- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
- কৃষি ও জলবায়ু
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
কৃষি ও জলবায়ু
খরা অবস্থায় ফসল উৎপাদন কৌশল
ফসল উৎপাদনে প্রাকৃতিক বিপত্তিসমূহের মধ্যে খরা অন্যতম। বাংলাদেশে প্রায় সব মৌসুমেই ফসল খরায় কবলিত হয়। খরা অবস্থা তখনই বিরাজ করে যখন কোনো নির্দিষ্ট মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হয় বা দীর্ঘদিন ধরে কোনো বৃষ্টিপাত হয় না। এতে করে মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য দেহে প্রয়োজনীয় পানির ঘাটতি অবস্থা বিরাজ করে। এ অবস্থাকে খরাকবলিত অবস্থা বলা হয়। খরার কারণে ফসলের ১৫-৯০ ভাগ ফলন হ্রাস পেতে পারে। খরা কবলিত অঞ্চলে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসল চাষ করলে লাভজনকভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়। ব্যবস্থাপনাগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
১. উপযুক্ত ফসল বা ফসলের জাত ব্যবহার খরা শুরু হওয়ার আগেই ফসল তোলা যাবে এমন স্বল্পায়ু জাতের অথবা খরা সহ্য করতে পারে এমন জাতের চাষ করতে হবে, যেমন- আমন মৌসুমে বিনা ধান ৭, ব্রি ধান ৩৩ এক মাস আগে পাকে। ফলে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের খরা থেকে ফসল রক্ষা করা যায়। আবার আমন মৌসুমের ব্রি ধান ৫৬, ব্রি ধান ৫৭ যেমন স্বল্পায়ু জাত তেমন ২১-৩০ দিন খরা সহ্য করতে পারে। বিজয়, প্রদীপ ও সুফী হলো গমের তিনটি খরা সহনশীল জাত। খরাপ্রবণ এলাকায় আগাম জাতের আমন চাষ করে ফসল কাটার পর জমিতে রস থাকতেই ছোলা, মসুর, খেসারি, সরিষা, তিল ইত্যাদি খরা সহনশীল ফসল চাষ করে একটি অতিরিক্ত ফসল তোলা যাবে। কুল গাছ খরা সহনশীল বলে এসব অঞ্চলে কুল বাগানও করা যেতে পারে।
২. মাটির ছিদ্র নষ্টকরণ: খরাপ্রবণ এলাকায় বৃষ্টির মৌসুম শেষ হওয়ার পর মাটিতে জো আসার সাথে সাথে অগভীর চাষ দিয়ে রাখতে হবে। এতে মাটির উপরিভাগের সূক্ষ্ম ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে সূর্যের তাপে মাটির রস শুকিয়ে যাবে না।
৩. অগভীর চাষ: জমি চাষের সময় মাটির আর্দ্রতা কম মনে হলে জমিকে হালকা চাষ দিতে হবে। প্রতি চাষের পর মই দিয়ে মাটিকে আঁটসাঁট অবস্থায় রাখতে হবে। এতে মাটিতে পানির সাশ্রয় হবে।
৪. জাবড়া প্রয়োগ মালচিং শুকনা খড়, লতাপাতা, কচুরিপানা দিয়ে বীজ বা চারা রোপণের পর মাটি ঢেকে দিলে রস সংরক্ষিত থাকে। কারণ সূর্যের তাপে পানি বাষ্পে পরিণত হতে পারে না। অনেক দেশে কালো পলিথিনও ব্যবহার করা হয়। এতে আগাছার উপদ্রবও কম হয়।
৫. পানি ধরা: যে অঞ্চলে বৃষ্টি খুব কম হয়, সে অঞ্চলে বৃষ্টির মৌসুমে জমির বিভিন্ন স্থানে ছোটো ছোটো নালা বা গর্ত তৈরি করে রাখা হয়। এর ফলে পানি গড়িয়ে জমির বাইরে চলে যায় না। পানি সংরক্ষণের এ পদ্ধতিকে পানি ধরা বলা হয়। বৃষ্টির মৌসুম শেষ হওয়ার সাথে সাথে জমি চাষ দিয়ে ফসল বুনে সংরক্ষিত এ পানি সফলভাবে ব্যবহার করা যায়।
৬. আঁচড়ানো মাটির রস দ্রুত শুকিয়ে যেতে থাকলে বীজ গজানোর পর পর উপরের মাটি হালকা করে আঁচড়ে দিলে মাটির ভিতরে রস সংরক্ষিত থাকে।
৭. সারির দিক পরিবর্তন খরাপ্রবণ এলাকায় সূর্যালোকের বিপরীত দিকে সারি করে ফসল লাগানো উচিত। এতে গাছ একটু বড়ো হলে ফসলের ছায়া দুই সারির মাঝে পড়ে। ফলে মাটিস্থ পানির বাষ্পীভবন কম হয়। পানির অপচয় কম হয়।
৮. জৈবসার ব্যবহার: জমিতে বেশি করে জৈবসার ব্যবহার করলে মাটির গঠন উন্নত হয়, মাটি ঝুরঝুরে হয়। ফলে মাটির পানিধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

