• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • কৃষি প্রযুক্তি
কৃষি প্রযুক্তি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

কৃষি প্রযুক্তি

ভূমিক্ষয়ের প্রকার

ভূমিক্ষয় দুই প্রকার। যথা: (১) প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয় ও (২) মনুষ্য কর্তৃক ভূমিক্ষয়। নিচে এগুলো আলোচনা করা হলো:

১। প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয়: প্রকৃতিতে ব্যাপকভাবে ভূমিক্ষয় হয়। ভূ-সৃষ্টির শুরু থেকেই এর ক্ষয় শুরু হয়েছে। দীর্ঘকালের এই ক্ষয়ের ফলেই নদীর মোহনায় বা সমুদ্রে চর সৃষ্টি হয়েছে বা দ্বীপ গড়ে উঠেছে। এই ভূমিক্ষয়ের ফলে পৃথিবীর অনেক অঞ্চল উর্বর হয়েছে, আবার অনেক অঞ্চল অনুর্বর হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে অনবরত ভূমিক্ষয় হচ্ছে অথচ আমরা তা উপলব্ধি করি না।

বায়ুপ্রবাহ ও বৃষ্টিপাত প্রাকৃতিক কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। এগুলো চলার পথে ভূপৃষ্ঠের মাটির কণা বহন করে নিয়ে যায়। এ জন্য যে পরিমাণ মাটির ক্ষয় হয় তা খুবই নগণ্য এবং দৃষ্টিগোচর হয় না। হয়তো তাই ভূমির এই ক্ষয়কে বলা হয় স্বাভাবিক ক্ষয়। প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয় মাটি গঠন প্রক্রিয়ারই একটি অংশ বলে বিবেচিত হয়। মাটি গঠন ও ভূমিক্ষয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্য রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘকাল ভূমিক্ষয়ের ফলে কৃষিকাজ একটা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে।

প্রাকৃতিক ভূমিক্ষয়ের শ্রেণিবিভাগ

ভূমিক্ষয়কে প্রধানত দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা:
ক. বৃষ্টিপাতজনিত ভূমিক্ষয় এবং
খ. বায়ুপ্রবাহজনিত ভূমিক্ষয়।

ক. বৃষ্টিপাতজনিত ভূমিক্ষয় বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশে ব্যাপক ভূমিক্ষয় হয়। এই ভূমিক্ষয়কে নিচের চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়;
i) আস্তরণ ভূমিক্ষয়
ii) রিল ভূমিক্ষয়
iii) নালা বা গালি ভূমিক্ষয়
iv) নদী ভাঙন।

নিচে এই ভূমিক্ষয়গুলোর আলোচনা করা হলো

i) আস্তরণ ভূমিক্ষয়: যখন বৃষ্টির পানি বা সেচের পানি উঁচু স্থান থেকে ঢাল বেয়ে জমির উপর দিয়ে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় তখন জমির উপরিভাগের নরম ও উর্বর মাটির কণা কেটে পাতলা আবরণের বা আস্তরণের মতো চলে যায়। একেই বলা হয় আস্তরণ ভূমিক্ষয়। বৃষ্টির ফলে যে ভূমিক্ষয় হয় তা সহজে চোখে পড়েনা। কিন্তু কয়েক বৎসর পর বোঝা যায় যে জমির উর্বরতা হ্রাস পেয়েছে। আর এর কারণ হলো আস্তরণ ভূমিক্ষয়।

ii) রিল ভূমিক্ষয়: রিল ভূমিক্ষয় আস্তরণ ভূমিক্ষয়েরই দ্বিতীয় ধাপ। প্রচুর বৃষ্টিপাতের ফলে পানি বেশি হলে জমির ঢাল বরাবর লম্বাকৃতির রেখা সৃষ্টি হয়। যা অনেকটা হাতের রেখার মতো। এই ছোট ছোট রেখা কালক্রমে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে বড় হতে থাকে। বৃষ্টির পানির স্রোতধারায় উর্বর মাটি জমি থেকে স্থানচ্যুত হয় ফলে জমি উর্বরতা হারায় এবং কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারেও অসুবিধার সৃষ্টি করে।

iii) নালা বা গালি ভূমিক্ষয় এই ভূমিক্ষয় আস্তরণ ভূমিক্ষয়ের তৃতীয় ধাপ। অর্থাৎ রিল ভূমিক্ষয় থেকেই নালা বা গালি ভূমিক্ষয়ের উদ্ভব। দীর্ঘকাল ধরে রিল ভূমিক্ষয়ের ফলে এর ছোট ছোট নালাগুলো দৈর্ঘ্য ও প্রন্থে বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর ফসলের মাটিও বেশি ক্ষয় হতে থাকে। একসময় এগুলো নর্দমা বা ছোট নদীর মতো দেখায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যত বেশি হবে নালা বা গালি ভূমিক্ষয় ততই বেশি হবে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে এরূপ ভূমিক্ষয় দেখা যায়।

iv) নদীভাঙন : নদীভাঙন বাংলাদেশের ভূমিক্ষয়ের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ, গোয়ালন্দ প্রভৃতি অঞ্চলে প্রতি বছরই নদীভাঙনে শত শত হেক্টর জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বর্ষার শুরুতে কিংবা বর্ষার শেষে নদীতে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে নদীতীরের কৃষিজমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

খ. বায়ুপ্রবাহজনিত ভূমিক্ষয় গতিশীল বায়ুপ্রবাহ কর্তৃক এক স্থানের মাটি অন্যত্র বয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়াকে বাত্যাজনিত ভূমিক্ষয় বলে। যেসব এলাকা সমতল, তুলনামূলকভাবে গাছপালা কম এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কম, সেসব এলাকায় বাত্যাজনিত কারণে ভূমিক্ষয়ের প্রকোপ দেখা যায়। বেলে ও বেলে দোআঁশ মাটি আলগা ও হালকা। কাজেই প্রবল বেগে বায়ুবাহিত হলে এসব মাটি সহজেই উড়ে যায়। আর যে স্থানে মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ একেবারেই কম সে স্থানের বায়ুজনিত ভূমিক্ষয় আরও বেশি।

মরুভূমিতে বায়ুপ্রবাহ উর্বর অঞ্চলে বালি নিক্ষেপ করে অনুর্বর করে তোলে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে দিনাজপুর-রাজশাহী অঞ্চলে চৈত্র-বৈশাখ মাসে বায়ু প্রবাহজনিত ভূমিক্ষয়ের প্রকোপ সামান্য দেখা যায়। এর ফলে বায়ু প্রবাহে আবাদি জমির উর্বরতা কমে যায়।

২। মনুষ্যকর্তৃক ভূমিক্ষয়: মানুষের বাঁচার জন্যে খাদ্যের প্রয়োজন। খাদ্য উৎপাদনের জন্য মানুষ মাটিকে যথেচ্ছ ব্যবহার করে আসছে কৃষি সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে। ভূমিকর্ষণ, পানি সেচ, পানি নিষ্কাশন ইত্যাদি কাজ কৃষিকাজের মূল অংশ। এ কাজগুলো দ্বারা মাটিকে প্রতিনিয়ত উৎপীড়ন করা হচ্ছে। ফলে ভূমিগুলো প্রাকৃতিক শক্তির তথা বৃষ্টি ও বাতাসের নিকট উন্মোচিত করছে এবং ক্ষয় হচ্ছে। মাটিকে যত ব্যবহার করা হবে ততই এর ক্ষয় হতে থাকবে। অনাচ্ছাদিত মাটি বৃষ্টি, বায়ু, বন্যা, এগুলোর আক্রমণের শিকার। পাহাড়ি এলাকায় জুম চাষের ফলে বা ধাপ করে চাষ করার ফলে মাটি আলগা হয়ে যায়। মুষলধারায় বৃষ্টির ফলে সেখানকার মাটিতে পাহাড়ি ধস নামে। এতে বিপর্যয় আকারে ভূমিধস হয়। শুধু তাই নয়- এতে জান মালেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়। তা'ছাড়া গবাদিপশু বিচরণকালে অনেক ধুলাবালি উড়ে যায়। মেঠোপথে চলার সময়ও ধুলাবালি উড়ে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ