- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
দেশপ্রেম ও জাতীয়তা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
দেশপ্রেম ও জাতীয়তা
জাতীয়তাবাদ কি সভ্যতার পথে একটি হুমকি Is Nationalism a Menace to Civilisation
পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র জাতীয়তাবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পরাধীনতা আর শোষণের শৃঙ্খল ভেদ করে স্বাধীন হয়েছে: বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলোর পতনে এর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে আলোচিত জাতীয়তাবাদে আমরা দুটি রূপ দেখতে পাই। একটি হলো জাতীয়তাবাদের প্রকৃত রূপ যার সংস্পর্শে একটি জাতি মুক্তিসংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে স্বাধীন সত্তাকে উপভোগ করার সুযোগ পায়; আরেকটি হলো বিকৃত রূপ যার দংশনে একটি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল বরণ করতে হয়। আর তখনই জাতীয়তাবাদ সভ্যতাকে ভূলুণ্ঠিত করে।
জাতীয়তাবাদের স্বাভাবিক রূপ জাতীয়তাবাদের প্রকৃত রূপ মানুষের সুসভ্য জীবন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। নিচে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:
১. গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা: গণতন্ত্র এমন এক শাসন পদ্ধতি যেখানে সকল জনগণের সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে। তাই জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে জনগণ সমঅংশীদারিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সুযোগ পায়।
২. ঐক্যবন্ধন: জাতীয়তার চেতনা জাতির মধ্যে ঐক্যের বন্ধন সুদৃঢ় করে। জাতীয়তাবাদের আদর্শ একটি জনসমাজকে সকল সংকীর্ণতা ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে প্রেরণা যোগায়।
৩. বিশ্বসভ্যতার সমৃদ্ধি সাধন: প্রকৃত জাতীয়তাবাদী চেতনা বিশ্ব মানবের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। একটি জাতি জাতীয়তার আদর্শে দীক্ষিত হয়ে সমৃদ্ধ জাতিতে পরিণত হলে তা বিশ্বমানবের জন্যও সমৃদ্ধি বয়ে আনতে পারে। সর্বাগ্রে প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ সমৃদ্ধি এবং পরে বিশ্বশান্তি ও সমৃদ্ধি।
৪. দেশপ্রেম জাগ্রত করে জাতীয়তাবাদের আদর্শ একটি জাতির মননে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করে। তাই প্রকৃত জাতীয়তাবাদ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে জনগণের মধ্যে দেশমাতৃকার বহ্নি ছড়িয়ে দেয়।
৫. বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত জাতীয়তাবোধের আরেক ভালো দিক হলো অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বিধানের সাথে সাথে তা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়ও জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে শান্তিময় বিশ্ব প্রতিষ্ঠায় জাতীয়তাবাদী আদর্শের গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়।
জাতীয়তাবাদের বিকৃত রূপ:
১. সাম্রাজ্যবাদের অগ্রদূত বিকৃত জাতীয়তাবাদ স্বার্থবাদীদের স্বার্থ চরিতার্থের হাতিয়ারে পরিণত হয় এবং সাম্রাজ্য বিস্তারের অগ্রদূত হিসেবে কাজ করে। আর নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে গণ্য করে অপরাপর জাতির ওপর বিভিন্ন কৌশলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে জাতীয় রাষ্ট্রগুলো বিদেশে বাজারের সম্প্রসারণ, কাঁচামাল সংগ্রহ এবং বিদেশে বিনিয়োগের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। বাণিজ্যের প্রয়োজনে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে। যেমন- ইউরোপীয় বণিকেরা এশিয়া মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণের ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।
২. সাংস্কৃতিক আগ্রাসন: জাতীয়তাবাদ ভৌগোলিক সীমারেখাকে সীমিত করে জাতিতে জাতিতে সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণের পথ রুদ্ধ করে দেয়। ফলে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক প্রবাহে দেশীয় সংস্কৃতি ধ্বংসের মুখে পতিত হয়।
৩. যুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনা যুদ্ধকে অনিবার্য করে তোলে। যেমন- জার্মানে উগ্র জাতীয়তাবাদের কারণে বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। তাই জাতীয়তার বিকৃত রূপ কোনো অর্থেই জাতির জন্য কল্যাণকর নয়।
৪. ব্যক্তিস্বাধীনতা বিনষ্ট হয় জনগণের ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা সবকিছুই জাতীয়তাবাদের কষাঘাতে পদদলিত হয়। ফলে ব্যক্তিত্বের বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং সকল উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথ বন্ধ হয়ে যায়।
৫. বিশ্বশান্তির পরিপন্থি জাতীয়তাবাদ বর্তমানে জাতীয় রাষ্ট্রগুলোকে সন্দেহ ও দ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে যা শান্তিময় পরিবেশ ও উন্নতির পরিপন্থি। এরূপ অবস্থার হাত থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্য জাতীয় রাষ্ট্রগুলো পরস্পরের মোকাবিলায় সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে। সেইসাথে অস্ত্র তৈরিতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উগ্র জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদের জন্ম দেয় এবং অনুন্নত জাতিসমূহের ওপর শোষণের স্টীমরোলার চালায়। বিশ্বের বিলুপ্ত হওয়া ঔপনিবেশিক শোষণের দিকে দৃষ্টি দিলে তা মূর্ত হয়ে ওঠে। সুতরাং জাতীয়তাবাদ যখন বিকৃত রূপ ধারণ করে তখনই তা সভ্যতার পথে হুমকি হয়ে দেখা দেয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ