• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি
  • কৃষিজ উৎপাদন
কৃষিজ উৎপাদন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

কৃষিজ উৎপাদন

উদ্যান ফসল সংগ্রহ ও বাছাই

ফল, শাক-সবজি ও ফুল দ্রুত পচনশীল। এসব পণ্য দেশীয় প্রচলিত পদ্ধতিতে সংগ্রহ, বাছাই ও বাজারজাত করায় ক্ষেত্র বিশেষে শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। আর্থিক ও পুষ্টির বিবেচনায় এ ক্ষতি অপরিসীম। কিন্তু তোলা থেকে শুরু করে বাজারজাত করা পর্যন্ত একটু সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পণ্যের বাহ্যিক তরতাজা চেহারা, নিজ নিজ স্বাদ, গন্ধ, রং ও গুণগতমান পুরোপুরি বজায় থাকে। ফলে পণ্য নষ্ট কম হয় এবং ভালো বাজারমূল্য পাওয়া যায়।

বিভিন্ন উদ্যান ফসলের ফল, পাতা, কুঁড়ি, অঙ্কুর, মূল, কাণ্ড, কলি ও ফুল ইত্যাদি অংশ আমরা ব্যবহারের জন্য সংগ্রহ করি। ফসল সংগ্রহের জন্য আমাদের বাণিজ্যিক পরিপক্বতাকে বিবেচনা করতে হয়। বাণিজ্যিক পরিপক্বতা বলতে ফসলের ব্যবহার্য অংশের এমন অবস্থানে বোঝায় যখন মানুষ তা খাওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারে। যেমন- শসা, লাউ, কুমড়া, বেগুন, শিম, বরবটি, ঢেড়শ, পাতাজাতীয় সবজি ইত্যাদি আমরা বাড়ন্ত অবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে সংগ্রহ ও বাজারজাত করি। ফলকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়। এক ধরনের ফল গাছ থেকে তোলার পর ফলের মধ্যে শর্করা থেকে চিনিতে রূপান্তর বন্ধ হয়ে যায়। যেমন- জাম্বুরা, লেবু, আঙ্গুর, লিচু ইত্যাদি। এসব ফল পাকার পরই তোলা উচিত। আবার আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, বেল ইত্যাদি ফল গাছ থেকে তোলার পরও শর্করা থেকে চিনিতে রূপান্তর হতে থাকে, সুগন্ধ ছড়ায় ও রং ধারণ করে। এসব ফল পাকার আগে গাছ থেকে পাড়া হয়।

ভালো বাজারমূল্য পাওয়ার জন্য উদ্যান ফসল যথাযথভাবে সংগ্রহ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ছাঁটাই, বাছাই, প্যাকিং ও পরিবহন করা প্রয়োজন। সঠিকভাবে এ কাজ না করলে পণ্য থেকে বাষ্পীভবন, প্রস্বেদন ও শ্বসনের মাধ্যমে পানি বের হয়ে কুঁচকে যেতে পারে, তাপমাত্রা বাড়ার ফলে শ্বসন বেড়ে গিয়ে কোষ-কলা নষ্ট হয়ে যেতে পারে এবং রোগ-জীবাণুর আক্রমণে পণ্য পচে যেতে পারে। এসব ক্ষতি থেকে পণ্যকে রক্ষার জন্য আমাদের নিচের বিষয়গুলো অনুসরণ করতে হবে-

১. ফসল তোলার সময় ফসল তোলার জন্য আমাদের বাণিজ্যিক পরিপক্বতাকে বিবেচনা করে সঠিক সময়ে ফসল তুলতে হবে।

২. ফসল তোলার পদ্ধতি: উদ্যান ফসল সাধারণত দুভাবে তোলা হয়, যথা- ক) হাত দিয়ে এবং খ) যন্ত্রের সাহায্যে। ফসল সংগ্রহের সময় নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-
সাবধানে তুলতে হবে যেন গাছের বা তোলা ফসলের কোনোটার ক্ষতি না হয়। তোলার সময় হাতের নখ, ছুরি বা যন্ত্রের আঘাতে ফসলের গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করা, গাছ মোচড়ানো, মাটিতে ফেলে দেওয়া, গায়ে মাটি লাগানো, সূর্যের তাপ লাগানো ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।

৩. ফসল রাখার পাত্র ক্ষেত থেকে ফসল তুলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পাত্রে রাখতে হবে। পাত্র এমন হতে হবে যেন পণ্যের কোনো ক্ষতি না হয়। আমরা ফসল রাখার জন্য পাটের বস্তা, প্লাস্টিকের ঝুড়ি, বাঁশ বা বেতের ঝুড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি।

৪. মাঠ থেকে পরিবহন মাঠ থেকে বাছাই করার স্থানে পণ্য নেওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে। পণ্যভর্তি পাত্র আছড়ে ফেলা যাবে না। গাদাগাদি করে বোঝাই করা যাবে না। ধীরগতিতে গাড়ি চালাতে হবে যাতে ঝাঁকুনি কম লাগে।

৫. তাপমাত্রা ক্ষেত থেকে তোলার পর পণ্যকে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা করতে হবে। তাপে পণ্যের উত্তাপ বেড়ে যায়। ফলে গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। পণ্য সকালে বা বিকালে তুলতে হবে। তোলার পর যত দ্রুত সম্ভব মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে হবে।

৬. পণ্য বাছাই পণ্য মাঠ থেকে আনার পর প্রথমে অপ্রয়োজনীয় বা অগ্রহণযোগ্য পণ্য বেছে আলাদা করতে হবে। পরে পণ্যের আকার আকৃতি অনুযায়ী কয়েকটা ভাগে ভাগ করতে হবে। অতঃপর বাজারজাত করার জন্য পণ্য প্যাকিং করতে হবে। আমরা বস্তা, পলিথিনের শিট, প্লাস্টিকের ঝুড়ি, বাঁশ বা বেতের ঝুড়ি অথবা কাগজের বা কাঠের বাক্সে প্যাকিং করে থাকি। প্যাক করা পণ্য গন্তব্যস্থানে পাঠানোর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত অবশ্যই ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ