- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ
১৯৫৬ সালের সংবিধান
১৯৫৬ সালে দ্বিতীয় গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান প্রণয়ন পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ সংবিধানের মাধ্যমে পাকিস্তানে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের চেষ্টা করা হয়।
প্রেক্ষাপট: পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর একটি সংবিধান প্রণয়নে নানা জটিলতা দেখা দেয়। সংবিধান প্রণয়নের জন্য ১৯৪৭ সালে গঠিত প্রথম গণপরিষদ ১৯৫৪ সালের ২৫ অক্টোবর গভর্নর জেনারেল কর্তৃক বাতিল ঘোষিত হয়। আদালতের হস্তক্ষেপের ফলে ১৯৫৫ সালের ২৯ মে দ্বিতীয় গণপরিষদ গঠিত হয়। দীর্ঘ ৯ বছরের প্রচেষ্টার পর অবশেষে পাকিস্তানের পক্ষে একটি সংবিধান প্রণয়ন সম্ভব হয়। ১৯৫৬ সালের ৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় গণপরিষদে এ মর্মে একটি বিল উত্থাপিত হয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি এটি গৃহীত হয়। এর ফলে ১৯৫৫ সালের আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী (বগুড়া) পদত্যাগ করলে চৌধুরী মোহাম্মদ আলী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন। চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে দ্বিতীয় গণপরিষদ সংবিধান রচনার কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করে। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য এই সংবিধান ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস থেকে কার্যকর হয়। এ সংবিধান প্রণয়নে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৫৬ সালের পাকিস্তান সংবিধানের বৈশিষ্ট্য: পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ ছিল নিম্নরূপ:
১. ইসলামি প্রজাতন্ত্র: ১৯৫৬ সালের সংবিধানে পাকিস্তানকে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। রাষ্ট্রপ্রধান হবেন মুসলমান। কুরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থি কোনো আইন পাশ হবে না।
২. যুক্তরাষ্ট্রীয়: পাকিস্তান হবে একটি যুক্তরাষ্ট্র। সংবিধানে সরকারের ক্ষমতাকে তিনটি তালিকায় বিভক্ত করা হয়। যথা: কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক ও যুগ্ম। প্রতিরক্ষা, অর্থ, পররাষ্ট্র ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকে। প্রাদেশিক সরকারের তালিকায় আইন-শৃঙ্খলা, বিচার, জনস্বাস্থ্য, ভূমি, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, রেল যোগাযোগ ইত্যাদিসহ মোট ৯৪টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়। যুগ্ম তালিকায় ট্রেড ইউনিয়ন-শিল্প ক্ষেত্রে মালিক-শ্রমিক দ্বন্দ্ব, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদিসহ মোট ১৯টি বিষয় স্থান পায়।
৩. সংসদীয় সরকার পদ্ধতি: কেন্দ্র ও প্রদেশে সরকার হবে মন্ত্রিপরিষদ শাসিত। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাদেশিক সরকারের বেলায় মুখ্যমন্ত্রী প্রধান নির্বাহী হবেন। মন্ত্রিসভাসহ তারা স্ব-স্ব আইন পরিষদের কাছে দায়ী থাকবেন। রাষ্ট্রপতি বা প্রদেশের গভর্নর হবেন নামে মাত্র প্রধান।
৪. এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা: পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রীয় হলেও কেন্দ্র ও প্রদেশে এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিধান করা হয়। ৩০০ জন নির্বাচিত ও মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত ১০টি আসনসহ মোট ৩১০টি আসন নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনসভা বা জাতীয় পরিষদ গঠিত। উভয় প্রদেশের মধ্যে এ আসন সংখ্যা সমানভাবে বণ্টন করে দেওয়া হয়।
৫. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন: পাকিস্তানের উভয় প্রদেশকে সংবিধানের আওতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপযুক্ত স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়। সংবিধানে স্পষ্ট অক্ষরে বলা হয় নি এমন বা অনুল্লিখিত বিষয়সমূহ প্রাদেশিক সরকারের এখতিয়ারভুক্ত রাখা হয়।
৬. মৌলিক অধিকার সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ তালিকাভুক্ত করে তা সংরক্ষণের নিশ্চয়তার বিধান রাখা হয়। তবে জরুরি অবস্থাকালে রাষ্ট্রপতি মৌলিক অধিকার রহিত করতে পারতেন।
৭. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগের হস্তক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত রাখার কথা বলা হয়। তাছাড়া বিচার বিভাগকে সংবিধানের রক্ষকের ভূমিকা পালনের ক্ষমতা দেওয়া হয়।
৮. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা পাকিস্তানকে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হলেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়।
৯. সংখ্যা সাম্য নীতি জাতীয় পরিষদে প্রতিনিধিত্বসহ অন্যান্য বিষয়ে পাকিস্তানের দুই প্রদেশের মধ্যে সংখ্যা সাম্য নীতির অনুসরণে এ সংবিধান প্রণীত। অবশ্য বাস্তবে বহুক্ষেত্রে এর প্রতিফলন ঘটে নি।
১০. রাষ্ট্রভাষা: বাংলা ও উর্দু উভয় ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।
১১. লিখিত দলিল: ১৯৫৬ সালের সংবিধান একটি, দীর্ঘ লিখিত দলিল। এতে একটি প্রস্তাবনা, ১৩টি অংশ, ২৩৪টি অনুচ্ছেদ ও ৬টি তফসিল অন্তর্ভুক্ত ছিল।
সংবিধানের কার্যকাল বহু চেষ্টা ও সাধনার পর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের একটি সংবিধান প্রণয়ন সম্ভব হয় বটে, তবে বেশিদিন তা কার্যকর থাকে নি। মাত্র ২ বছর ৬ মাস ১৫ দিনের মধ্যে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর জেনারেল ইস্কান্দার আলী মির্জা কর্তৃক তা বাতিল ঘোষিত হয়। তিনি সারাদেশে সামরিক আইন জারি করেন।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ