• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

জনসেবা ও আমলাতন্ত্র

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

জনসেবা ও আমলাতন্ত্র

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতার গুরুত্ব Importance of Accountability of Bureaucracy to Establish Good Governance

স্থায়ী, সুদক্ষ ও বেতনভুক্ত সরকারি কর্মচারীদের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসনই আমলাতন্ত্র। আমলাগণের কাজ হলো প্রশাসন ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে এবং সুচারুরূপে পরিচালনা করা, সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করা এবং সরকারি নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারকে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করা।

আমলাতন্ত্রের ভূমিকা নিয়ে প্রায়ই একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, আমলাতন্ত্র জনপ্রভু না জনসেবক। আমলাগণ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের মাধ্যমে জনগণের সেবা করবেন তথা জনসেবকে পরিণত হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা যখন ক্ষমতার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করেন, জনস্বার্থ উপেক্ষা করেন তখন প্রশ্ন দেখা দেয় নিয়ন্ত্রণের এবং জবাবদিহিতার। আর আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতার উপর সুশাসন বহুলাংশে নির্ভরশীল। এজন্য তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে ন্যস্ত করতে হবে এবং তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে।

আধুনিক গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সুশাসন একটি প্রাসঙ্গিক ও সময়োচিত বিষয়। আধুনিক রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো সুশাসন। সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, অংশগ্রহণ এবং জনকল্যাণের ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনাই হচ্ছে সুশাসন। সুশাসন এমন এক শাসন ব্যবস্থা যেখানে আইনের শাসন, জনগণের মৌলিক অধিকার বলবৎ থাকে এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে সু-সম্পর্ক সৃষ্টি করে।

আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতা সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। সুশাসনের প্রবক্তাগণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের স্বচ্ছতা, আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতা বলতে আমলাদের দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পাদনের বাধ্যবাধকতাকে বোঝায়। অর্থাৎ আমলারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন, *কোনোরূপ চাপে বা গাফিলতির কারণে দায়িত্বহীনতার জন্য তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট ব্যাখ্যা প্রদান করবেন, কৈফিয়ত দিতে বাধ্য থাকবেন।

আধুনিক গণতান্ত্রিক 'রাষ্ট্রে সুশাসনের জন্য আমলাদের জবাবদিহিতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমলাদের জবাবদিহিতার আচরণ ও মনোভাবের উপর সুশাসন অনেকাংশে নির্ভরশীল। কারণ জবাবদিহিতা ছাড়া সরকারি নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন যথার্থ ও জনকল্যাণকর নাও হতে পারে। তাই আমলাতান্ত্রিক জবাবদিহিতা ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। নিম্নে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমলাতান্ত্রিক জবাবদিহিতার গুরুত্ব তুলে ধরা হলো:

১. প্রশাসনিক গতিশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি: আমলারা সরকারি নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে। আর সরকারি নীতি দ্রুত ও দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন হলে তা জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে, যা সুশাসনকে নিশ্চিত করে। সরকারি নীতির বাস্তবায়নে টালবাহানার দীর্ঘসূত্রিতার জালে যাতে বন্দী হয়ে না পড়ে সেজন্য আমলাদের জবাবদিহি করতে হবে। প্রশাসনিক গতিশীলতার জন্য এ জবাবদিহিতা প্রয়োজন, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথকে সহজ করে তুলতে পারে।

২. দুর্নীতি হ্রাস: দুর্নীতি সুশাসনের বড় রকমের অন্তরায়। অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে দুর্নীতির জন্য সরকারি বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি, প্রকল্প সফল হতে পারে না। দুর্নীতিতে অন্যান্যের সাথে সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীরাও জড়িত। প্রশাসনিক জবাবদিহিতা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি হ্রাস বা রোধ করতে পারে। এতে রাষ্ট্রীয় জীবনে সুশাসন নিশ্চিত হতে পারে।-

৩. প্রশাসনিক স্বচ্ছতা: প্রশাসনিক স্বচ্ছতার জন্য প্রশাসনিক জবাবদিহিতা প্রয়োজন। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা অর্থাৎ সরকারি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের পরিপূর্ণ প্রকাশ। প্রশাসনিক স্বচ্ছতার জন্য জনগণ সরকারের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতে পারে, সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে। এতে জনগণের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করে।

৪. দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতা সরকারি কাজে গতি আনে। কর্মচারীরা যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করলে জনগণ সুশাসনের সুফল ভোগ করতে পারেন। অন্যথায় সুশাসন বিঘ্নিত হতে বাধ্য। আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীল হতে বাধ্য করার জন্য প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

৫. আইনের শাসন কায়েম: আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতা আইনের শাসন কায়েম করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে। আইন অনুযায়ী সকল নাগরিক রাষ্ট্রের সকল সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে তা নিশ্চিত করাই সুশাসনের লক্ষ্য। এক্ষেত্রে যাতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কোনোরূপ গাফিলতি, দায়িত্বহীনতা, অবহেলা কাজ না করে। তার জন্য প্রশাসনিক জবাবদিহিতা প্রয়োজন।

৬. উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করে: আধুনিক রাষ্ট্রগুলো সুশাসনের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করে জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যাপৃত। এ ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাতে সঠিক সময়ে, সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় এর জন্য আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতা কাজ করে। ফলে সুশাসন নিশ্চিত হয়।

৭. জনগণের অংশগ্রহণ ও আস্থা বৃদ্ধি: আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতা সরকারি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণ ও আস্থা বৃদ্ধি করে। ফলে সরকার ও জনগণের মধ্যে সু-সম্পর্কের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হয়ে সুশাসন নিশ্চিতকরণে কাজ করে।

৮. প্রশাসনের নিরপেক্ষতা: নিরপেক্ষ প্রশাসন সুশাসনের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। আমলাদের নিরপেক্ষতা সুশাসনকে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রশাসনের জবাবদিহিতা আমলাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করে।

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, আধুনিক জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতা খুবই প্রয়োজন। সুশাসন ছাড়া যেমন রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ জবাবদিহিতা ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ