• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি
  • কৃষি ও জলবায়ু
কৃষি ও জলবায়ু

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

কৃষি ও জলবায়ু

বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে ফসল উৎপাদন কৌশল

বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছর বন্যা হয়ে থাকে। তবে কোনো কোনো বছর ভয়াবহ বন্যার কারণে ব্যাপক ফসলহানি হয়ে থাকে। ১৯৯৮ সালে এদেশে দীর্ঘস্থায়ী ও ভয়াবহ বন্যায় তিন লক্ষ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হ্রাস পায়। এছাড়াও ২০০৪ সালে বন্যায় ১.৩ মিলিয়ন হেক্টর, ২০০৭ সালে বন্যায় ৮.৯ মিলিয়ন হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয় এবং সর্বশেষ ২০২০ সালে দ্বিতীয় দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়। বন্যার সময় পানির উচ্চতার উপর ভিত্তি করে বন্যাপ্রবণ জমিকে চার ভাগে ভাগ করা হয়, যেমন-

১. মধ্যম উঁচু জমি: বন্যার সময় পানির উচ্চতা সর্বোচ্চ ০.৯০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

২. মধ্যম নিচু জমি: বন্যার সময় পানির উচ্চতা সর্বোচ্চ ১.৮০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

৩. নিচু জমি: বন্যার সময় পানির উচ্চতা সর্বোচ্চ ৩.০০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

৪. অতি নিচু জমি বন্যার সময় পানির উচ্চতা ৩.০০ মিটারের বেশি হয়ে থাকে।

এসব বন্যাপ্রবণ জমিতে মৌসুম ও এলাকাভেদে বোনা আমন, গভীর পানির আমন, রোপা আমন, বোনা আউশ, রোপা আউশ, বোরো ধান চাষ করা হয়ে থাকে।
বন্যাপ্রবণ এলাকায় ফসল উৎপাদনের জন্য প্রধানত দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে, যেমন-

১. বন্যা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা: বন্যাপ্রবণ এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রণের জন্য নদী বা খালের দুই তীর দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়। নদী বা খালে সুইস গেট নির্মাণ করে পানিনিয়ন্ত্রণ করা হয় যাতে পানি ফসলের ক্ষেতে প্রবেশ করতে না পারে। তবে এ সব নির্মাণের আগে পরিবেশগত দিক ভালোভাবে বিবেচনা করতে হয়।

২. কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থা: দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যাপ্রবণ এলাকায় বোরো ধান উঠার সময় হঠাৎ করে বন্যা দেখা দেয়। এসব অঞ্চলে আগাম জাতের বোরো ধান চাষ করে ফসল রক্ষা করা যায়। ব্রি ধান ২৮, ব্রি ধান ৩৬ আগে পাকে বলে এ অঞ্চলে চাষ করা উচিত। জানুয়ারি মাসে জমি থেকে পানি বের করে দিয়ে ৬০ দিন বয়সের চারা রোপণ করে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এসব জাতের ধান ১৪০-১৫০ দিনের মধ্যে পাকে। ফলে এপ্রিলের শেষে সংগ্রহ করে বন্যা এড়ানো যায়। এ অঞ্চলে রোপা আমন হিসাবে ব্রি ধান ৫১ ও ব্রি ধান ৫২ দুটি অনুমোদিত বন্যা সহনশীল জাত। এ জাত দুটির ১০-১৫ দিন পানির নিচে ডুবে থাকার ক্ষমতা আছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওড় এলাকায় চাষিরা স্থানীয় জাতের গভীর পানির আমন ধানও চাষ করে থাকে।

দেশের মধ্যাঞ্চলে আমন ধান রোপণের আগে বা পরে বন্যা দেখা যায়। অনেক সময় আগাম বন্যার কারণে কৃষকেরা ধানের বীজতলা তৈরি করার জমি পায় না। সে ক্ষেত্রে বাড়ির উঠানে, কোনো উঁচু স্থানে বা ভাসমান বীজতলা তৈরি করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বীজতলার উপর কলাপাতা বা পলিথিন শিট বিছিয়ে দিয়ে হালকা কাদার প্রলেপ দিয়ে ৫-৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা বীজ ঘন করে বুনে দিতে হয়। এ পদ্ধতিতে এক বর্গমিটার বীজতলায় ২.৫-৩.০ কেজি বীজ বপন করা হয়। একে দাপোগ বীজতলা বলে। দুই সপ্তাহের মধ্যে মূল জমিতে বন্যার পানি নেমে গেলে চারা রোপণ করতে হয়। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে নাবি জাতের আমন ধান, যেমন- নাইজারশাইল, বিআর ২২, বিআর ২৩ চাষ করা উচিত। দাপোগ পদ্ধতিতে দ্রুত চারা উৎপাদনের আরও একটি উপায় আছে। বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভেজানোর পর একটু ফাটলে বস্তা বা মাটির কলসে ২৪-৭২ ঘণ্টা রেখে দিলে চারা গজিয়ে যায়। এভাবে উৎপাদিত চারা বন্যার পানি নামার সাথে সাথে ছিটিয়ে বপন করা হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ