• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

নেতৃত্বের প্রয়োজনীয় গুণাবলি Essential Qualities of Leadership

যে কেউ ইচ্ছা করলেই নেতৃত্ব দিতে পারেন না কিংবা নেতা হতে পারেন না। নেতার মধ্যে প্রয়োজনীয় গুণের সমাবেশ থাকতে হবে। নেতা কোন কোন গুণে ভূষিত হলে যোগ্য নেতৃত্বের অধিকারী হবেন, এ এ প্রশ্নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। যেমন-

অধ্যাপক মিলার (Prof. Miller) মনে করেন, "আত্মসংযম, সাধারণ জ্ঞান, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা, ন্যায়পরায়ণতা, সৎ সাহস, বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রভৃতি একজন যোগ্য নেতার গুণাবলি।"

সমাজবিজ্ঞানী ম্যানসন (Manson)-এর মতে, "যোগ্য নেতার গুণাবলি হচ্ছে সদাচরণ, ভাষা প্রয়োগের দক্ষতা, কৌশল, প্রফুল্লতা, ন্যায়নীতি এবং সংযম।"

অধ্যাপক মিচেলস (Prof. Michels) বলেন, "নেতৃত্ব হচ্ছে ইচ্ছাশক্তি, বিস্তৃত জ্ঞান, বিশ্বাসের দৃঢ়তা ও স্বয়ংসম্পূর্ণতা।"

দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল (Bertrand Russel)-এর মতে, "নেতাকে অবশ্যই তিনটি গুণের অধিকারী হতে হবে।" তা হলো-

১. আত্মত্মবিশ্বাস

২. সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা এবং

৩. দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষমতা।

বোগোর দাস (Bogor Das) মনে করেন, নেতার মধ্যে পাঁচটি প্রয়োজনীয় গুণ থাকতে হবে। তা হলো- (১) দূরদৃষ্টি (২) কল্পনা শক্তি (৩) নমনীয়তা (৪) প্রতিভা এবং (৫) আত্মবিশ্লেষণের ক্ষমতা।

নিম্নে নেতৃত্বের প্রয়োজনীয় গুণাবলি বিশদভাবে তুলে ধরা হলো:

১. আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব নেতৃত্বের প্রথম অপরিহার্য গুণ হলো ব্যক্তিত্ব। নেতাকে এক অনন্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হয়। চারিত্রিক দৃঢ়তা, মাধুর্য, তেজস্বিতা, নমনীয়তা, বাকপটুতা প্রভৃতি গুণের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বই একজন মানুষকে নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে।

২. শিক্ষা: সুশিক্ষা নেতৃত্বের অন্যতম গুণ। একজন শিক্ষিত নেতা তার শিক্ষালব্ধ জ্ঞানের দ্বারা জাতীয় সমস্যার অনুধাবন করে সমাধানের সঠিক পথ নির্দেশ করতে সক্ষম।

৩. দৈহিক ও মানসিক সুস্থতা সুস্থ শরীর ও মন নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান মাপকাঠি। সুস্থ দেহ ও মনের অধিকারী না হলে কারো পক্ষে নিরলস পরিশ্রম করা, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। তাই নেতাকে অবশ্যই মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম হতে হবে।

৪. বাগ্মিতা: বাগ্মিতা, নেতৃত্বের অন্যতম গুণ। নেতা যদি ভালো বক্তা হন, তাহলে তিনি সহজেই সবার মন জয় করতে সক্ষম হবেন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু, বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাধারণ বাগ্মিতার অধিকারী ছিলেন।

৫. দূরদৃষ্টি: স্থানীয় আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্যায়ের জটিল সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়োজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব। একজন যোগ্য নেতাকে অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমানকে মূল্যায়ন করতে হবে এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা দিতে হবে।

৬. জ্ঞান ও প্রজ্ঞা: নেতৃত্বের প্রয়োজনীয় গুণাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অগাধ জ্ঞান। নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কোনো ব্যক্তিকে গভীর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার অধিকারী হতে হবে।

৭. আত্মবিশ্বাস: নেতাকে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হতে হবে; অন্যথায় অন্যের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করা যাবে না। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতাদের আত্মবিশ্বাসই জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।

৮. বুদ্ধিমত্তা: নেতৃত্বের একটি আকর্ষণীয় গুণ হলো বুদ্ধিমত্তা। সফল ও যোগ্য নেতাকে অবশ্যই বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ হতে হবে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অসংখ্য জটিল সমস্যার, সমাধানে বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে নেতা জনগণের কাছে নিজেকে সম্মান ও শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারে।

৯. অভিজ্ঞতা: নেতাকে দক্ষ-অভিজ্ঞ ও কুশলী হতে হয়। কেননা নেতৃত্বের ওপরই কোনো জাতির সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে। যিনি যে বিষয়ে নেতৃত্ব দেন তাকে সেই বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হয়।

১০. সহনশীলতা ও আত্মসংযম নেতাকে অবশ্যই সহনশীল ও আত্মসংযমী হতে হবে। যেকোনো সংকট-সমস্যার ক্ষেত্রে ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে যেতে হবে।

১১. কঠোরতা ও কোমলতা: নেতৃত্বের অপরিহার্য গুণ হলো কঠোরতা ও কোমলতা। পরিস্থিতির প্রয়োজনে নেতাকে পুষ্পের ন্যায় কোমল হতে হবে, আবার কখনো কখনো কঠিন নীতি অবলম্বন করতে হবে।

১২. উদারতা: নেতাকে হতে হবে সমুদ্রের ন্যায় উদার মনের অধিকারী। সকল প্রকার সংকীর্ণতা, পরশ্রীকাতরতা, স্বার্থপরতা ও হীনম্মন্যতার ঊর্ধ্বে উঠে ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।

১৩. দায়িত্বশীলতা: নেতৃত্বের অন্যতম গুণ দায়িত্বশীলতা। দেশ ও জাতির স্বার্থে নেতা সর্বোচ্চ দায়িত্ববোধের পরিচয় দিবেন। তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন।

১৪. নিরপেক্ষতা: যোগ্য নেতৃত্বের অপরিহার্য গুণ হলো নিরপেক্ষতা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের কাছে তিনি নিরপেক্ষ বলে বিবেচিত হবেন। সকলের প্রতি সমান আচরণ করবেন।

১৫. ন্যায়পরায়ণতা নেতা হবেন ন্যায়নীতির প্রতীক। সব শ্রেণির মানুষ তার চোখে সমান। তিনি হবেন উন্নত চরিত্রের অধিকারী, ন্যায়ের প্রশ্নে তিনি অনড় থাকবেন।

১৬. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা: দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেতৃত্বের অপরিহার্য গুণ। বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষত দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় পরিবেশে নেতাকে দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জাতিকে সংকট থেকে মুক্তি দিতে হয়।

১৭. দেশপ্রেম: একজন নেতাকে অবশ্যই দেশপ্রেমিক হতে হবে। দেশ ও জনগণের প্রতি প্রবল ভালোবাসাই নেতাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও কল্যাণমুখী কাজে উদ্বুদ্ধ করে। দেশপ্রেম নেতৃত্বকে অনুপ্রেরণা দেয়, দায়িত্ববান করে তোলে। তাই দেশপ্রেম নেতৃত্বের অন্যতম আবশ্যকীয় গুণ।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ