• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি
  • কৃষিজ উৎপাদন
কৃষিজ উৎপাদন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

কৃষিজ উৎপাদন

পোনা মজুদ এবং মজুদ পরবর্তী পরিচর্যা

পোনা মজুদ: পুকুরে পোনা ছাড়ার জন্য নিকটবর্তী কোনো সরকারি বা বেসরকারি হ্যাচারি বা নার্সারি খামার থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে। কাছাকাছি স্থানে মাটির হাঁড়ি বা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে পোনা পরিবহন করা যায়। দূরবর্তী স্থানের ক্ষেত্রে পলিথিন ব্যাগে অক্সিজেন দিয়ে পোনা পরিবহন করা উচিত। পোনা এনে সরাসরি পুকুরে ছাড়া উচিত নয়। পোনা ভর্তি পলিব্যাগ বা পাত্র পুকুরের পানিতে ১৫-২০ মিনিট ভাসিয়ে রাখতে হবে। এ সময় অল্প অল্প করে পলিথিনে বা পাত্রে পুকুরের পানি মেশাতে হবে। এতে করে পাত্রের পানির তাপমাত্রা ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা প্রায় সমান হবে। এরপর পলিব্যাগ বা পাত্র কাত করে পোনা আস্তে আস্তে পুকুরে ছাড়তে হবে। সকালে বা বিকালে বা দিনের ঠান্ডা আবহাওয়ায় পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে। পুকুরে ৭-১০ সে.মি. আকারের পোনা শতকে ২৫-৪০টি মজুদ করা যায়। কাতলা ১০-১৬টি, বুই ৭-১২টি, মৃগেল ৭-১২টি মজুদ করা যেতে পারে। এ সকল মাছের সাথে অন্য বিদেশি মাছ চাষ করা হলে সেক্ষেত্রে সিলভার কার্প ৭-১২টি, কাতলা ৩-৪টি, রুই ৫-৮টি, মৃগেল ৬-১০টি, কার্পিও ১-২টি ও গ্রাস কার্প ২-৪টি ছাড়তে হবে। তা ছাড়া প্রতি শতকে অতিরিক্ত ১০-১৫টি সরপুটির পোনা মজুদ করা যায়।

মজুদ পরবর্তী পরিচর্যা

১। সার প্রয়োগ: পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্য না থাকলে মাছের বৃদ্ধি ভালো হয় না। তাই পুকুরে দৈনিক অথবা প্রতি সপ্তাহে একবার নিয়মিত সার দেওয়া উচিত। সার পানির সাথে গুলে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।

পুকুরে সার প্রয়োগের তালিকা
সারের নাম
মাত্রা (শতকে সপ্তাহে)
গোবর
২-২.৫ কেজি
ইউরিয়া
৪০-৫০ গ্রাম
টিএসপি
২০-২৫ গ্রাম

২। সম্পূরক খাদ্য সরবরাহ পুকুরে পোনা মজুদের পর থেকেই দৈনিক সম্পূরক খাবার সরবরাহ করতে হবে। সুষম খাবার তৈরির জন্য ফিশমিল, সরিষার খৈল, গমের ভুসি/চালের কুঁড়া, আটা ও ভিটামিন যথাক্রমে ২০: ৩০ ৪৫ ৪.৫ ০.৫ অনুপাতে মিশিয়ে খাবার তৈরি করে মাছকে দেওয়া যায়। খাবার দেওয়ার ১০-১২ ঘণ্টা আগে খৈল ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর ভেজা খৈলের সাথে বাকি উপাদানগুলো অল্প পানি দিয়ে মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করে বল আকারে পুকুরের কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে দিতে হবে। দিনের প্রয়োজনীয় খাদ্য সমান দুইভাগে ভাগ করে সকালে ও বিকালে দিতে হবে। এ ছাড়া বাজার থেকে কেনা কারখানায় তৈরি মৎস্য খাদ্যও পুকুরে সরবরাহ করা যেতে পারে। পুকুরে প্রতিদিন মজুদকৃত মাছের মোট ওজনের ২-৫ ভাগ এবং শীতের সময় ১-২ ভাগ খাবার দিলেই চলে।

৩। মাছের রোগ ব্যবস্থাপনা পুকুরে মাছ চাষের সময় বিভিন্ন কারণে মাছের রোগ হতে পারে। পুকুরের পরিবেশ খারাপ হলে মাছ সহজেই রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় ও মারা যেতে পারে। ফলে মাছ চাষ লাভজনক হয় না। চাষকালীন সময়ে মাছের ক্ষতরোগ, লেজ ও পাখনা পচা রোগ, পেটফোলা রোগ এবং মাছের দেহে উকুনের আক্রমণ হতে পারে। রোগ হলে মাছ পানির উপরিভাগে অস্বাভাবিকভাবে সাঁতার কাটে, খাবার গ্রহণ কমিয়ে দেয় বা বন্ধ করে দেয়, ফুলকার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়, মাছের দেহে বিভিন্ন দাগ বা ক্ষতচিহ্ন দেখা যায়। মাছে রোগ দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগাক্রান্ত মাছ পুকুর হতে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রাথমিকভাবে পুকুরে শতকে ১ কেজি চুন বা ২৫-৩৫ গ্রাম পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দেওয়া যেতে পারে। অথবা ১০ লিটার পানিতে ১০ গ্রাম লবণ গুলিয়ে তাতে মাছগুলোকে ১ মিনিট গোসল করিয়ে আবার পুকুরে ছেড়ে দিতে হবে।

মাছ আহরণ: বুই, কাতলা, মৃগেল মাছ ১ বছর বয়স পর্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এরপর খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেলেও দৈহিক বৃদ্ধি সে হারে ঘটে না। এ জন্য নির্দিষ্ট বয়সে মাছ ধরে ফেলতে হবে। তা না হলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। কাতলা ৭-১২ মাসের মধ্যে ওজনে ১-১.৫ কেজি হয়, বুই ও মৃগেল মাছ ৯-১২ মাসের মধ্যে ওজন ৭০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ