• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বের ভূমিকা Role of Leadership in Establishing Good Governance

নেতৃত্ব একটি বিশেষ গুণ। নেতৃত্ব ব্যক্তির এমন গুণ, যা অন্যকে প্রভাবিত ও পরিচালিত করে অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। যেকোনো সংগঠন, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছার জন্য প্রয়োজন যোগ্য, দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের। নেতৃত্বের গুণে কোনো অধঃপতিত জাতির মধ্যে প্রাণ সঞ্চার হতে পারে। অন্যদিকে, দুর্বল ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে কোনো উন্নত জাতিও ধ্বংসের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হতে পারে। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিসীম। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১. জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা: সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নানামুখী সমস্যা ও সংকট থেকে মুক্তির জন্য সুযোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। কেননা সুযোগ্য নেতৃত্ব ছাড়া কোনো জাতি-অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। সুযোগ্য নেতৃত্বই জাতীয় সমস্যার সমাধানে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে প্রগতির পথে নিয়ে যেতে পারে। সঠিক নেতৃত্ব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একাত্মতার সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে।

২. জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি: সুযোগ্য নেতৃত্ব জনগোষ্ঠীকে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করে, স্বাধীন জাতি হিসেবে সংগঠিত করে এবং দেশ গড়ার কাজে জাতিকে জাগিয়ে তোলে। এর ফলে সুশাসনের পথ প্রশস্ত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ ধরনের নেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

৩. রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা: আমরা সমাজ জীবনের প্রতিটি স্তরে, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, শিল্প-কারখানা, অফিস-আদালত ইত্যাদি ক্ষেত্রে নেতৃত্বের প্রকাশ দেখতে পাই। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সঠিক নেতৃত্ব সুশাসন প্রতিষ্ঠার অপরিহার্য শর্ত। সঠিক নেতৃত্ব সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যাপক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে পরিচালনার মাধ্যমে সফলতার চরম শিখরে আরোহণ করতে পারে, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত জরুরি।

৪. দলীয় নীতি নির্বাচন: নেতৃত্ব দলের নীতি নির্ধারণ ও তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকে। দলীয় নীতি ও আদর্শে জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। তাহলে সংগঠনের সাফল্য আসে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজটিও সহজ হয়।

৫. রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণ রাষ্ট্রীয় নীতি সম্পর্কে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থান ঠিক করা নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রীয় নীতিতে কোন বিষয় গুরুত্ব পাবে তার উপর সুশাসন অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই জনস্বার্থের অনুকূল, যুগোপযোগী রাষ্ট্রীয় নীতিমালা গ্রহণে নেতৃত্বের দক্ষতার উপর সুশাসনের বিষয়টি গভীরভাবে জড়িত।

৬. রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসার জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসার ও সচেতনতা বৃদ্ধি সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজকে ত্বরান্বিত করে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাদের বক্তব্য, সমাবেশ, বিবৃতি ও জনসংযোগের মাধ্যমে জনগণকে রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত ও সচেতন করে তুলতে পারে।

৭. সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন দেশের জনগণের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি। নেতৃত্বের যোগ্যতা, দক্ষতার উপর সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সাফল্য নির্ভর করে। সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন: স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনকল্যাণ গঠন করে থাকে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে। প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের কাজটি নেতৃত্বের উপর নির্ভর করে। সঠিক নেতৃত্বই প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে থাকে।

৯. আইনের শাসন কায়েম আইনের শাসনের অর্থ হলো আইনের চোখে সকলেই সমান এবং রাষ্ট্রের সকল মানুষ আইন অনুযায়ী সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। যেখানে আইনের শাসন রয়েছে, সেখানে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অনেকটা সহজ। নেতৃত্বের যোগ্যতা, দক্ষতা এবং সঠিক পরিচালনার ওপর আইনের শাসন চালুর বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

১০. সমন্বয় সাধন: যোগ্য ও সঠিক নেতৃত্ব রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজের সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করে থাকে। ফলে দেশের উন্নয়ন সাধিত হয় এবং সুশাসন নিশ্চিত হয়।

বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশসমূহের শাসন পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে সুশাসন প্রত্যয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ রাষ্ট্রের নাগরিকদের সকল সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার সুরক্ষার জন্য প্রয়োজন সুশাসনের। আর সুশাসনের জন্য প্রয়োজন যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ নেতৃত্বের। রাষ্ট্রের উন্নতি ও সমৃদ্ধি, অগ্রগতি, স্থিতিশীলতা ইত্যাদির জন্য বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজন।
সুতরাং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা শাসনকার্য সুচারুরূপে পরিচালনার মূলে রয়েছে নেতৃত্ব। তবে এই নেতৃত্ব হতে হবে দক্ষ, অভিজ্ঞ, সুকৌশলী যাতে নেতৃত্বের কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌছানো যায়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ