- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
- কৃষিজ উৎপাদন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
কৃষিজ উৎপাদন
গরুর বিভিন্ন প্রকার রোগ
গরু আমাদের অনেক উপকারে আসে। কিন্তু এসব পশু মানুষের মতো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত পশুর দুধ, মাংস এবং কর্মক্ষমতা কমে যায়। অনেক পশু যত্ন ও চিকিৎসার অভাবে মারাও যায়। তাই পশু পালনকারীর রোগ সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা উচিত। এ পাঠে গরুর রোগ ও রোগ পরিচিতি বর্ণনা করা হলো-
রোগ: পশুর স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের বিচ্যুতিকে রোগ বলা হয়। রোগাক্রান্ত পশুর খাদ্যগ্রহণ কমে যাবে। পশু ঝিমাতে থাকবে। প্রশ্রাব ও পায়খানায় সমস্যা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এদের শরীরের লোম খাড়া দেখায় ও তাপ বেড়ে যায়। গবাদিপশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এদের রোগসমুহকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-
ক। সংক্রামক রোগ
খ। পরজীবীজনিত রোগ
গ। অপুষ্টিজনিত রোগ ও
ঘ। অন্যান্য সাধারণ রোগ
ক। সংক্রামক রোগ যে সকল রোগ রোগাক্রান্ত পশু হতে সুস্থ পশুর দেহে সংক্রমিত হয় তাকে সংক্রামক রোগ বলে। ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে পশুতে এ সকল রোগ হয়ে থাকে। উল্লিখিত রোগের মধ্যে সংক্রামক রোগই সবচেয়ে বেশি মারাত্মক। সংক্রামক রোগের মধ্যে আবার ভাইরাসজনিত রোগ পশুর বেশি ক্ষতি করে থাকে, যেমন- খুরা-রোগ, জলাতঙ্ক, গোবসন্ত ইত্যাদি। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগের মধ্যে গবাদিপশুতে বাদলা, তড়কা, গলাফোলা, ওলান-ফোলা, বাছুরের নিউমোনিয়া ও ডিপথেরিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
নিম্নে কয়েকটি রোগের কারণ ও লক্ষণ দেওয়া হলো:
খুরা রোগ: সকল জোড়া খুর বিশিষ্ট গবাদি পশু এ রোগে আক্রান্ত হয়। এটি একটি ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ। লালা, খাদ্য দ্রব্য ও বাতাসের মাধ্যমে সুস্থ প্রাণীরা সংক্রমিত হয়।
রোগের লক্ষণ: পশুর খুরায়, মুখে ও জিহ্বায় ফোস্কার মতো দেখা যায়। পরে ফোস্কা থেকে ঘা হয় এবং মুখ হতে লালা ঝরে। তাপমাত্রা বাড়ে ও খাবারে অরুচি হয়। ধীরে ধীরে পশু দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় পশু মারা যায়। কম বয়স্ক পশু বা বাছুরের মৃত্যুর হার বেশি।
বাদলা: গবাদি পশুর ৬ মাস থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত এই রোগ হতে দেখা যায়। এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। ক্ষতস্থান ও মলের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়।
রোগের লক্ষণ: বাদলা রোগে আক্রান্ত হলে পশুর নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখা যায়-
- আক্রান্ত পশু খুঁড়িয়ে হাটে।
- শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে যায় ও ব্যাথা অনুভব করে।
- ফোলা স্থানে পচন ধরে ও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত পশু মারা যায়।
- আক্রান্ত স্থানে চাপ দিলে পচ পচ শব্দ হয়।
- শরীরের তাপমাত্রা (১০৪০-১০৫° ফা.) বেড়ে যায়।
তড়কা: তড়কা একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি।
রোগের লক্ষণ: নিচে তড়কা রোগের লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:
- তড়কা রোগ হলে পশু মাটিতে পড়ে যায়।
- শরীরের তাপমাত্রা (১০৪০-১০৫° ফা.) ও গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়।
- মৃত পশুর নাক, মুখ ও পায়ুপথ দিয়ে রক্ত নির্গত হয়।
খ। পরজীবীজনিত রোগ যেসব ক্ষুদ্র প্রাণী বড়ো প্রাণীর দেহে আশ্রয় নেয় তাদেরকে পরজীবী বলে। এরা আশ্রয়দাতার দেহ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে বেঁচে থাকে ও বংশবিস্তার করে। পরজীবীকে দুইভাগে ভাগ করা হয়, যথা-
১) বহিঃপরজীবী- উকুন, মশা, মাছি, আটালি, মাইট ইত্যাদি পশুর চামড়ার উপর বাস করে এবং দেহ হতে রক্ত শোষণ করে পশুর ক্ষতি করে থাকে।
২) দেহাভ্যন্তরের পরজীবী: এরা পশুর দেহের ভেতর বাস করে, যা কৃমি নামে পরিচিত। কৃমি দেখতে পাতা, ফিতা ও গোল বলে এদেরকে পাতা কৃমি, ফিতা কৃমি ও গোল কৃমি বলা হয়।
এরা আশ্রয়দাতার দেহের ভিতর হতে পুষ্টি গ্রহণ করে পশুকে রোগাক্রান্ত করে তোলে।
গ। অপুষ্টিজনিত রোগ আমিষ, শর্করা, স্নেহ, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, পানি ইত্যাদি যে কোনো একটি পুষ্টি উপাদানের অভাবে গবাদিপশুর রোগ হলে তাকে অপুষ্টিজনিত রোগ বলা হয়। মানুষ ও গবাদিপশুর শরীরে খাদ্যের অন্যান্য উপাদানের তুলনায় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ খুবই কম পরিমাণে দরকার হয়। প্রধানত এ দুটি পুষ্টি উপাদানের অভাবে পশু অপুষ্টিজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। যেমন- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, দৈহিক বৃদ্ধি না হওয়া, ত্বক অমসৃণ হওয়া, দেরিতে দাঁত উঠা, হাড় বেঁকে যাওয়া, দুধ জ্বর (milk fever) ইত্যাদি।
ঘ। অন্যান্য সাধারণ রোগ অন্যান্য সাধারণ রোগের মধ্যে পেট ফাঁপা, উদরাময় ও বদহজম উল্লেখযোগ্য। সাধারণত খাদ্যে অনিয়ম, পচা-বাসি খাদ্য ও দুষিত পানির কারণে এ ধরনের রোগ হয়ে থাকে। বাছুরকে খাদ্য সরবরাহের সময় এ বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

