- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
জনসেবা ও আমলাতন্ত্র
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
জনসেবা ও আমলাতন্ত্র
জনসেবায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা Role of Bureaucracy in Public Service
প্রত্যেক রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ই সরকারের স্থায়ী, বেতনভূক্ত কর্মচারীদের দ্বারা প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। আমলাগণ একদিকে যেমন সরকারের গৃহীত নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, অন্যদিকে তেমনি আইন প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, . চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করে সরকারকে সহায়তা করেন। তবে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা সম্পর্কে একটি প্রশ্ন প্রায়ই দেখা দেয়, সেটি হলো আমলাতন্ত্র জনপ্রভু না জনসেবক?
বাংলাদেশ সংবিধানের ২১ (২) অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে "সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য চর্তব্য।" সুতরাং এ থেকেই বুঝা যায় যে, আমলাতন্ত্র জনপ্রভু নয় বরং জনসেবক। সকল সময়ে জনগণের সেবা করা তাদের কর্তব্য।
আমলাদের কর্মকাণ্ডের উপর দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অনেকটাই নির্ভর করে। আদর্শ, দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠার মহান লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমলারা জনসেবার মাধ্যমে জনগণের বন্ধুতে পরিণত হতে পারেন। নিম্নে জনসেবায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা আলোচনা করা হলো:
১. উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন আমলারা সরকারের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে। জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার জন্য সরকার রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, সেতু, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণের পরিকল্পনা করে। আর এই সব পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করে আমলাতন্ত্র। সরকারের জনসেবামূলক কর্মসূচি; যেমন- শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে আমলাতন্ত্র।
২. জনগণ ও সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধন: আমলারা সরকারের সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার ফলে আমলারা জনগণের খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। জনগণ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা আমলাদের কাছে তুলে ধরে। আমলারা জনগণের দাবিগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে পেশ করে। এভাবে আমলাতন্ত্র সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে থাকে।
৩. জনগণকে সেবা দান আমলারা তাদের পেশাগত কাজের মাধ্যমে জনসাধারণকে সেবা প্রদান করে থাকেন। জমি ক্রয়-বিক্রয় রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স, পারমিট ইত্যাদি গ্রহণ ও নবায়ন আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে হয়ে থাকে। আমলাগণ জনগণকে উপরিউক্ত সেবা যদি সাধারণভাবে প্রদান করেন তাহলে সেটাই হবে জনসেবা।
৪. জনগণের দাবি পূরণ: আমলাতন্ত্র জনগণের বিভিন্ন দাবি পূরণে ভূমিকা পালন করে। মাঠ প্রশাসনের আমলারা জনগণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন। জনগণ তাদের বিভিন্ন দাবি, অভাব-অভিযোগ আমলাদের কাছে তুলে ধরে। আমলারা জনগণের কথা শুনে দাবি পূরণের আশ্বাস প্রদান করে থাকেন। পরবর্তী সময়ে তারা সরকারের কাছে আলোচনা করে জনগণের দাবি পূরণের ব্যবস্থা করে থাকেন।
৫. প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা: বাংলাদেশের মতো দেশে প্রায়ই বন্যা, প্লাবন, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো ইত্যাদি আঘাত করে এবং জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমলারা সরকারের পক্ষ থেকে সবার আগে জনগণের পাশে দাঁড়ায়। আমলারাই সর্বপ্রথম উদ্ধার তৎপরতা এবং ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে ও জনগণের জানমাল রক্ষা করার চেষ্টা করে।
৬. শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা: অভ্যন্তরীণ শাস্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা রাষ্ট্র তথা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সরকার আমলাদের মাধ্যমে পুলিশ, আনসার ইত্যাদি নিয়োগ করে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে। জনসাধারণকে নিরাপত্তা প্রদান করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয় সে দিকটি বিবেচনায় রাখতে হয়।
আধুনিক গণতান্ত্রিক ও সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে শাসন ব্যবস্থা এত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও অভিযোগের শেষ নেই। আমলারা অনেকে জনগণের স্বার্থের প্রতি চরম উদাসীনতা প্রদর্শন করেন এবং নিজেদের পদ সম্পর্কে অতিরিক্ত উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। বিধিবিধান ও আনুষ্ঠানিকতার বেড়াজালে তারা জনসেবার পরিবর্তে গণ-হয়রানিমূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অধ্যাপক রবসন তাই তাঁর 'The Civil Service in Britain and France' গ্রন্থে আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, "আমলারা সবসময় নিজেদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন।"
বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে আমলাদের আচরণ সম্পর্কে বিস্তর অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলারা সেভাবে নিজেদের 'জনগণের সেবক না ভেবে প্রভু' মনে করতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের এতদিন পরেও সে মানসিকতার খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। তবে একথা ঠিক যে, পাকিস্তানি আমলের শেষ দিকে আমলারা অনেক বেশি জনদরদি ভূমিকায় নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে থাকেন।
সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ, আইনের শাসন কায়েম, দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমলাতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। পার
আমলাদের মধ্যে এখনো মানুষের প্রতি ভালোবাসা, দেশপ্রেম, সততা নিঃশেষ হয়ে যায় নি। সেই দেশপ্রেমের জাগরণ ঘটিয়ে আমলারা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন, দেশবাসী তাই প্রত্যাশা করেন। কারণ একথা সত্য যে আমলারা জনগণের প্রভু নন, বরং জনগণের সেবক।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ