• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • নবম-দশম শ্রেণি
  • কৃষি প্রযুক্তি
কৃষি প্রযুক্তি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

কৃষি প্রযুক্তি

ভূমিক্ষয়ের ক্ষতির বিভিন্ন দিক

ভূমিক্ষয়ের ক্ষতিকারক দিকগুলো নিম্নরূপ:

(১) ভূমিক্ষয়ের কারণে জমির পুষ্টিসমৃদ্ধ উপরের স্তরের মাটি অন্যত্র চলে যায়। ফলে মাটির উর্বরতার ব্যাপক অপচয় হয়।

(২) ভূমিক্ষয়ের ফলে মাটিতে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে ফসলের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে।

(৩) ক্রমাগত ভূমিক্ষয়ের কারণে নদী-নালা, হাওর-বিল ভরাট হয়ে যায়। ফলে দেশে প্রায়ই বন্যার প্রাদুর্ভাব ঘটে। এতে ফসল, পশুপাখি, বাড়িঘরের অনেক ক্ষতি হয়।

(৪) ভূমিক্ষয়ের বিরাট অংশ নদীতে জমা হয়। এতে নদীর গভীরতা কমে যায় এবং নৌ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।

(৫) প্রবাদ আছে যে উর্বর মাটির ক্ষয় মানে সভ্যতার ক্ষয়।

ভূমিক্ষয়ের কারণ

অনেক কারণেই ভূমিক্ষয় হয়। উপরের ভূমিক্ষয়ের প্রকার থেকেও অনুধাবন করা যায় ভূমিক্ষয়ের কারণ কী কী। নিচে ভূমিক্ষয়ের কারণগুলো উল্লেখ করা হলো।

(১) বৃষ্টিপাত

(২) ভূমি ঢাল

(৩) মাটির প্রকৃতি

(৪) শস্যের প্রকৃতি

(৫) জমি চাষের পদ্ধতি

(৬) নিবিড় চাষ

(৭) বায়ু

(৮) মানুষের কার্যাবলি।

বৃষ্টিপাত: বৃষ্টিপাত চাষাবাদের জন্য যেমন ভালো আবার ভূমিক্ষয়ের প্রধান কারণ। বৃষ্টিপাতের তীব্রতা, সংখ্যা ও পরিমাণ ভূমিক্ষয়কে প্রভাবিত করে। মুষলধারায় বৃষ্টি হলে বৃষ্টির ফোঁটা বড় হয় এবং মাটিতে সজোরে আঘাত করে আর এতে মাটির কণা আলগা হয়। মাটি যখন পানি শোষণক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, তখন অতিরিক্ত পানি একটি প্রবাহ সৃষ্টির মাধ্যমে উপর থেকে অপেক্ষাকৃত নিচের দিকে ধাবিত হয়। যাওয়ার পথে পানির সঙ্গে আলগা ও নরম মাটি স্থানান্তরিত হয়। পানির বেগ যত বেশি হবে মাটির ক্ষয়ও তত বেশি হবে।

ভূমির ঢাল: অধিক ঢালু মাটিতে অধিক বেগে পানি নিচের দিকে ধাবিত হয়। এজন্য পার্বত্য এলাকায় সমতল এলাকার চেয়ে ভূমিক্ষয়ের পরিমাণ বেশি। বাংলাদেশের বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি এলাকায় সাধারণত জুম চাষ করা হয়। ফলে জুম চাষে এলাকার মাটি আলগা হয় এবং বৃষ্টিপাতের ফলে এই মাটি বৃষ্টির পানির সাথে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে চলে যায়। কয়েক বছরের মধ্যে জুম চাষের স্থানটি অনুর্বর হয়ে পড়ে।

মাটির প্রকৃতি: ভূমিক্ষয় মাটির কাঠামো, বুনট ও জৈব পদার্থের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে। বেলে-দোআঁশ মাটি অধিক সচ্ছিদ্রতা বলে সম্পূর্ণ বৃষ্টির পানি সহজেই শুষে নিতে পারে। তাই এই মাটির ভূমিক্ষয় কম। কিন্তু কাদা ও ভারী মাটি সচ্ছিদ্রতা কম থাকায় এর শোষণক্ষমতাও কম। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেও মাটির উপরে পানি জমে যায় এবং ভূমির ক্ষয় করে মাটি নিচের দিকে ধাবিত হয়।

চাষ পদ্ধতি ও শস্যের প্রকৃতি: পাহাড়ি জমিতে ঢালের আড়াআড়ি চাষ না করে যদি ঢালের বরাবর চাষ করা হয়, তবে বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিক্ষয় হয়। খাড়া পাহাড়ের গায়ে ধাপ সৃষ্টি করে ফসলের চাষ করা হয়। কিন্তু যদি তা না করে সাধারণভাবে জমি চাষের চেষ্টা করা হয় তবে পাহাড়টি ভূমিধস বা ভূমিক্ষয়ের শিকার হয়। জমি ঘন ঘন চাষ করলেও ভূমিক্ষয় হয়।
যেসব ফসল মাটি ঢেকে রাখে, সেগুলো মাটিকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। যেমন চিনাবাদাম, মাসকলাই, খেসারি ইত্যাদি। কিন্তু আখ, ভুট্টা, ধান, গম ইত্যাদি প্রাথমিক পর্যায়ে মাটিকে ঢেকে রাখে না। ফলে ভূমিক্ষয় হয়।

বায়ুপ্রবাহ: যে অঞ্চলে গাছপালা কম সে অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ দ্বারা ভূমিক্ষয় হয়। বাংলাদেশের রাজশাহীও দিনাজপুর অঞ্চলে এরূপ ভূমিক্ষয় হয়।

মানুষের কার্যাবলি: ভূমিক্ষয়ের প্রকৃত কারণ মানুষ নিজে। ক্ষুধার অন্ন জোগাড় করতে মানুষ জঙ্গল পরিষ্কার করতে শুরু করে। তাতে মাটির উপরিভাগ উন্মুক্ত হয় এবং ভূমিক্ষয়েরও সূচনা হয়। তাছাড়া মানুষ ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি নির্মাণ করেও কৃষিজমি বিনষ্ট করছে এবং ভূমিক্ষয় করছে।

ভূমিক্ষয়রোধের কার্যকরী উপায়সমূহ

কৃষিকাজের অন্যতম একটি প্রযুক্তি হলো ভূমিক্ষয়রোধ করা। এই প্রযুক্তি ভূমিক্ষয়রোধের কতগুলো পদ্ধতির সমষ্টি। পদ্ধতিগুলো হচ্ছে-
পানিপ্রবাহ হ্রাসকরণ

১) ভূমিক্ষয় কমাতে পানি প্রবাহের বেগ কমানো জরুরি। বিভিন্নভাবে পানি প্রবাহের বেগ কমানো যায়। যথা, বাঁধ বা আইল দিলে পানির বেগ কমে আসে, মাটি পানি শোষণের সময় পায় ও ভূমিক্ষয়রোধ হয়।

২) রিল ভূমিক্ষয়ের ফলে যে ছোট ছোট নালার সৃষ্টি হয় তা ভরাট করে সমান করে দিলে পানির বেগ কমে যাবে এবং ভূমিক্ষয়ও রোধ হবে।

৩) বড় নালার মধ্যে আগাছা জন্মাতে দেওয়া এবং শেষ প্রান্তে খুঁটি পুতে তারের জাল বাঁধলে পানির বেগ কমে যাবে।

৪) উপরন্তু তারের জালের মূলে খড়কুটা ফেললে পানির বেগ একেবারেই মন্থর হবে এবং ভূমিক্ষয়রোধ হবে।

পানি নিষ্কাশনের সুবন্দোবস্তকরণ

জমিতে পানি জমা থাকলে এর সাথে বৃষ্টির পানি যোগ হলে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয় এবং জমির মাটি আলগা হয়ে সরে যায়। কাজেই কৃষিজমি কয়েক খণ্ডে ভাগ করে প্রতি খণ্ড হতে পানি সরালে ভূমির এরূপ ক্ষয়রোধ করা সম্ভব হবে।

জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধিকরণ

জমিতে জৈব পদার্থ অধিক মাত্রায় প্রয়োগ করলে মাটির দানাবন্ধন ভালো হয়। বৃষ্টির পানি মাটিকে ক্ষয় না করে সহজেই নিচের দিকে চলে যেতে পারে। যে জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কম সে জমির মাটি সহজেই ক্ষয় হয়।

পাহাড়ে ধাপে ধাপে ফসল চাষ করা

জুম চাষের ফলে পাহাড়ের মাটি সহজেই আলগা হয় ও ভূমিক্ষয় হয়। জুম চাষ না করে যদি পাহাড়ের গায়ে চতুর্দিক ঘিরে সমতল সিঁড়ি বা ধাপ করে চাষাবাদ করা হয় তা হলে বৃষ্টির পানি পাহাড়ের মাটির ক্ষয় করতে পারবে না।

কন্টোর পদ্ধতিতে চাষ করা

এই পদ্ধতিতে পাহাড়ের ঢালের আড়াআড়ি সমন্বিত লাইনে জমি চাষ করা হয়। ঢালের আড়াআড়ি জমি চাষ হয় বলে বৃষ্টির পানির গতি কম হয়। মাটি স্থানান্তরিত না হয়ে ফসলের গোড়ায় আটকে থাকে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ