• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ

১৯৫৪ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব

১৯৫৪ সালের নির্বাচন ও এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় তৎকালীন পাকিস্তান আমলে সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি করে। এ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে যুক্তফ্রন্ট যেমন সরকার গঠন করে, তেমনি যুক্তফ্রন্ট সরকারকে অল্প সময়ে বাতিল করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জাতীয় সংহতিকে দুর্বল করে তোলে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হলো:

১. বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিজয়: ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয় ছিল মূলত বাঙালি জাতীয়তাবাদেরই বিজয়। এই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের ফলে ভাষা আন্দোলনে সৃষ্ট বাঙালি জাতীয়তাবাদ আরও গতিলাভ করে এবং সুসংহত হয়। এ জাতীয়তাবাদী চেতনাই পরবর্তীতে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় প্রেরণা যোগায়।

২. মুসলিম লীগের ভরাডুবি: ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির মর্মান্তিক ঘটনা, পাট শিল্পজনিত কেলেঙ্কারি, লবণ সংকট, স্বায়ত্তশাসন বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ প্রভৃতি কারণে পূর্ব বাংলার জনগণ মুসলিম লীগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ কারণে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি ও চরম বিপর্যয় ঘটে।

৩. মধ্যবিত্ত বাঙালি শ্রেণির বিকাশ: ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর হিন্দু জমিদার, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বুদ্ধিজীবীগণের ব্যাপক অংশ ভারতে চলে যাওয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে সেই শূন্য জায়গা পূরণের জন্য উঠতি মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির সৃষ্টি হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়ী যুজফ্রন্ট প্রার্থীদের প্রায় সকলেই ছিলেন মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত।

৪. অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিকাশের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়লাভ এই অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফল। ১৯৫৫ সালে 'আওয়ামী মুসলিম লীগ' থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দিলে এটি একটি অসাম্প্রদায়িক দলে পরিণত হয়।

৫. রাজনৈতিক সচেতনতা এ নির্বাচনে বিজয়ের কারণে বাঙালি জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সংহতি, সচেতনতাবোধ ও স্বায়ত্তশাসনের দাবি জোরদার হয়। আর এই রাজনৈতিক সচেতনতাবোধ থেকেই পরবর্তীতে বাঙালি জনগণ স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

৬. বাঙালি নেতৃত্বের বিকাশ: ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে বাঙালি নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বাঙালি জাতির দিক-নির্দেশক ও স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মোহনী নেতৃত্বের প্রত্যয়দীপ্ত আত্মপ্রকাশ ঘটে।

৭. স্বায়ত্তশাসনের দাবি জোরদার ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ব বাংলার জনগণ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে তাদের রায় প্রদান করেন। পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা কর্মসূচিতে স্বায়ত্তশাসন অন্যতম প্রধান দাবিতে পরিণত হয়।

৮. মুসলিম লীগের প্রভাব হ্রাস: ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের চরম ভরাডুবি ঘটে। এ ভরাডুবিতে পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক রাজনীতিতে তাদের প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেতে থাকে। মুসলিম লীগ একটি জনবচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়।

৯. বাঙালি নেতৃত্বের প্রতি আস্থা: ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি নেতৃত্বের প্রতি পূর্ব বাংলার জনগণের আস্থার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এবং জনগণ যোগ্য নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। শেরে বাংরা এ. কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জনগোষ্ঠীর আস্থা, ভালোবাসার প্রাণ পুরুষে পরিণত হন। পরবর্তীকালে তারাই পূর্ব বাংলার জনগণের স্বাধিকার আন্দোলনসহ স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ