- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- পরিসংখ্যান, চলক ও প্রতীক
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পরিসংখ্যান, চলক ও প্রতীক
পরিমাপনের প্রকারভেদ (Types of Measurement)
পরিসংখ্যানে পরিমাপন ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিমাপন বলতে আমরা বুঝি কোনো নিদিষ্ট রীতিতে বস্তুর অবস্থা বা ব্যবস্থাকে সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করার প্রক্রিয়া। যে কোনো বৈশিষ্ট্য মূল্যায়ন বা পরিমাপ করতে তাকে কোনো একটি আদর্শ রাশির সাথে তুলনা করতে হয়। যার সাথে তুলনা করা হয় তাকে মাপনী বা স্কেল বলে। এই মাপনীর সাহায্যে পরিমাপ করার পদ্ধতিই হলো পরিমাপন।
বিজ্ঞানী ক্যাম্পবেল (Kampbell) এর মতে, "Measurement is the assignment of numbers to objects or events according to rules." (পরিমাপন হলো নিয়ম অনুযায়ী কোনো বস্তু বা ঘটনাকে সংখ্যায় প্রকাশ করা।)
উদাহরণ: কোনো বস্তুর ভর কেজি বা পাউন্ডে, মানুষের উচ্চতা মিটার বা ফুটে, তরল পদার্থ লিটারে পরিমাপ করা হয়।
কোনো বস্তুর বা অবস্থার বৈশিষ্ট্য সংখ্যায় প্রকাশ করার জন্য 1968 সালে বিজ্ঞানী স্টীভেন্স (Stanley Smith Stevens) পরিমাপন স্কেলকে চারটি স্তরে বা পর্যায়ে বিভক্ত করেছেন, যা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
১. নামসূচক পরিমাপন স্কেল (Nominal Scale)
২. ক্রমিকসূচক পরিমাপন স্কেল (Ordinal Scale)
৩. শ্রেণিসূচক পরিমাপন স্কেল (Interval Scale)
৪. আনুপাতিক পরিমাপন স্কেল (Ratio Scale)
পরিসংখ্যানে চলকগুলোর বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন পরিমাপনের স্কেলের সাহায্যে পরিমাপ করা হয়।
১. নামসূচক পরিমাপন স্কেল (Nominal Scale): যে পরিমাপন স্কেলের মাধ্যমে সংখ্যা অথবা সংখ্যা ও অক্ষর ব্যবহার করে সমগ্রকের উপাদানগুলোকে গুণবাচক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় তাকে নামসূচক পরিমাপন স্কেল বলে। এখানে সমগ্রকের উপাদানগুলো কোনো সংখ্যাত্মক মান গ্রহণ করে না তবে শ্রেণিগুলোকে আলাদা করার জন্য সংখ্যা ব্যবহার করা হয় কিন্তু এই সংখ্যা ব্যবহার করে কোনো ক্রমেই যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করা যায় না। যেমন: ধর্ম, লিঙ্গ, গাড়ির মডেল নম্বর, কোনো বিন্ডিং এ কক্ষ নম্বর, রক্তের গ্রুপ, বৈবাহিক অবস্থা, গায়ের রং, মেধা, পেশা ইত্যাদি নামসূচক পরিমাপকের উদাহরণ।
২. ক্রমিকসূচক পরিমাপন স্কেল (Ordinal Scale): যে পরিমাপন পদ্ধতিতে তথ্য বিশ্বের উপাদানসমূহকে বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে শ্রেণিকরণ করে উচ্চ থেকে নিম্ন অনুযায়ী সাজিয়ে প্রতিটি উপাদানকে একটি ক্রমিক নম্বর দেয়া যায় তাকে ক্রমিকসূচক পরিমাপন স্কেল বলে।' উদাহরণ: পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বররের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর নির্ধারণ করা হয়। রোল নম্বর ১ সর্বাধিক নম্বর প্রাপ্ত শিক্ষার্থী হয়। এভাবে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের রোল নম্বর বিন্যস্ত করা হচ্ছে ক্রমিকসূচক পরিমাপ। আবার কোনো দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রতিযোগীদের সময়ের স্কোর অনুযায়ী তাদের অবস্থান (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়) নির্ণয় করা যায়। আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে ঢাকা শহরের পরিবারকে ধনী, উচ্চ মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, গরীব ইত্যাদি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। ক্রমিকসূচক স্কেলে উপাদানের বৈশিষ্ট্য হিসেবে যে সংখ্যার ব্যবহার করা হয় তা নামসূচকের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ বহন করে। যেমন- এক রোল নম্বর শিক্ষার্থী দুই রোল নম্বর শিক্ষার্থী অপেক্ষা ভালো।
৩. শ্রেণিসূচক পরিমাপন স্কেল (Interval Scale): যে পরিমাপন স্কেলের সাহায্যে পরিমাণবাচক চলককে সমান সংখ্যক এককে পার্থক্য বা শ্রেণিগত বিভেদ পরিমাপ করা হয় এবং শূন্য পরম শূন্য (absolute zero) হয় না, তাকে শ্রেণিসূচক পরিমাপন স্কেল বলা হয়। এক্ষেত্রে চলকের মানগুলোর ক্রম, যোগ, বিয়োগ করা যায় কিন্তু গুণ ও ভাগ করা যায় না।
উদাহরণ: তাপমাত্রার পরিমাপ একটি শ্রেণিসূচক পরিমাপ। এটি দ্বারা কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ের তাপমাত্রা পূর্বের কোনো একটি তাপমাত্রা অপেক্ষা কম না বেশি তা বুঝায়। তাপমাত্রা ০°C এর অর্থ হচ্ছে পরিমাপ স্কেলে তাপমাত্রা ০° কিন্তু তাপমাত্রাহীন নয়।
আবার কোনো শিক্ষার্থী কোনো একটি বিষয়ে ০ পাওয়ার অর্থ এই নয় যে ঐ বিষয়ে সে কিছুই জানে না।
৪. আনুপাতিক পরিমাপন (Ratio Scale): যে পরিমাপন স্কেলের সাহায্যে পরিমাণবাচক চলককে সমান সংখ্যক এককে শ্রেণিগত পার্থক্য পরিমাপ করা হয় এবং শূন্যকে পরম শূন্য ধরা হয় তাকে আনুপাতিক পরিমাপন স্কেল বলে। এই পদ্ধতিতে একটি আদর্শ বা প্রমাণ এককের ভিত্তিতে অন্যান্য একক পরিমাপ করা হয়। এই পরিমাপনের সাহায্যে প্রাপ্ত মান দ্বারা সকল ধরনের বীজগাণিতিক কাজ করা যায়। উদাহরণ: উচ্চতা, ওজন, পরিবারের সদস্য সংখ্যা, সময় ইত্যাদি অনুপাত সূচক পরিমাপ।
আনুপাতিক পরিমাপন পূর্বের তিনটি পরিমাপেরই বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এখানে শূন্যকে পরমশূন্য ধরা হয়। যেমন: কোনো পরিবারের ছেলে শিশুর সংখ্যা শূন্য হলে ঐ পরিবারে কোনো ছেলে শিশু নেই বুঝায়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ