- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
জনসেবা ও আমলাতন্ত্র
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
জনসেবা ও আমলাতন্ত্র
আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য (Characteristics of Bureaucracy)
আধুনিক সরকার ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র একটি অপরিহার্য সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কতকগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে সেগুলো লিপিবদ্ধ করা হলো:
১. স্থায়িত্ব: আমলাতন্ত্র একটি স্থায়ী সংগঠন। আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কর্মচারীগণ একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মে বহাল থাকেন। এরূপ সংগঠনের চাকরিতে প্রবেশের যেমন একটি সুনির্দিষ্ট বয়ঃকাঠামো প্রচলিত আছে তেমনি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের দীর্ঘ সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে।
২. দক্ষতা: আমলাগণ তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে খুবই দক্ষ। তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রয়োজনে দেশে ও দেশের বাইরে তাদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
৩. নিরপেক্ষতা: নিরপেক্ষতা আমলাতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আমলাগণ নিরপেক্ষভাবে তাদের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। আমলাতন্ত্রের নিরপেক্ষতা বলতে আমলাদের মধ্যে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব বা আচরণের অনুপস্থিতিকে বোঝায়। মূলত গণতান্ত্রিক শাসন প্রক্রিয়ায় আমলাদেরকে রাজনীতির উর্ধ্বে অবস্থান করে সব দলকেই সর্বান্তঃকরণে সমানভাবে সাহায্য করা উচিত। এতে আমলাদের প্রতি বা আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পায়।
৪. পদসোপান নীতি: আমলাতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো পদসোপান নীতি। পদসোপান নীতি বলতে এমন একটি পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনাকে বোঝায়, যার মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন ও নিম্নতম কর্মচারীদের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের মাধ্যমে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত করা হয়। এই নীতি অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মকর্তার উপর একজন ঊর্ধ্বতন বা উপরস্থ কর্মকর্তা থাকেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তার অধস্তন কর্মকর্তাদেরকে কর্ম সম্পাদনের জন্য আদেশ-নির্দেশ দিয়ে থাকেন। প্রশাসনিক সংগঠনে পদক্রম, সাধারণত কর্মকর্তাদের মর্যাদা ও কর্তৃত্ব অনুযায়ী বিন্যস্ত থাকে।
৫. কর্ম বিশেষীকরণ আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো কর্ম বিশেষীকরণ। দক্ষতা ও নিপুণতার সাথে প্রশাসনিক সংগঠনের কর্ম সম্পাদনের জন্য এটি একটি অপরিহার্য দিক। আমলাগণ সাধারণত বিজ্ঞান এবং আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে থাকেন। সেই সাথে অধিকতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। আর এ কারণেই কর্ম বিশেষীকরণের উপর জোর দেওয়া হয়।
৬. যোগ্যতার মানদণ্ডে নিয়োগ আধুনিককালে আমলাতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো শিক্ষাগত ও পেশাগত যোগ্যতার মানদণ্ডে কর্মচারী নিয়োগ। আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের প্রতিটি পদের কার্যের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্য অনুযায়ী পদসমূহের যোগ্যতা নির্ধারণ করে কর্মচারী নিয়োগ করা হয়। তবে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের অধিকতর যোগ্য ও দক্ষ করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার পাশাপাশি উপযুক্ত পদোন্নতির ব্যবস্থাও করা হয়।
৭. বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কর্মচারীদের যোগ্যতা ও পদমর্যাদা অনুসারে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয়। সেই সাথে একটি নির্দিষ্ট বেতনক্রম অনুসারে কর্মচারীদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও প্রদান করা হয়। সাধারণত জীবনযাত্রার মান এবং চলমান বাজার ব্যবস্থার প্রতি লক্ষ রেখে একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর এই বেতনক্রম ও সুবিধাদি বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে।
৮. লিখিত আদেশ-নির্দেশ ও নথিপত্র: আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের আরও একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এর কার্যক্রম সম্পাদিত হয় লিখিত আদেশ-নির্দেশ ও নথিপত্রের মাধ্যমে। আমলাতন্ত্রে যেসব আইন প্রণীত হয় সেগুলো প্রশাসনিক আইন (Administrative Act) হিসেবে লিপিবদ্ধ আকারে থাকে। এ ধরনের লিখিত আইন প্রশাসনকে জনগণের নিকট জবাবদিহি (Accountable) করে তোলে। তাছাড়া আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের সকল আদেশ-নির্দেশ নথি বা দলিল আকারে অধস্তন অফিসসমূহে পাঠানো হয়।
৯. নিরবচ্ছিন্নতা: আমলাগণ প্রশাসনিক ও দৈনন্দিন কাজে নিরবচ্ছিন্নতা বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের পরিবর্তন ঘটলেও আমলাগণ তাদের দায়িত্ব ধারাবাহিকভাবে সম্পাদন করেন। তাই রাষ্ট্রে কোনো অচলাবস্থা বা নৈরাজ্য দেখা দিতে পারে না।
১০. আইনের কঠোর অনুশাসন আমলাতান্ত্রিক সংগঠন আইনভিত্তিক, আইন অনুযায়ী কার্য সম্পাদন করাই এর প্রধান লক্ষ্য। আইনের বাস্তবায়ন ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র কোনোরূপ বৈষম্য সৃষ্টি করে না। আমলাতান্ত্রিক সংগঠন সরকারি কর্মচারীদের সুনির্দিষ্ট রীতিনীতি অনুযায়ী স্বেচ্ছাচারিতা থেকে তাদের রক্ষা করে থাকে।
১১. জনস্বার্থ সংরক্ষণ: আমলাতন্ত্র জনগণের স্বার্থ বাস্তবায়ন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি উত্তম সংগঠন। মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক সমস্যা সমাধানের যন্ত্ররূপে এটি কাজ করে। আমলাতন্ত্র তার রুটিন মাফিক কাজের পাশাপাশি এদিকটাও গুরুত্বের সাথে সম্পাদন করে। যেমন অধ্যাপক সাইমন মনে করেন, আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের কাজ সমাজ ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা বিধান করা।
১২. নৈর্ব্যক্তিকতা: আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে পদাধিকারীরা প্রায়ই অজ্ঞাতনামা থাকেন। কারণ এতে বিভিন্ন পদাধিকারীর-ব্যক্তিগত পরিচয়ের গুরুত্ব পায় না। মূলত পদই আসল বিবেচ্য বিষয়। আমলাতান্ত্রিক সংগঠনে পদক্রমনীতি অনুসরণ করায় বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে যে সম্পর্কের সৃষ্টি হয় সেটি মূলত পদের সাথে পদের সম্পর্ক।
১৩. পেশাদারিত্ব: আমলাগণ সরকারি চাকরিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। আমলাতন্ত্র একটি পেশাদারি সংগঠন। তারা দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতাদি পেয়ে থাকেন। আমলারা একই পেশায় নিয়োজিত থেকে চাকরিকালীন সময়ে তাদের দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
১৪. পরিবর্তনশীলতা: পরিবর্তনশীলতা আমলাতন্ত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তিত লক্ষ্য ও আদর্শের সাথে আমলারাও নিজেদের মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটান। সরকারের নীতি, আদর্শই তাদের আদর্শ হয়ে দাঁড়ায়। পরিবর্তনশীল ধ্যানধারণা ও আদর্শ লক্ষ্য নিয়ে আমলাগণ নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
পরিশেষে উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আমলাতান্ত্রিক সংগঠন বহুমুখী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। রুটিন মাফিক কাজের পাশাপাশি 'রাজনৈতিক প্রশাসকদের আইন প্রণয়ন, গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান, সেই সাথে সরকারি নীতি বাস্তবায়নে এটি সক্রিয় যন্ত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ