• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি
  • কৃষিজ উৎপাদন
কৃষিজ উৎপাদন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

কৃষিজ উৎপাদন

গম চাষে অন্যান্য প্রযুক্তি ও পরিচর্যা

বিনা চাষে গমের আবাদ

অনেক জমিতে রোপা আমন ধান কাটতে দেরি হয়। ফলে জমি চাষ-মই দিয়ে বীজ বোনার সময় থাকে না। এক্ষেত্রে বিনা চাষে গম আবাদ করা যায়। ধান কাটার পর যদি জমিতে পর্যাপ্ত রস থাকে অর্থাৎ হাঁটলে পায়ের দাগ পড়ে তবে সরাসরি বীজ বুনতে হয়। আবার জমিতে জো না থাকলে হালকা সেচ দিয়ে জো এলে বীজ বুনতে হয়। প্রথমে গম বীজ গোবর গোলানো পানিতে কয়েক ঘণ্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে। পরে পানি থেকে উঠিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। এতে বীজের গায়ে গোবরের প্রলেপ লেগে যায়। এ বীজ বপন করলে পাখির উপদ্রব কম হয় এবং বীজ রোদে শুকিয়ে যায় না।

এভাবে গম চাষ করলে দুভাবে সার দেওয়া যায়-১) বীজ বোনার সময় সব সার ছিটানো, ২) বীজ বপনের ১৭-২০ দিনের মধ্যে প্রথম হালকা সেচ দেওয়ার সময় সব সার ছিটানো। বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আগাছা দমন করা প্রয়োজন হয়।

স্বল্প চাষে গমের আবাদ

দেশি লাঙল দিয়ে দুটি চাষ দিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। ধান কাটার পর জমিতে জো আসার সাথে সাথে চাষ করতে হবে। আবার জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে সেচ দেয়ার পর জো আসলে চাষ দিতে হবে। প্রথমে একটি চাষ ও মই দিতে হবে। দ্বিতীয় চাষ দেওয়ার পর সব সার ও বীজ ছিটিয়ে দিয়ে মই দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে। বপনের ১৭-২১ দিনের মধ্যে হালকাভাবে প্রথম সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচের সময় ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে আগাছা দমন করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।

গম চাষে রোগ দমন

গম চাষে পোকা মাকড়ের আক্রমণ তেমন একটা হয় না। তবে ছত্রাকজনিত বেশ কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া অনেক সময় ইঁদুরের উপদ্রব দেখা যায়। ছত্রাকজনিত রোগের মধ্যে ১) পাতার মরিচা রোগ, ২) পাতার দাগ রোগ, ৩) গোড়া পচা রোগ, ৪) আলগা ঝুল রোগ এবং ৫) বীজের কালো দাগ রোগ অন্যতম।

পাতার মরিচা রোগে প্রথমে পাতার উপর ছোটো গোলাকার হলুদাভদাগ পড়ে। শেষ পর্যায়ে এ রোগে মরিচার মতো বাদামি বা কালচে রঙে পরিণত হয়। হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ঘষা দিলে লালচে মরিচার মতো গুড়া হাতে লাগে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে নিচের পাতায়, পরে সব পাতায় ও কাণ্ডে দেখা যায়। পাতার দাগ রোগে প্রথমে নিচের পাতায় ছোটো ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরে দাগ আকারে বেড়ে পাতা ঝলসে যায়। এ রোগের জীবাণু বীজে বা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। গোড়া পচা রোগে মাটির সমতলে গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়। পরে দাগ গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে আক্রান্ত স্থানের চারপাশ ঘিরে ফেলে। একসময় গাছ শুকিয়ে মারা যায়।

গমের শিষ বের হওয়ার সময় আলগা ঝুল রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। আক্রান্ত গমের শিষ প্রথম দিকে পাতলা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে। পরে তা ফেটে যায় এবং দেখতে কালো ঝুলের মতো দেখায়। বীজের কালো দাগ রোগের ফলে গমের খোসায় বিভিন্ন আকারের বাদামি অথবা কালো দাগ পড়ে। বীজের ভ্রুণে দাগ পড়ে এবং আস্তে আস্তে দাগ পুরো বীজে ছড়িয়ে পড়ে।

গমের এসব ছত্রাকজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাতের গম যেমন- কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ, গৌরব চাষ করতে হবে। রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। গম বীজ বপনের আগে শোধন করে নিতে হবে। সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।

ইঁদুর গমের একটি প্রধান শত্রু। গমের শিষ আসার পর ইঁদুরের উপদ্রব শুরু হয়। গম পাকার সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে। ইঁদুর দমনের জন্য হাতে তৈরি বিষ টোপ বা বাজার থেকে কেনা বিষ টোপ ব্যবহার করা যায়। এসব বিষ টোপ সদ্য মাটি তোলা ইঁদুরের গর্তে বা চলাচলের রাস্তায় পেতে রাখতে হয়। বিষ টোপ ছাড়া বাঁশ বা কাঠের তৈরি ফাঁদের সাহায্যেও ইঁদুর দমন করা যায়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ