• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ

ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়

ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায় ১৯৪৭-এর ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্তান যুব কর্মী সম্মেলনে বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও আইন-আদালতের ভাষা করার প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ১৯৪৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ৩ সদস্যবিশিষ্ট 'তমদ্দুন মজলিস' নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। এ সংগঠনের অপর সদস্যদ্বয় ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং শামসুল আলম। এ সংগঠনটি বাংলা। ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম ও আইন-আদালতের ভাষা করার পক্ষে প্রচারণা চালায়।

১৯৪৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল মনসুর আহমদ ও আবুল কাশেমের তিনটি প্রবন্ধ নিয়ে 'পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু' শীর্ষক একটি পুস্তিকা বের করে। এ পুস্তিকার মাধ্যমে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার আহ্বান জানানো হয়। ১৯৪৭সালের নভেম্বর মাসে ড. এনামুল হক এক নিবন্ধে লেখেন যে, "উর্দু বহিয়া আনিবে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য রাজনৈতিক, রাষ্ট্রিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মৃত্যু।" এ সময় ভাষাতাত্ত্বিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আবুল কালাম সামসুদ্দীনসহ অনেকে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে বিভিন্ন প্রবন্ধ লেখেন।

১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর ফলে পূর্ব বাংলার ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। এ অধিবেশনে কুমিল্লা থেকে, নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহার করার দাবি উত্থাপন করেন। গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাংলা ভাষা সংক্রান্ত প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন, তমিজউদ্দিন খান প্রমুখ বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য প্রদান করেন। তাদের এসব বক্তব্যের বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকায় অনেক বিবৃতি ও সম্পাদকীয় মন্তব্য প্রকাশিত হয়। গণপরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাব অগ্রাহ্য হওয়ায় ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়।

গণপরিষদের সিদ্ধান্ত ও পাকিস্তান মুসলিম লীগের বাংলা ভাষা বিরোধী নীতি ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার , লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও তমদ্দুন মজলিসের যৌথ উদ্যোগে ফজলুল হক হলে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় ভাষা আন্দোলনকে সাংগঠনিক রূপ দেওয়া এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে একটি ব্যাপক ভিত্তিক সংগ্রাম পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তের দ্বারা গঠিত হয় 'রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' এবং এ পরিষদের আহ্বায়ক মনোনীত হন শামসুল আলম।

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার জন্য একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। পাকিস্তান গণপরিষদে সরকারি ভাষার তালিকা থেকে বাংলাকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে এই পরিষদ ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এ ধর্মঘট বানচাল করার উদ্দেশ্যে সরকার ও মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে নানা ধরনের তৎপরতা শুরু হয়।

১৯৪৮-এর ১১ মার্চ সমগ্র পূর্ব বাংলায় ধর্মঘট পালিত হয় এবং পুলিশ অনেককে গ্রেফতার করে এবং বহু ছাত্র আহত হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৩ মার্চ পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন করা হয়। এমনই এক পরিস্থিতিতে ১৫ মার্চ পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন এবং রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের মধ্যে ৮ দফা চুক্তি সম্পাদিত হয়।

এ চুক্তির শর্তগুলো ছিল নিম্নরূপ:

১. রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে এ যাবৎ যত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দান করা হবে।
২. পুলিশের জুলুম ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু ও সঠিক তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং একটি বিবৃতি প্রদান করবেন।
৩. বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব পাকিস্তান গণপরিষদে উত্থাপন করা হবে।
৪. ইংরেজি উঠে যাবার পর প্রদেশে সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা প্রবর্তন করা হবে
৫. আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না।
৬. সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।
৭. ভাষা আন্দোলনের জন্য এ পর্যন্ত পূর্ব বাংলার যে সব স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে সেখান হতে তা প্রত্যাহার করা হবে।
৮. সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে আলোচনার পর আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি যে, এ আন্দোলন রাষ্ট্রের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়নি।

এ চুক্তির ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন অনেকটা প্রশমিত হয়। কিন্তু পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার প্রথম পূর্ব পাকিস্তান সফরে এসে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভায় ঘোষণা করেন, 'উর্দু একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা' (Urdu and only Urdu shall be the state language of Pakistan)। তাঁর এ ঘোষণার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানানো হয়। তিন দিন পর অর্থাৎ ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ তার একই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করেন। এ সময় সমাবর্তন সভায় উপস্থিত ছাত্ররা না, না, না... বলে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের একটি রূপ ছিল বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের চেষ্টা। 'আরবি হরফে বাংলা পাঠ্যপুস্তক' রচনাকারীদেরকে পুরস্কার প্রদান করা হবে এই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের এই অযৌক্তিক ও অন্যায্য প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার ভাষা সংস্কার কমিটির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৫০ সালের অক্টোবরে এক বিবৃতি প্রদান করেন।

১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান গণপরিষদে ঘোষণা করেন, "উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে।" এর প্রতিবাদে পূর্ব বাংলার জনগণ প্রচণ্ড বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এ কারণে গণপরিষদের ভাষা সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর লিয়াকত আলী খান রাওয়ালপিন্ডিতে এক আততায়ীর গুলিতে নিহত হবার পর খাজা নাজিম উদ্দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।

ভাষা আন্দোলনের শেষ পর্যায়:

ক) নাজিম উদ্দিনের ঘোষণা: ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন ঘোষণা করেন যে, "উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।" ফলে ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয় এবং আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় সর্বাত্মক ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়। তার এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্ব।

খ) রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণার প্রতিবাদে এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলনকে আরও তীব্রতর করার লক্ষ্যে ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকার বার লাইব্রেরী হলে এক সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। এই সভার একটি প্রস্তাবে খাজা নাজিম উদ্দিনের পল্টন ময়দানের রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং অবিলম্বে ঐ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিও করা হয়। অপর একটি প্রস্তাবে বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রচলনের চক্রান্ত বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। এই সভায় আরও স্থির হয় যে, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশব্যাপী 'রাষ্ট্রভাষা দিবস' পালন করা হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি দিবসের কর্মসূচিকে সফল করে তোলার জন্য ৪ ফেব্রুয়ারি আহূত ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানানো হয়। ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা শহরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের একটি সভায় ৪ ফেব্রুয়ারি অপরাহ্ণে ঘোষণা করা হয়, ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশব্যাপী এক সাধারণ ধর্মঘট পালিত হবে। মাওলানা ভাসানী, আবুল হাশিমসহ সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের অনেক সদস্য এই সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবার দৃঢ় সংকল্প ঘোষণা করা হয়। ১৯৫২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমদ 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা' এবং রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন, যা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করে।

গ) ঐতিহাসিক মিছিল এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ: ২১ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচিকে বানচাল করতে সরকার উঠেপড়ে লাগে। যে ভাষায় দেশের শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষ কথা বলে তা রাষ্ট্রভাষা হবে না, হবে উর্দু- যে ভাষায় শতকরা ৬ ভাগের বেশি মানুষ কথা বলে না। এ যুক্তি নির্বোধের। কিন্তু শাসকবর্গ ছিলেন ক্ষমতাশালী। তারা অস্ত্রের ভাষায় এ আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। এ লক্ষ্যে নূরুল আমীনের ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল থেকে ঢাকা শহরে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সভা-সমাবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ছাত্ররা ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল বের করার চেষ্টা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের গেটের বাইরে সশস্ত্র পুলিশ প্রহরা ভেদ করে ছাত্র-ছাত্রীরা অসংখ্য দলে বিভক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে চলতে থাকে। তাদের মুখে ছিল 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' শ্লোগান। পুলিশ বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে ছাত্রদের দশজনের খণ্ড খণ্ড মিছিল প্রাদেশিক পরিষদ ভবনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কিছু দূর অগ্রসর হয়ে মিছিল যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসে, ঠিক তখনই মিছিলের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। শহিদ হন সালাম, বরকত, জব্বার, রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেকে। সরকারের এ বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ছাত্রদের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে শহিদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথে নেমে আসে এবং এক প্রবল অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে ওঠে। ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-শিক্ষক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করে এবং সভা-শোভাযাত্রাসহকারে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি শহিদ হন শফিউর রহমান যিনি শফিক বলে পরিচিত, রিক্সাচালক আউয়াল ও নাম না জানা এক কিশোর। ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে রাতারাতি ছাত্ররা তৈরি করে শহিদ মিনার। পরের দিন অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি শহিদ শফিউর রহমানের পিতা এ শহিদ মিনার উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে 'দৈনিক আজাদ' এর সম্পাদক জনাব আবুল কালাম শামসুদ্দীন শহিদ মিনার উদ্বোধন করেন। এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির জাতীয় ইতিহাসে রচিত হয় এক রক্তাক্ত অধ্যায়।

ঘ) রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ: অবশেষে এদেশের আপামর জনসাধারণের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পাকিস্তান সরকার নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং সাময়িকভাবে প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন বাংলাকে অন্যতম জাতীয় ভাষা করার সুপারিশ সম্বলিত একটি প্রস্তাব প্রাদেশিক পরিষদে উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। অতঃপর ১৯৫৬ সালের সংবিধানের ২১৪ নং অনুচ্ছেদে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা রূপে স্বীকৃতি পায় এবং বাঙালি জাতির বিজয় অর্জিত হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ