- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
- কৃষি ও জলবায়ু
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
কৃষি ও জলবায়ু
বিরূপ আবহাওয়ায় ফসল রক্ষার কৌশল
এ অধ্যায়ের প্রথম পাঠে আমরা প্রতিকূল পরিবেশ সম্পর্কে জেনেছি। প্রতিকূল পরিবেশে জলবায়ু ও পরিবেশগত অন্যান্য উপাদান ফসলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশের অনুকূলে থাকে না। এ অবস্থা সম্পর্কে মানুষের আগাম ধারণা থাকে। ফলে মানুষ ফসল নির্বাচন থেকে শুরু করে ফসলের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আগে থেকেই সজাগ থাকে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু ফসল উৎপাদন কালে যদি আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণের কারণে ফসলের ক্ষতি হয় তখন তাকে আমরা বিরূপ আবহাওয়া বলি।
বিরূপ আবহাওয়া একটি স্বল্পস্থায়ী অবস্থা। কিন্তু এ স্বল্পস্থায়ী অবস্থায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। এমনকি ফসল পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অকাল জলাবদ্ধতা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, উচ্চ তাপমাত্রা, নিম্ন তাপমাত্রা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, তুষারপাত ইত্যাদি বিরূপ আবহাওয়ার উদাহরণ। এখন আমাদের দেশের কিছু বিরূপ আবহাওয়া এবং সে আবহাওয়ায় ফসল রক্ষার কৌশল নিচে আলোচনা করা হলো-
১. জলাবদ্ধতা: অতিবৃষ্টি বা বন্যার কারণে কোনো স্থান জলাবদ্ধ হয়ে পড়াকে জলাবদ্ধতা বলে। পাহাড়ি ঢলের কারণে জলাবদ্ধতায় হাওড় অঞ্চলে বোরো ধান পাকার সময় তলিয়ে যেতে পারে। বাঁধ ভেঙে জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে বাঁধ মেরামতের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সুযোগ থাকলে নিষ্কাশন নালা কেটে জলাবদ্ধ জমি থেকে পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আগাম বন্যায় কোনো এলাকার আমন রোপণ ব্যাহত হলে বন্যামুক্ত এলাকায় চারা উৎপাদন করে ঐ এলাকার পানি নেমে গেলে রোপণের ব্যবস্থা করতে হবে। বন্যা পরবর্তী কৃষকরা যাতে দ্রুত অন্য ফসল চাষাবাদে যেতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় বীজ, চারা ও সার সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. অতিবৃষ্টি: বাংলাদেশে জুন থেকে অক্টোবর মাসে বেশি বৃষ্টি হয়ে থাকে। এ সময়ে কখনো কখনো একটানা কয়েকদিন অতি বৃষ্টি হয়ে থাকে। এর ফলে মাঠঘাট, ফসলের জমিতে পানি জমে যায়। অনেক ফসলের গাছ গোড়া নড়ে নেতিয়ে বা হেলে পড়ে। এ ধরনের আবহাওয়ায় ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারার গোড়ায় মাটি দিয়ে সোজা করে বাঁশের খুটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। এ সময় শাকসবজির মাঠ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শাকসবজির মাঠ থেকে দ্রুত পানি বের করে দিতে হবে। এ জন্য নিষ্কাশন নালা কোদাল দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। এ মৌসুমে শাকসবজি চাষ করলে সাধারণত উঁচু বেড করে চাষ করা হয়। দুটি বেডের মাঝে ৩০ সে.মি. নালা রাখা হয়।
৩. অনাবৃষ্টি: যদি শুষ্ক মৌসুমে একটানা ১৫ দিন বা এর বেশি বৃষ্টি না হয় তখন আমরা তাকে অনাবৃষ্টি বলি। অনাবৃষ্টির হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য আমরা সেচ দিয়ে থাকি। বৃষ্টিনির্ভর আমন ধান চাষের ক্ষেত্রে যদি অনাবৃষ্টি দেখা দেয় তবে জমিতে সম্পূরক সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। জমিতে নিড়ানি দিয়ে মাটির ফাটল বন্ধ করে রাখতে হবে। তাহলে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে পানি কম বের হবে। রবি মৌসুমে সবজি ক্ষেতে জাবড়া প্রয়োগ করে পানি সংরক্ষণ করতে হবে। অনাবৃষ্টির কারণে মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে পাট, ধান ও শাকসবজির জমিতে বীজ বপনের জো পাওয়া না গেলে বীজ বুনে সেচ দিতে হবে অথবা সেচ দিয়ে জো এলে বীজ বুনতে হবে।
৪. শিলাবৃষ্টি: বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে শিলাবৃষ্টি হয়। অনেক সময় আগাম শিলাবৃষ্টির কারণে বিশেষ করে রবি ফসল, যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, গম, আলু ইত্যাদি নষ্ট হয়। শিলার আকার ও পরিমাণের উপর ক্ষতি নির্ভর করে। ক্ষতি বেশি হলে এসব ফসল ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে ফেলতে হবে। আর যদি ক্ষতির পরিমাণ কম হয় এবং ফসল পরিপক্ক হতে বিলম্ব থাকে সেক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত শাখা-প্রশাখা ছাঁটাই করে অবশিষ্ট ফসলের যত্ন নিতে হবে। অনেক সময় এপ্রিল-মে মাসে শিলাবৃষ্টির কারণে বোরো ধান, আম, ঢেড়শ, বেগুন, মরিচ ইত্যাদি ফসল ক্ষতির শিকার হয়। বেগুন, মরিচ, ঢেঁড়শ ইত্যাদি ফসল বাড়ন্ত অবস্থায় শিলার আঘাতে ডালপালা ভেঙে নষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে ভাঙা ডালপালা ছাঁটাই করে সার ও সেচ দিয়ে যত্ন নিলে ফসলকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

