো সেচ পেলে নানাবিধ ফসল উৎপন্ন করা যায়। নিচে বৃষ্টি ও সেচ নির্ভর ফসলের নামের তালিকা দেওয়া হলো।
বৃষ্টি নির্ভর ফসল নির্বাচন
রবি মৌসুম: বোরো, আখ, আলু, সরিষা, মসুর, ছোলা, বার্লি ও শীতকালীন শাকসবজি।
খরিপ-১: বোনা আউশ, পাট, কাউন, গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি
খরিপ-২: রোপা আমন (স্থানীয় উন্নত ও উফশী)
সেচ নির্ভর ফসল নির্বাচন
রবি মৌসুম: আখ, আখ+আলু, গম, সরিষা, চিনাবাদাম, মসুর, টমেটো, বাঁধাকপি, ছোলা, শীতকালীন শাকসবজি
খরিপ-১: রোপা আউশ, পাট, মুগ, ঢেঁড়স
খরিপ-২: রোপা আমন (স্থানীয় উন্নত ও উফশী)
পাহাড়ি ও পাদভূমি অঞ্চল এ অঞ্চলের ৯০ শতাংশের বেশি ভূমি উঁচু। খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, কক্সবাজার ও আখাউড়া ছাড়াও আরও অনেক জেলার পাহাড়ি অঞ্চল এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই মাটি দোআঁশ। জৈব পদার্থ ও পটাশজাত খনিজের মাত্রা সামান্য। এখানকার মাটির PH মাত্রা ৫-৫.৭।
পাহাড়ি ও পাদভূমি অঞ্চলের মাটি দোআঁশ হওয়াতে পাহাড়ি অঞ্চলেও নানাবিধ ফসল উৎপাদন হয়। নিচে এই মাটিতে উপযোগী বৃষ্টি নির্ভর ও সেচ নির্ভর ফসলের তালিকা দেওয়া হলো।
বৃষ্টিনির্ভর ফসল নির্বাচন
রবি মৌসুম: আখ, সরিষা, মসুর, ছোলা, গম ইত্যাদি
খরিপ-১: বোনা আউশ, পাট, বোনা আমন
খরিপ-২: রোপা আমন
সেচনির্ভর ফসল নির্বাচন
রবি মৌসুম: আখ, আখ+আলু, আখ+মসুর, বোরো, গম, সরিষা ইত্যাদি
খরিপ-১: ধৈঞ্চা, বোনা আউশ, রোপা আউশ
খরিপ-২: রোপা আমন (স্থানীয় উন্নত ও উফশী)
মৃত্তিকা ভিত্তিক অঞ্চল
চাষ উপযোগী ফসল
উপকূলীয় অঞ্চল

সেন্টমার্টিন দ্বীপ, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, বরিশাল ও ভোলাসহ বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা এ অঞ্চলের অন্তর্গত। এখানে মাঝারি উঁচু ভূমির আধিক্য বেশি। এর মাটি দোআঁশ এবং বেলে ও পলি দোআঁশ প্রকৃতির। জৈব পদার্থ ও পটাশজাত খনিজের মাত্রা অল্প।

এই অঞ্চলের মাটির PH মাত্রা ৭.০-৮.৫।
যেহেতু এখানকার মাটি দোআঁশ, বেলে ও পলি দোআঁশ তাই বিভিন্ন প্রকার কৃষিপণ্য এই অঞ্চলে উৎপাদন হয়। নিচে এই অঞ্চলে বৃষ্টিনির্ভর ও সেচনির্ভর ফসলের নাম উল্লেখ করা হলো।

বৃষ্টিনির্ভর ফসল নির্বাচন

রবি মৌসুম: গম, সরিষা, মুগ, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, মুলা, বেগুন, শিম, টমেটো, চিনাবাদাম, ভুট্টা ইত্যাদি

খরিপ-১: বোনা আউশ, রোপা আউশ, পাট, কাঁকরোল ইত্যাদি
খরিপ-২: রোপা আমন (স্থানীয় উন্নত ও উফশী)

সেচনির্ভর ফসল নির্বাচন

রবি মৌসুম: বোরো, টমেটো, আলু, সরিষা, তরমুজ, মুগ, মরিচ ইত্যাদি।

খরিপ-১: রোপা আউশ
খরিপ-২: রোপা আমন (স্থানীয় উন্নত ও উফশী)

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ