• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

নেতৃত্বের প্রকারভেদ Classification of Leadership

দৈনন্দিন জীবনে আমরা নেতৃত্বের সাথে পরিচিত। পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে, কল-কারখানায়, অফিস-আদালতে, খেলার মাঠে সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্বের অবদান অনস্বীকার্য। তবে নেতৃত্বের কতকগুলো ধরন রয়েছে। নিম্নে সেগুলো তুলে ধরা হলো:

১. রাজনৈতিক নেতৃত্ব (Political leadership): রাজনৈতিক নেতৃত্ব কোনো রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিকাশ লাভ করে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক আদর্শের ভিত্তিতে স্বাধীনতা আন্দোলনের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছে। যেমন- গান্ধী-নেহেরুর নেতৃত্বে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জাতীয় আন্দোলন প্রভৃতি রাজনৈতিক নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

২. সম্মোহনী নেতৃত্ব (Charismatic leadership): কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যখন কোনো নেতার অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, নৈপুণ্য, প্রাঞ্জল বক্তব্য সকলকে আকৃষ্ট এবং আবেগাপ্লুত করে তোলে এবং জনগণ মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় সেই নেতার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে, তখনই সম্মোহনী নেতৃত্বের জন্ম হয়। প্রকৃতপক্ষে, সম্মোহনী নেতৃত্ব হলো এক জাদুকরী নেতৃত্ব। ভারতের মহাত্মা গান্ধী, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ ও বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্মোহনী নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

৩. বিশেষজ্ঞসুলভ নেতৃত্ব (Specialised leadership): যখন কোনো ব্যক্তি বিশেষ জ্ঞান, উচ্চতর শিক্ষা, দক্ষতার জন্য সুখ্যাতি অর্জন করে কোনো সংগঠনে প্রসিদ্ধি লাভ করে, তখন বিশেষজ্ঞসুলভ নেতৃত্বের জন্ম হয়। যেমন- কবি, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, অধ্যাপক ইত্যাদি বিশেষজ্ঞসুলভ নেতৃত্বের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

৪. প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনার নেতৃত্ব (Administrative or managerial leadership): অফিস-আদালতের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট কিংবা শিল্প-কারখানার ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কোনো প্রশাসক বা ব্যবস্থাপকের নিজস্ব যোগ্যতা, দক্ষতা ও অন্যান্য গুণের ফলে যে নেতৃত্ব গড়ে ওঠে তাই প্রশাসনিক বা ব্যবস্থাপনার নেতৃত্ব।

৫. তত্ত্বাবধানকারী নেতৃত্ব (Caretaker leadership): একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় এ ধরনের নেতৃত্ব লক্ষ করা যায়। এ ধরনের ব্যবস্থায় নেতৃত্ব প্রদানকারী সহকর্মীদের সাথে যেরূপ ব্যবহারই করুক না কেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার মতামতই চূড়ান্ত। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণকারীদের প্রস্তাব বা পরামর্শ শোনা হয় মাত্র।

৬. একনায়কতান্ত্রিক নেতৃত্ব (Dictator leadership): এক ব্যক্তির নেতৃত্ব এখানে প্রাধান্য পায়। একনায়ক সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের কোনো মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকে না।

৭. গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব (Democratic leadership): সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে যে নেতৃত্ব গড়ে ওঠে তাকে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব বলে। আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটেছে।

৮. সর্বাত্মকবাদী নেতৃত্ব (Iotalitarian leadership): সর্বাত্মকবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এ ধরনের নেতৃত্ব লক্ষ করা যায়। এ ধরনের নেতৃত্বে ব্যক্তির, ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন সবকিছু নেতা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। নিয়মনীতিই এখানে মুখ্য। আধুনিক আমলাতন্ত্রে এ ধরনের নেতৃত্বের ছায়া লক্ষ করা যায়।

৯. সনাতন নেতৃত্ব (Traditional leadership): অদক্ষ, অসচেতন জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে এ ধরনের নেতৃত্ব লক্ষ করা যায়।

১০. বুদ্ধিজীবী নেতৃত্ব (Intellectual leadership): চিন্তা জগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ব্যক্তিবর্গ তাদের জ্ঞান, মেধা-লেখনীর মাধ্যমে নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিত হন। যেমন- কার্ল মার্কস, ভলটেয়ার, লেনিন প্রমুখ।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ