• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি
  • কৃষি ও জলবায়ু
কৃষি ও জলবায়ু

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

কৃষি ও জলবায়ু

প্রতিকূল পরিবেশে মৎস্য উৎপাদন ও বিরূপ আবহাওয়ায় মৎস্য রক্ষার কৌশল

যেসব অঞ্চলে সারা বছরই পুকুরে কিছু না কিছু পানি থাকে, বন্যার প্রবণতা কম বা একেবারে নেই; সেই সব এলাকা মাছ চাষের জন্য অধিক উপযোগী। কিন্তু অনেক অঞ্চল রয়েছে সেখানকার পরিবেশ মাছ চাষের জন্য খুব অনুকুল নয়, যেমন- বন্যাপ্রবণ এলাকায় মাছ চাষ করলে বন্যার সময় চাষের পুকুর ডুবে গিয়ে মাছ ভেসে যাওয়ার ভয় থাকে। এতে চাষি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে যেসব এলাকায় খরা বেশি সেখানে খরার সময়ে পুকুরের পানি শুকিয়ে যায় ও মাটির নিচের পানির স্তর অনেক নেমে যায় বলে মাছ চাষ দূরূহ হয়ে পড়ে। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় উপকূলবর্তী অঞ্চলে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে নদীগুলোর উজানে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় সাগর স্ফীতির জন্য লোনা পানি নদীর অনেক ভেতর পর্যন্ত ঢুকে পড়ছে। ফলে এ সমস্ত এলাকার পুকুরের পানিরও লবণাক্ততা বেড়ে যাচ্ছে। এতে এসব এলাকায় স্বাদুপানির মাছ আর আগের মতো ফলন দিচ্ছে না। মৃগেল মাছ লোনাপানি সহ্য করতে পারে না। রুই, কাতলাও আশানুরূপ আকারের হচ্ছে না। প্রতিকূল পরিবেশই শুধু নয় বিরূপ আবহাওয়া যেমন-অতিবৃষ্টি, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাসও মাছ উৎপাদন ব্যাহত করছে। যেমন- ২০০৭ সালের সিডরে এক লাখ ৩৯ হাজার ৪৭৮টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, চাষি হারিয়েছে ছয় হাজার ৫১১ মেট্রিক টন মাছ যার বাজার মূল্য ছিল ৪৭৮ মিলিয়ন টাকা। জাল ও নৌকা হারিয়েছে ৭২১ মিলিয়ন টাকা মূল্যের। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের 'নার্গিস', ২০০৯ সালের 'আইলা', ২০১৩ সালের মহাসেন, ২০১৫ সালের 'বোমেন', ২০১৬ সালের 'রোয়ানু', ২০১৭ সালের 'মেরো' এবং ২০১৯ সালের ফনি বুলবুল-এ ফসল, মৎস্য ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়। প্রতিকূল পরিবেশ ও বিরূপ আবহাওয়ায় মাছ উৎপাদন ও রক্ষার জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থা অবলম্বন করা যেতে পারে-

১. খরাপ্রবণ এলাকায় বড়ো পোনা ছাড়া যেতে পারে যেন অল্প সময়ে ফলন পাওয়া যায়। আবার যেসব মাছ স্বল্প সময়ে ফলন দেয় যেমন- তেলাপিয়া, খরাপ্রবণ এলাকায় চাষ করা যেতে পারে। চার-পাঁচ মাসেই এর ফলন পাওয়া যায়। এসব অঞ্চলে দেশি মাগুরেরও চাষ করা যেতে পারে।

২. বন্যাপ্রবণ এলাকায় একই পুকুরে একটি দীর্ঘ ও একটি স্বল্পমেয়াদি মাছ চাষ পদ্ধতি নেওয়া যায়। এ সমস্ত এলাকার পুকুরের পাড় উঁচু করে বাঁধতে হবে এবং যে সময় বন্যা থাকে না ঐ সময়ে পোনা মজুদ করা যায়।

৩. উপকূলবর্তী অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় লবণাক্ততা সহনশীল চাষযোগ্য মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষের ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন- ভেটকি, বাটা, পারশে। এসব জলাশয়ে চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষের উদ্যোগ নেওয়া যায়। তেলাপিয়াও এক্ষেত্রে ভালো ফলন দেবে।

৪. প্রতিকূল পরিবেশ ও বিরূপ আবহাওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে বাঁধ ভেঙে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকায় পরিকল্পিত মাছ চাষ, খাঁচায় মাছ চাষ ও কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে ওই পানিকে কাজে লাগানো যায়।

৫. অতিবৃষ্টির কারণে পুকুর ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে পুকুরের পাড় বরাবর চারপাশে বাঁশের খুঁটির সাহায্যে জাল দিয়ে আটকে দেওয়া যায়। এতে মাছ বাইরে বের হয়ে যেতে পারে না।

৬. গ্রীষ্মের সময় পুকুরের পানির উচ্চতা কমে গেলে ও পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সেচ বা পাম্পের মাধ্যমে পুকুরে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে মাছ পর্যাপ্ত পানি পাবে ও পরিবেশও ঠান্ডা থাকবে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ