• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

দেশপ্রেম ও জাতীয়তা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

দেশপ্রেম ও জাতীয়তা

জাতীয়তা নির্ধারণ নীতি: সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক Determinant Principles of Nationality: Cultural & Geographical

অধ্যাপক লাস্কির মতে, "জাতীয়তা সাধারণভাবে এক ধরনের মানসিকতা।" এটা দুই ধারায় পরিদৃষ্ট- একটা হলো মানব সমাজের প্রাচীন স্মৃতিসম্পদ এবং অন্যটি পরস্পরের একত্রে বসবাস করার সম্মতি। এটি একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনগণের মানসিকতা, অনুভূতি ও চিন্তা-চেতনার ফল। জাতীয়তাবাদের এ ধারণা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জাতীয়তা নির্ধারণে দুটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হলো: (১) সাংস্কৃতিক ও (২) ভৌগোলিক। নিম্নে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হলো:

সাংস্কৃতিক (Cultural): যখন কোনো জনসমাজ ঐতিহাসিক দিক দিয়ে একই ধরনের আচার-আচরণ, ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ধর্মবিশ্বাস, সংস্কার-জীবনযাত্রা প্রণালি প্রভৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নিজেদেরকে এক করে ভাবে এবং পৃথিবীর অন্য জনসমাজ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক বলে নিজেদের মনে করে তখন উক্ত জনসমাজের মধ্যে সামাজিক বা নৃতাত্ত্বিক বা সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবোধের জন্ম হয়। যেমন- বাঙালি, আরবীয়, ইংরেজ, রুশ জনসমাজ সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ।

জনগোষ্ঠী যখন সুখ-দুঃখ, জয়-পরাজয়, লাভ-লোকসান, আনন্দ-বেদনায় নিজেদের সম-অংশীদার মনে করে, তাদের মধ্যে একই ধরনের রীতিনীতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, চালচলন লক্ষ করা যায়। তখন তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন সুদৃঢ় হয়। তাই যুগ যুগ ধরে বাংলা ভাষা ও বাঙালি কৃষ্টি-কালচারের সাথে এদেশের মানুষের পবিত্র ধর্মীয় অনুভূতি, লোকাচার, জীবন যাপনের ধরন, আবহাওয়া ইত্যাদির সংমিশ্রণে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি গড়ে ওঠেছে। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি। স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গ করেছি ত্রিশ লাখ মানুষের প্রাণ। এরই প্রতিফলন ঘটেছে ১৯৭২ সালের সংবিধানের নবম অনুচ্ছেদে। এতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, "ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জনগোষ্ঠী ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করেছে সেই জনগোষ্ঠীর ঐক্য বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।" তাই সংস্কৃতি জাতীয়তা নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।

ভৌগোলিক (Geographical): সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ কোনো জনগোষ্ঠী যখন রাজনৈতিক সচেতনতা প্রাপ্ত হয়ে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং নিজেদেরকে একই জাতিসত্তায় একীভূত করে, তখন উক্ত জনগোষ্ঠীর জাতীয়তা হয়ে ওঠে ভৌগোলিক। এ সম্পর্কে Ramsay Muir বলেন, একটি স্বতন্ত্র জাতি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বাস করে। কেননা, একই সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করার ফলে একটি জনসমাজ তার নিজস্ব অভ্যাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে- যা তাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও প্রতিষ্ঠানের ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। জাতীয় রাষ্ট্র গঠনই এ ধরনের জাতীয়তাবোধের চরম সার্থকতা। জাতীয় স্বার্থেই রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় এবং ভৌগোলিক জাতীয়তাবোধ বিকশিত হয়। যেমন- ভারতীয়, ইরাকি, পাকিস্তানি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ