- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- নবম-দশম শ্রেণি
- কৃষি প্রযুক্তি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
কৃষি প্রযুক্তি
ফসল উৎপাদনের জন্য জমি প্রস্তুতি
কৃষির যত কাজ আছে তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জমি প্রস্তুতি। সব ফসলের জন্য জমি প্রস্তুতি এক রকম নয়। যেমন, বোরো বা রোপা আমন ধানের ক্ষেত্রে আগে চারা উৎপাদন করতে হবে, তারপর মূল জমি প্রস্তুত করে চারা রোপণ করতে হবে। কিন্তু বোনা আউশ বা বোনা আমনের ক্ষেত্রে চারা উৎপাদন না করে সরাসরি প্রস্তুতকৃত মূল জমিতে বীজ ছিটিয়ে দিতে হয়। প্রায় একইরূপ গমের ক্ষেত্রেও ভালোভাবে জমি চাষ দিয়ে বীজ ছিটিয়ে বুনতে হবে। জমি প্রস্তুতির সাথে বহুমুখী কাজ জড়িত। যথা: জমি চাষ, মই দেওয়া, সার প্রয়োগ ইত্যাদি। নিচে ফসলভিত্তিক প্রত্যেকটি কাজ আলোচনা করা হলো।
ধান চাষের জন্য জমির প্রস্তুতি
ধান বাংলাদেশে সারা বছর চাষ করা হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বীজতলায় চারা উৎপাদন করতে হয়। ধানের বীজতলা তৈরি ও জমি প্রস্তুতি ৪র্থ অধ্যায় এর ১ম পরিচ্ছেদ থেকে আমরা জানতে পারব।
গম চাষের জন্য জমি প্রস্তুতকরণ
গম রবি শস্য। বর্ষার মৌসুম শেষ হওয়ার পর মধ্য কার্তিক-মধ্য অগ্রহায়ণ পর্যন্ত গম চাষের উপযুক্ত সময়। মাটির 'জো' দেখে জমিতে লাঙল চালনা করা হয়। গমের মাটি ঝুরঝুরা করে প্রস্তুত করা প্রয়োজন। এজন্য ৩ থেকে ৪ বার আড়াআড়ি জমি চাষ দিয়ে বার কয়েক মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করতে হয়। জমিতে যাতে কোনো বড় ঢেলা না থাকে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। গমের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। এ মাটি সহজেই ঝুরঝুরা হয়। পাওয়ার টিলারের সাথে রটোভেটর সংযোগ করে জমি চাষ দিলে মাটি ভালো চাষ হয় এবং একই সাথে মইও দেওয়া হয়। ঝুরঝুরা মাটি গমের অঙ্কুরোদগমের জন্য খুবই উপযোগী। অষ্টম শ্রেণিতে আমরা গম চাষে সার প্রয়োগ সম্পর্কে জেনেছি।
ডালজাতীয় শস্যের জন্য জমি প্রস্তুতি
বাংলাদেশে ডালজাতীয় শস্যের জন্য জমি চাষ করা হয় না। তবে মসুর ডালের জন্য জমিতে দুই-একটি চাষ দেওয়া হয়। বর্ষা শেষ হলে আশ্বিন-কার্তিকে যখন নদীর চর ও নিচু এলাকা হতে পানি সরে যায়, তখন নরম পলি মাটিতে বিনা চাষে বীজ বপন করা হয়। চাষ দেওয়া সম্ভব হলে দুইএকটি চাষও দেওয়া হয়। চাষের পর পতিত জমিতে আবার অনেক সময় রোপা ও বোনা আমনের জমিতে ফসল থাকা অবস্থায় ডালের বীজ ছিটিয়ে দেওয়া হয়।
আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুতি
নিচু এলাকায় বর্ষার পানি নেমে গেলে বা উঁচু এলাকায় আশ্বিন মাস হতে আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুতির কাজ শুরু করা হয়। সাধারণত দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে আলুর চাষ করা হয়। এই মাটি চাষ করা মোটামুটি সহজ। আলুর জমি ৫-৬ বার চাষ ও বার কয়েক মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে জমি প্রস্তুত করা হয়। আজকাল পাওয়ার টিলার দ্বারা চাষ করা হয় বলে ৩-৪ বার আড়াআড়ি চাষ দিলেই ঝুরঝুরা হয় এবং সমান করা হয়।
নালা তৈরি ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দেওয়ার পর জমি সমান করে বীজ বপনের জন্য জমির এক মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত নালা করতে হবে। প্রত্যেকটি নালা প্রায় ১০-১২ সেমি গভীর করতে হবে। একটি নালা থেকে আর একটি নালার দূরত্ব হবে ৬০ সেমি। অতঃপর নালার মধ্যে ১৫ সেমি দূরে দূরে বীজ বুনে দিতে হয়। আলুচাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
জমি প্রস্তুতির গুরুত্ব
ভূমি কর্ষণ জমি প্রস্তুতির প্রথম ধাপ। ভূমি কর্ষণের সংকীর্ণ অর্থ হলো ফসল ফলানোর উদ্দেশ্যে জমির মাটি যন্ত্রের সাহায্যে খুঁড়ে আলগা করা। কিন্তু ভূমি কর্ষণের সাথে নানা প্রযুক্তি জড়িত। যেমন, বীজকে অঙ্কুরোদগমের জন্য উপযুক্ত স্থানে ও সঠিক গভীরতায় স্থাপন করা, মাটিতে বায়ু চলাচলের সুবিধা সৃষ্টি করা, উপরের মাটি নিচে এবং নিচের মাটি উপরে নিয়ে আসা, মাটিতে অণুজীবের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি। এসব দিক বিবেচনা করে জমি প্রস্তুতির গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায়। আর এই গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য ভূমি কর্ষণকে সংজ্ঞায়িত করা যায় যে, “শস্যের বীজ মাটিতে সুষ্ঠুভাবে বপন ও পরবর্তী পর্যায়ে চারাগাছ বৃদ্ধির জন্য মাটিকে যে প্রক্রিয়ায় খুঁড়ে বা আঁচড়ে আগাছামুক্ত, নরম, আলগা ও ঝুরঝুরা করা হয়, তাকে ভূমি কর্ষণ বলে"। ভূমি কর্ষণ জমি প্রস্তুতির প্রাথমিক ধাপ। আদিকাল থেকেই মানুষ ভূমি কর্ষণ তথা জমি প্রস্তুতির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছেন। তাই তারা কাঠের বা পাথরের তৈরি সুচালো যন্ত্রের সাহায্যে মাটি আলগা ও নরম করে ফসলের বীজ বুনতে বা চারা রোপণ করতেন। ফসলভেদে ভূমি কর্ষণের তারতম্য হতে পারে কিন্তু এর গুরুত্ব কখনো খাটো করে দেখার বিষয় নয়।
জমি প্রস্তুতির ক্ষেত্রে খনার বচনে উল্লেখ আছে যে,
ষোল চাষে মুলা
তার অর্ধেকে তুলা
তার অর্ধেকে ধান
বিনা চাষে পান।
অর্থাৎ মুলা চাষের জন্য ষোলটি চাষ দিতে হবে যতক্ষণ না মাটি ঝুরঝুরা বা আলগা হয়। তুলা চাষের জন্য আট চাষ দিতে হবে আর ধানের জন্য চারটি চাষই যথেষ্ট। মজার ব্যাপার হলো পান উৎপাদনে কোনো চাষই লাগেনা। আর এই ধারণা থেকেই আজকাল বিভিন্ন ফসল উৎপাদনে 'বিনা চাষ' প্রথা প্রচলন করা হয়েছে। এখন অনেক কৃষকই বিনা চাষে ভুট্টা, ডাল ইত্যাদি ফসল উৎপাদন করেন।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

