- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
- কৃষি ও জলবায়ু
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
কৃষি ও জলবায়ু
লবণাক্ত অঞ্চলে ফসল উৎপাদন কৌশল
আমরা প্রথম পাঠে জানতে পেরেছি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা একটি বড়ো সমস্যা। আমরা জানি সমুদ্রের পানি লবণাক্ত। এ অঞ্চলের জমি সমুদ্রের পানি দ্বারা প্লাবিত হয়। যার কারণে মাটিতে সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ক্লোরাইড ও সালফেট লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়। মাটিতে লবণের ঘনত্ব বেড়ে গেলে ফসলের মাটি থেকে পুষ্টি উপাদান ও পানি শোষণ বাধাগ্রস্ত হয়। ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানিতে লবণ ধুয়ে যায় বলে লবণাক্ততা একটু কম থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে লবণাক্ততা আরও বেড়ে যায়। কারণ শুষ্ক মৌসুমে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে পানির সাথে লবণ উপরে উঠে আসে।
অনেক এলাকায় মাটির উপরিভাগে লবণের আস্তর পড়ে যায়। নিচে লবণাক্ত মাটিতে ফসল উৎপাদন কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১. লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের চাষ লবণাক্ত অঞ্চলে চাষের জন্য আমাদের লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের জাত নির্বাচন করতে হবে। উত্তম লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলগুলো হলো- নারিকেল, সুপারি, সুগার বিট, তুলা, শালগম, ধৈঞ্চা, পালংশাক ইত্যাদি। মধ্যম লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলগুলো হলো- আমড়া, মিষ্টি আলু, মরিচ, বরবটি, মুগ, খেসারি, ভুট্টা, টমেটো, পেয়ারা ইত্যাদি। গম, কমলা, নাশপাতি কম লবণাক্ততা সহিষ্ণু। লবণাক্ত এলাকায় আমন মৌসুমে চাষের জন্য অনুমোদিত জাত হলো-বিআর ২২, বিআর ২৩, ব্রি ধান ৪০, ব্রি ধান ৪১, ব্রি ধান ৪৬, ব্রি ধান ৫৩, ব্রি ধান ৫৪ ইত্যাদি। স্থানীয় আমন জাতের মধ্যে রয়েছে রাজাশাইল, কাজলশাইল, বাজাইল ইত্যাদি। বোরো মৌসুমে চাষের জন্য অনুমোদিত জাত ব্রি ধান ৪৭, ব্রি ধান ৫৫।
২. সেচ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা: জমির চারপাশে আইল দিয়ে ভারী সেচ দিলে মাটির দ্রবণীয় লবণ চুঁইয়ে ফসলের মূলাঞ্চলের নিচে চলে যায়। আবার মূলাঞ্চলের নিচ বরাবর গভীরতায় যদি নিষ্কাশন নালা তৈরি করে জমির পানি বের করে দেওয়া যায় তাহলে মূলাঞ্চলের নিচের লবণও ধুয়ে জমির বাইরে চলে যায়। এ অবস্থার মাটিতে জো আসার সাথে সাথে জমি চাষ দিয়ে ফসল বুনতে হবে। হালকা বুনটের মাটিতে এ পদ্ধতি বেশি কার্যকর।
৩. পানির বাষ্পীভবন হ্রাসকরণ লবণাক্ত জমির মাটিতে লবণ ফসলের মূলাঞ্চলের নিচে রাখতে পারলে ফসল ভালোভাবে চাষ করা যায়। সূর্যালোকের কারণে ভেজা অবস্থায় মাটির উপরিভাগের ছিদ্রের মাধ্যমে পানির বাষ্পীভবন হয়। ফলে বাষ্পীভবনের সাথে লবণ মাটির উপরের দিকে চলে আসে। তাই লবণাক্ত মাটির উপরের স্তরের ছিদ্র বন্ধ করে দিতে হয়। মাটির উপরিভাগে কোদাল, নিড়ানির সাহায্যে মাটি আলগা করে দিলে ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায় এবং লবণ মাটির নিচের স্তরেই থেকে যায়। লবণাক্ত এলাকায় মাঠের আমন ধান কেটে নেওয়ার পর জমি ভেজা থাকতেই চাষ দিয়ে রবি ফসল আবাদ করা যায়। তবে বীজ গজানোর বা চারা রোপণের পর ঘন ঘন নিড়ানি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। লবণাক্ত জমিতে প্রতি সেচ বা বৃষ্টিপাতের পর পরই নিড়ানি দেওয়া প্রয়োজন। তাহলে উপরের স্তরে লবণ জমতে পারে না।
৪. সঠিকভাবে জমি তৈরি আমন ধান কাটার পর যদি রবি ফসল চাষ করতে দেরি হয় তবে সে সময়ে লবণ মাটির উপর উঠে আসে। তাই তাড়াতাড়ি জমি চাষ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশি লাঙলের চেয়ে পাওয়ার টিলার ব্যবহার করা উত্তম। শেষ চাষের সময় জমি ভালোভাবে সমান করতে হবে। সমান জমিতে বীজ ভালো গজায়। জমি উঁচু নিচু থাকলে নিচু স্থানে লবণ জমতে পারে।
৫. বপন পদ্ধতির পরিবর্তন: লবণাক্ত জমিতে বীজ ছিটিয়ে বুনলে লবণ তাড়াতাড়ি উপরে আসে এবং বীজ কম গজায়। তাই গর্ত তৈরি করে বীজ মাটির একটু গভীরে বপন করা উচিত। অথবা জমিতে এক মিটার পর পর অগভীর নালা তৈরি করে কয়েক দিন সেচ দিতে হবে। ফলে আইলের মাটির লবণ ধুয়ে নালায় চলে আসবে। এবার আইলের মাটি কোদাল দিয়ে হালকা চাষ দিয়ে বীজ বুনলে ভালো গজাবে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

