• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • পরিসংখ্যান, চলক ও প্রতীক
পরিসংখ্যান, চলক ও প্রতীক

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পরিসংখ্যান, চলক ও প্রতীক

পরিসংখ্যানের উৎপত্তি (Origin of Statistics)

পরিসংখ্যানের উৎপত্তি সম্পর্কে পরিসংখ্যানবিদগণের মধ্যেই মতের ভিন্নতা রয়েছে। প্রাচীনকালে যাযাবর জীবন ছেড়ে মানুষ যখন স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে তখন থেকেই একে অন্যের শক্তি, সম্পদ ইত্যাদি সম্পর্কে হিসাব রাখত। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে যখন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয় তখন রাষ্ট্রীয় প্রশাসন বিভিন্ন ধরনের পরিসংখ্যান ব্যবহার করত।
প্রাচীন যুগে খৃস্টপূর্ব 3050 অব্দে মিশরের ফারাওরা তাদের পিরামিড তৈরির প্রয়োজনে যে লোক গণনা করেছিল ইতিহাসে সম্ভবত তা হলো প্রথম সংগঠিতভাবে তথ্য (Data) সংগ্রহের উদাহরণ। মিশরের রাজা দ্বিতীয় রামেসিস খৃস্টপূর্ব 1400 অব্দে ভূমি জরিপ করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন ব্যাবিলীয়ন ও চীনে খৃস্টপূর্ব 3000 সালে রাজস্ব আদায়ের জন্য আদমশুমারি করা হয়েছিল।

মধ্যযুগে মূলত সরকারি কাজে পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হতো। বাগদাদের মহামতি খলিফা আল-মামুন, জার্মান সম্রাট ফ্রেডারিক, ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় এডওয়ার্ড তাদের শাসনকার্য পরিচালনায় পরিসংখ্যান ব্যবহার করতেন। হজরত মুসা (আঃ) ও হজরত দাউদ (আঃ) এর সময় আদমশুমারি করা হয় বলে জানা যায়।

আধুনিক পরিসংখ্যান শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দী হতে। এ সময়ে পরিসংখ্যান একটি পূর্ণাঙ্গ শাস্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরিসংখ্যানের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানকারীদের মধ্যে হচ্ছেন Captain John Graunt, Sir William Petty, Francis Galton, S. Jerons, Sir Ronald A. Fisher, James Bernoulli, Karl Pearson প্রমূখ।
নিম্নে কিছু পরিসংখ্যানবিদের অবদান দেখানো হলো-

নাম
অবদান
Captain John Graunt (1620-1674)
মানুষের জন্ম এবং মৃত্যুর ওপর নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা করেন। তাঁকে জীব পরিসংখ্যানের জনক বলা হয়।
Sir William Petty (1623-1687)
প্রথম জীবন সারণি তৈরি করেন। তিনিই প্রথম জীবন বীমার ধারণা দেন।
Karl Pearson (1857-1936)
সহসম্বন্দ্ব বিশ্লেষণ তত্ত্বের প্রবর্তন করেন। তার Chi-Square test পরিসংখ্যানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
S. Jerons (1835-1882)
কালীন সারি বিশ্লেষণের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তাকে সূচক সংখ্যার জনক বলা হয়।
Francis Galton (1822-1921)
নির্ভরণ বিশ্লেষণ তত্ত্বের প্রবর্তন করেন।
Sir Ronald A. Fisher (1890-1962)
পরিসংখ্যানের বিভিন্ন তত্ত্বের প্রবর্তন করেন। অনেক ধারণা ও পরীক্ষার উদ্ভাবন করেন। তাকে পরিসংখ্যানের জনক বলা হয়।

সত্যিকার অর্থে সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে পরিসংখ্যানের তত্ত্ব, দৈবচয়ন, গেম থিউরি উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে পরিসংখ্যানের নতুন যুগের সূত্রপাত হয়।

অতি প্রাচীনকাল হতে ভারত উপমহাদেশেও যে পরিসংখ্যানের ব্যবহার ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় গুপ্ত যুগে সম্রাট অশোকের রাজত্বকালের বিভিন্ন বিবরণ থেকে। মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে রাজস্ব আদায়ের জন্য ভূমি জরিপ ও আদমশুমারী পরিচালনা করা হয়েছিল তার বিবরণ বিখ্যাত গ্রন্থ আইন-ই-আকবরীতে লিপিবদ্ধ আছে।

ভারতের বিখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ পি.সি. মহলানবিশ ইংরেজি শব্দ 'Statistics' এর বাংলা পরিভাষা 'পরিসংখ্যান' করেছেন। বাংলাদেশে পরিসংখ্যান শিক্ষার প্রতিষ্ঠাতা হলেন ড. কাজী মোতাহার হোসেন। তিনি 'Indian Statistical Institute (ISI) এর প্রখ্যাত পরিসংখ্যানবিদ পি.সি. মহলানবিশের অধীনে পরিসংখ্যান অধ্যয়ন করেন। তার একক প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 1948 সালে গণিতের সাথে এবং 1950 সালে আলাদাভাবে পরিসংখ্যান বিভাগ খোলা হয়। Design of Experiment বিষয়ে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে। পরিসংখ্যান বিষয়ে গবেষণা ও জাতীয় পর্যায়ে এর উৎকর্ষতার জন্য তার উৎসাহ ও প্রচেষ্টায় 1964 সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে Institute of Statistical Research and Training (ISRT) প্রতিষ্ঠিত হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ