• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • পরিসংখ্যান, চলক ও প্রতীক
পরিসংখ্যান, চলক ও প্রতীক

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পরিসংখ্যান, চলক ও প্রতীক

পরিসংখ্যানের গুরুত্ব ও ব্যবহার (Importance and Uses of Statistics)

প্রাচীনকালে পরিসংখ্যান বিষয়টি রাজকার্য পরিচালনায় ব্যবহৃত হতো। রাষ্ট্রীয় তথ্যমালা যেমন: রাজস্বের পরিমাণ, সৈন্য সংখ্যা, প্রজা সংখ্যা, জন্ম-মৃত্যুর সংখ্যা ইত্যাদির হিসাব বুঝানোর জন্য পরিসংখ্যান ব্যবহার করা হতো। যুগে যুগে বহু মনীষীর অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার ফলে পরিসংখ্যানের উৎকর্ষ সাধন ও প্রসার ঘটে। বিভিন্ন ঘটনা বা বিষয়ের ওপর সংখ্যাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণই পরিসংখ্যানের কাজ। বর্তমানে পরিসংখ্যানকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিজ্ঞান বলে অভিহিত করা হয়। মানব সভ্যতার উন্নতি এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে সমাজ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে সমস্ত ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ করা যায় তা নিচে উল্লেখ করা হলো।

  • ব্যবসা-বাণিজ্যে
  • শিল্প কারখানায়
  • বৈজ্ঞানিক গবেষণায়
  • সামাজিক গবেষণায়
  • হিসাবরক্ষণে
  • অর্থনীতিতে
  • চিকিৎসাক্ষেত্রে
  • ব্যবস্থাপনায়
  • ভবিষ্যদ্বাণীতে
  • উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে
  • কৃষি ক্ষেত্রে
  • ব্যাংক-বীমায়
  • মনোবিজ্ঞানে
  • প্রাতিষ্ঠানিক নীতি নির্ধারণে
  • বাজার বিশ্লেষণে

পরিসংখ্যানের ব্যবহার নিচে আলোচনা করা হলো:

১. ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিসংখ্যান: ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান অধিক ব্যবহৃত হয়। আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। ব্যবসায়ের লাভ মূলত পণ্যের উৎপাদন, চাহিদা, পণ্যের উৎকর্ষতা ও মূল্যের ওপর নির্ভরশীল। তা ছাড়া ক্রেতার বুচি, সামর্থ্য এবং অভ্যাসের ওপর সঠিক ধারণা নিতে ব্যবসায়ীকে পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করতে হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিসংখ্যানের অধিক গুরুত্বের কারণে "ব্যবসায় পরিসংখ্যান" নামে একটি আলাদা বিষয়ের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।

২. অর্থনীতিতে পরিসংখ্যান: যে কোনো অর্থনৈতিক সমস্যার বিশ্লেষণে ও অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়নে পরিসংখ্যান সহায়তা করে। সমাজে মোট উৎপাদন মূল্য, মজুরি, ভোগ, উৎপাদন, বিনিয়োগ, জীবনযাত্রার মান, মূল্য স্তর, মাথাপিছু আয়, টাকার ক্রয় ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ের অর্থনৈতিক সমীক্ষায় পরিসংখ্যান ব্যবহৃত হয়। কোনো দেশের অর্থনীতিতে বিরাজমান মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দা অবস্থা নিরূপণে সূচক সংখ্যার ব্যবহার করা হয়। আর এই সূচক সংখ্যা নির্ণয়ে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়।

৩. কৃষি ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান: কৃষি ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের ব্যবহার অধিক পরিলক্ষিত হয়। দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাওয়াতে বিজ্ঞানীরা নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি, হাইব্রীড ফসল, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে সক্ষম ফসলের বীজ উদ্ভাবনে পরিসংখ্যানের 'Design of Experiment' পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। কৃষিতে পরিসংখ্যানের অধিক গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে 'কৃষি পরিসংখ্যান' নামে একটি বিভাগ খোলা হয়েছে।

৪. শিল্পকারখানায় পরিসংখ্যান নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন করতে ব্যবসায়ীরা পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করে থাকেন। যেমন: উপযুক্ত স্থান, কাঁচামাল, শ্রমিক, দ্রব্যের উৎপাদন ব্যয়, চাহিদা, ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জরিপ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করেন। শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমনীতি, ক্রয়-বিক্রয় নীতি, উৎপাদন, ব্যবসার গতি, বাজার দর, শেয়ার মূল্য, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি বিষয়ের ওপর তথ্য সংগ্রহ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের কাজে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতির প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।

৫. চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরিসংখ্যান: চিকিৎসা ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের অবদান অনস্বীকার্য। পরিসংখ্যানের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে নতুন নতুন ঔষধ আবিষ্কার, ঔষধের প্রয়োগ, ঔষধের কার্যকারিতা পরীক্ষা, রোগের বিস্তার ক্ষমতা ইত্যাদি পর্যালোচনা করা হয়।

৬. বৈজ্ঞানিক গবেষণায় পরিসংখ্যান: বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আবহাওয়াবিজ্ঞান প্রভৃতিতে গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণে ও ফলাফলের গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ে পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পরিসংখ্যানের সাহায্য নিয়েই আবহাওয়াবিদগণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস, তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, আর্দ্রতা সম্পর্কে ধারণা দেন। মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন অভীক্ষা পরিচালনা, উপাত্ত যাচাই, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহে পরিসংখ্যানের ব্যবহার লক্ষণীয়।

৭. পরিকল্পনা গ্রহণে পরিসংখ্যান: কোনো প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন আবশ্যক। যে কোনো সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারণে অতীত ও বর্তমান তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহণে পরিসংখ্যান সহায়তা করে।

৮. সামাজিক গবেষণায় পরিসংখ্যান সমাজে বসবাসকারী বিভিন্ন শ্রেণির জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান, শিক্ষার মান, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অপরাধ, বাসস্থান ও পরিবেশ, রোগ-ব্যাধি ইত্যাদি বিষয়ে সামাজিক গবেষণা পরিচালনা ও কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করতে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

৯. শিল্পের উৎপাদন ও উৎপাদিত পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে পরিসংখ্যান: একজন উৎপাদনকারী পরিসংখ্যানীয় অনুসন্ধানের মাধ্যমে বাজারে তার পণ্যের চাহিদা জানতে পারে। ফলে উৎপাদনকারী পণ্যের চাহিদা অনুসারে উৎপাদন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাছাড়া প্রতিটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্যের মান যাচাইয়ে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

১০. পরিসংখ্যানের দ্বারা বাজার বিশ্লেষণ: বাজার বিশ্লেষণের প্রধান হাতিয়ার হলো পরিসংখ্যান। সঠিক বাজার বিশ্লেষণের ওপর দ্রব্যমূল্যে দাম নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে নির্ভরশীল।

মানব সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে পরিসংখ্যানের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যান ছাড়া বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি বা অন্যান্য যে কোনো বিষয়ের নীতি প্রণয়ন কিংবা সঠিক সিদ্ধান্ত প্রদান প্রায় অসম্ভব। জ্ঞানের এমন কোনো শাখা নেই যার তথ্য বিশ্লেষণে পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় না। তাই পরিসংখ্যান আজ আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ