- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ভার্সাই সন্ধি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং ভার্সাই সন্ধি
ভার্সাই সন্ধি
প্রথম মহাযুদ্ধের পর বিজয়ী মিত্রশক্তি পরাজিত জার্মানি ও তার মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের জন্য ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডাকে। তারা ইউরোপের স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তাবিধানের জন্য ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই জানুয়ারি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে এক সম্মেলনে মিলিত হয়। এ শান্তি সম্মেলনে বিশ্বের ৩২টি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। যেসব দেশ এ সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠায়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র। শান্তি বৈঠকের প্রধান সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার দায়িত্ব বর্তায় তিন প্রধানের উপর। তারা ছিলেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লেমেনস্যু, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন। শান্তি স্থাপনের জন্য তারা চৌদ্দ দফার মাধ্যমে যে আদর্শবাদী পরিকল্পনা পেশ করেছিলেন তা অন্যান্য মিত্রশক্তি (বিশেষত ফ্রান্স) মানতে রাজি ছিল না। ফলে প্রেসিডেন্ট উইলসন অনেক ক্ষেত্রে আপস করতে বাধ্য হন। ফলে শান্তিচুক্তিতে আদর্শবাদের পরিবর্তে প্রতিশোধ নেওয়ার ও সংকীর্ণ জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ইচ্ছা প্রাধান্য পায়।
সন্ধির প্রেক্ষাপট
ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্র- এ চার শক্তি ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে সন্ধির প্রেক্ষাপট তৈরি করে।
ফ্রান্স: ফান্স ও জার্মানির মধ্যে শত্রুতা ছিল বহু পুরনো। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রাংকো-প্রুশিয়ান যুদ্ধে পরাজিত ফ্রান্স সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। প্যারিসের শাস্তি সম্মেলনে প্রত্যাশিত সুযোগ পেয়ে ফ্রান্সের উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় জার্মানিকে ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পঙ্গু করে দেওয়া। ফ্রান্সের প্রতিনিধি জর্জ ক্লেমেনস্যু এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কঠোর মনোভাবাপন্ন ক্লেমেনস্যুর বিশ্ব রাজনীতির ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল এবং তিনি অংশগ্রহণকারী অন্য নেতৃবৃন্দের উপর যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ব্রিটেন: ব্রিটেনের উদ্দেশ্য ছিল একটি আগ্রাসী সামরিক রাষ্ট্র হিসেবে জার্মানির পুনরুত্থানকে অক্ষম করে তোলা এবং ইউরোপে তার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখা। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ তার জনগণের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে এ সম্মেলনে এসেছিলেন। চারিত্রিক গুণাবলি, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি এবং ইউরোপীয় সমস্যা সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট ধারণা ছিল। ইউরোপীয় রাজনীতিতে ব্রিটেনের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের জন্য তিনি তার মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়েছিলেন।
ইতালি: ইতালির উদ্দেশ্য ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তার যোগদানের পুরস্কারস্বরূপ বলকান এলাকা ও আফ্রিকায় জার্মানির অধিকাংশ উপনিবেশ লাভ করা। ইতালির প্রতিনিধি ভিত্তোরি ওরলান্দো প্রকাশ্যে তার দেশের স্বার্থ আদায়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের উদ্দেশ্য ছিল আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের ভিত্তিতে ইউরোপের পুনর্গঠন এবং বিজয়ী ও বিজিতের স্বার্থরক্ষা হয় এমন একটি সন্ধি রচনা করা। সর্বোপরি, একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা গড়ে তোলা। তিনি ছিলেন গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী। শত্রুর প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণের পরিবর্তে তিনি ন্যায় ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে দীর্ঘস্থায়ী শাস্তি স্থাপনের পক্ষপাতী ছিলেন। তবে ইউরোপীয় জটিল রাজনীতি ও সমস্যা সম্পর্কে তার সুস্পষ্ট ধারণা না থাকায় উচ্চ আদর্শবাদ ইউরোপীয় স্বার্থের দ্বন্দ্বে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ চার প্রধান শক্তি ব্যতীত অন্য কূটনৈতিক প্রতিনিধিগণ দূর থেকে অনেকে সম্মেলনের আলোচ্যসূচিতে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট উইলসনের আদর্শের ঘোর বিরোধী ছিলেন। জাপানি প্রতিনিধিরা ইউরোপের চেয়ে দূরপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে আগ্রহী ছিলেন।
প্যারিস শান্তি সম্মেলনে পাঁচটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এগুলো ছিল- জার্মানির সঙ্গে ভার্সাই চুক্তি, অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সেন্ট জারমেইনের চুক্তি, হাঙ্গেরির সঙ্গে ট্রিয়াননের সন্ধি, বুলগেরিয়ার সঙ্গে নিউলির চুক্তি এবং তুরস্কের সঙ্গে সেভার্সের চুক্তি। এ চুক্তিগুলোর মধ্যে ভার্সাই চুক্তি ছিল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
ভার্সাই সন্ধির প্রধান ধারাসমূহ
ভৌগোলিক শর্তাবলি-
১। জার্মানি ফ্রান্সকে আলসেস ও লোরেন প্রদেশ,
২। বেলজিয়ামকে ইউপেন, মরিসনেট ও ম্যামেড়ি নামক জেলাগুলো,
৩। ডেনমার্ককে স্লেজভিগ প্রদেশ ও'
৪। মেমেল অঞ্চল লিথুয়ানিয়াকে ছেড়ে দেয়।
এছাড়া জার্মানি পোল্যান্ডের স্বাধীনতা স্বীকার করতে বাধ্য হয় এবং পূর্ব সীমান্তে পূর্ব সীমান্তে পোজেন ও পশ্চিম প্রুশিয়া অঞ্চল ছেড়ে দেয়। স্বাধীন পোল্যান্ড যাতে সমুদ্রের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এ জন্য জার্মানির মধ্য দিয়ে একটি যোগাযোগকারী রাস্তা (Corridor) পোল্যান্ডকে জার্মানি দিতে বাধ্য হয়। জার্মান বন্দর ডানজিগ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গ্রহণ করে এবং জাতিপুঞ্জ এ বন্দর পোল্যান্ডকে ব্যবহার করতে দেয়। জার্মানির পূর্ব সীমান্তে সাইলেশিয়া প্রদেশকে গণভোটের মাধ্যমে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। একাংশ জার্মানির সঙ্গে যুক্ত থাকে, অপর অংশ চেকোশ্লোভাকিয়া ও তৃতীয় অংশ পোল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়। এসবের ফলে জার্মানি ইউরোপে ২,৫০০ বর্গমাইল পরিমাণ অঞ্চল হারায় এবং জার্মানির লোকসংখ্যা ৬০ লাখ কমে যায়।
সামরিক শর্তাবলি
ভার্সাই সন্ধির পঞ্চম অধ্যায়ে সামরিক শর্তগুলো উল্লেখ করা হয়। এসব শর্ত মোতাবেক জার্মানির সামরিক শক্তি ধ্বংস করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
১। জার্মানির স্থল, জল ও বিমানবাহিনীকে বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২। জার্মান সেনাপতিদের বরখাস্ত করা হয়।
৩। জার্মানিতে বাধ্যতামূলক সামরিক শিক্ষা ও সামরিক বিভাগে যোগ দেওয়ার নিয়ম বিলোপ করা হয়।
৪। হেলিগোল্যান্ডের নৌঘাঁটি বিলুপ্ত করা হয়।
৫। ভবিষ্যতে জার্মানিকে সমরাস্ত্র তৈরি করতে নিষেধ করা হয়।
৬। জার্মান যুদ্ধজাহাজগুলোকে ইংল্যান্ডের হাতে তুলে দিতে বলা হয়।
৭। রাইন নদীর পশ্চিম তীরের ত্রিশ মাইলের মধ্যে সকল জার্মান দুর্গ ও সামরিক ঘাঁটি ভেঙে ফেলার আদেশ দেওয়া হয়। সামরিক শর্তগুলো কার্যকর করার জন্য জার্মানিতে মিত্রপক্ষের সেনাদল মোতায়েন করা হয়।
অর্থনৈতিক শর্তাবলি
জার্মানিকে যুদ্ধ্যো জন্য অপরাধী সাব্যস্ত করা হয় এবং যুদ্ধের জন্য মিত্রশক্তির যে ক্ষতি হয়েছিল তা পূরণের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়।
১। ফ্রান্সের কয়লাখনিগুলোর ক্ষতি করার জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মানির কয়লাসমৃদ্ধ অঞ্চল সার উপত্যকা পনের বছরের জন্য ফ্রান্সের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। বলা হয়, পনের বছর পর গণভোটের মাধ্যমে সার জেলার ভাগ্য স্থির হবে।
২। মিত্রশক্তিকে কয়লা, কাঠ প্রভৃতি দিতে জার্মানিকে বাধ্য করা হয়।
৩। মিত্রশক্তিকে অর্থের দ্বারাও ক্ষতিপূরণ দিতে জার্মানিকে বাধ্য করা হয়। তবে কী পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ বাবদ দিতে হবে তা ঠিক করা সম্ভব হয়নি। বলা হয়, এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
৪। আরও বলা হয়, জার্মানির বাজারে মিত্রদেশসমূহের উৎপন্ন পণ্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ঔপনিবেশিক ও অন্যান্য শর্ত
দূরপ্রাচ্যে জার্মানির উপনিবেশগুলো জাপানকে দেওয়া হয়। জার্মানির অন্যান্য উপনিবেশ সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গ্রহণ করে ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে ম্যান্ডেট হিসেবে শাসন করতে দেয়। জার্মান সম্রাট ও তার সেনাপতিদের যুদ্ধাপরাধী সাব্যস্ত করে তাদের বিচারের ব্যবস্থা করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি বজায় রাখার জন্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠিত হয়। আরও সিদ্ধান্ত হয় যে, শ্রমিক শ্রেণির কল্যাণের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংঘ গঠন করা হবে।
ভার্সাই চুক্তির ত্রুটি
ভার্সাই চুক্তি ছিল' একটি আরোপিত চুক্তি। জার্মানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাচনাক্রমে এ চুক্তির শর্তগুলো নির্ধারিত হয়নি এবং জার্মান প্রতিনিধিদের প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করা হয়। অর্থাৎ ভার্সাই চুক্তি একতরফাভাবে জার্মানির উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
প্রথমত: চুক্তিতে জার্মানিকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করা হয়, অথচ অন্যান্য দেশ এ যুদ্ধের জন্য কম দায়ী ছিল না। দ্বিতীয়ত: ভার্সাই চুক্তি' দ্বারা জার্মানির সৈন্য বাহিনী ও অস্ত্র কমিয়ে ফেলা হয়, অথচ বিজয়ী দেশগুলো তাদের সৈন্য বাহিনী ও যুদ্ধাস্ত্র অক্ষুণ্ণ রাখে।
তৃতীয়ত: মিত্রশক্তি তাদের উপনিবেশগুলো অক্ষুণ্ণ রেখে জার্মান উপনিবেশগুলো কেড়ে নেয়।
চতুর্থত: সকল রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ নীতি অনুসরণ করা হলেও জার্মানির ক্ষেত্রে তা ভঙ্গ করা হয়। সার অঞ্চলের জার্মান অধিবাসীদের ফ্রান্সের, স্লেজভিগের জার্মানদের ডেনমার্কের, বেলজিয়াম সীমান্তের কয়েকটি জেলার জার্মানদের বেলজিয়ামের, পশ্চিম প্রুশিয়া ও ডানজিগের জার্মান অধিবাসীদের পোল্যান্ডের অধীনে এবং সুদেতেন জেলার জার্মান অধিবাসীদের চেকোস্লোভাকিয়ার অধীনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে বহু জার্মানকে পিতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করে অন্য দেশে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়। জার্মানি থেকে অস্ট্রিয়াকে আলাদা করে রাখা হয়।
পঞ্চমত: জার্মানির কয়লা, লোহা প্রভৃতি খনিজ সম্পদ গ্রহণ করে এবং জার্মানির উপনিবেশগুলো কেড়ে নিয়ে দেশটিকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পঙ্গু করা হয়, অথচ তাকেই আবার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করা হয়। এ ব্যবস্থা ছিল অন্যায় ও অযৌক্তিক।
ষষ্ঠত: বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ গঠিত হয়। কিন্তু জার্মানিকে এ সংগঠনের সদস্যপদ দেওয়া হয়নি। প্রেসিডেন্ট উইলসনের চৌদ্দ দফায় ঘোষিত ন্যায়নীতির ভিত্তিতে সন্ধি স্বাক্ষরিত হবে- এ আশ্বাসে জার্মানি যুদ্ধ বন্ধ করেছিল। কিন্তু ভার্সাই সন্ধিতে চৌদ্দ দফা অগ্রাহ্য করে মিত্রশক্তি জার্মানির উপর কঠোর ও অবাস্তব কতগুলো শর্ত চাপিয়ে দেয়, কেননা জার্মানিকে স্থায়ীভাবে পঙ্গু করে রাখাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, ভার্সাই চুক্তির এ কঠোরতার মধ্যেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল।
সপ্তমত: নৈতিকতা ও বাস্তবতার দিক দিয়ে ভার্সাই চুক্তির ত্রুটি অস্বীকার করা যায় না। ঐতিহাসিক রাইকার (Riker)-এর মতে ন্যায়-নীতির ভিত্তির উপর ভার্সাই সন্ধির শর্তাদি রচিত হয়নি।" (The moral defects of the treaty are no more gloring than the practical.)
উইলসনের চৌদ্দ দফা মার্কিন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের ১৪ দফা ইউরোপের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য বিষয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ প্রান্তে ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট উইলসন তার কংগ্রেসের ভাষণে শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে ১৪ দফাসংবলিত যে দাবি উত্থাপন করেন ইতিহাসে তা চৌদ্দ দফা নামে পরিচিত। এ চৌদ্দ দফা দাবির উপর ভিত্তি করে জার্মানি যুদ্ধবিরতির আবেদন করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।
লোকার্নো চুক্তি: লীগ অব নেশনস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিরোধ নিষ্পত্তিকারী চুক্তি হচ্ছে লোকার্নো চুক্তি। ভার্সাই সন্ধি কর্তৃক নির্ধারিত জার্মানি ও বেলজিয়াম এবং ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যবর্তী সীমারেখার নিরাপত্তার জন্য ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ইতিহাসে তা 'লোকার্নো চুক্তি' নামে পরিচিত। এ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে জার্মানি লীগ অব নেশনসের স্থায়ী সদস্য পদ লাভ করে।
ভার্সাই সন্ধিতে জার্মানির প্রতি অমানবিকতা
ভার্সাই সন্ধি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এর মাধ্যমে জার্মানির উপর যেভাবে একতরফা দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাতে একে শান্তি সম্মেলন না বলে অক্ষশক্তির বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনাল বলাই শ্রেয়; যেখানে জার্মানিকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছিল, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছিল যুদ্ধাপরাধী হিসেবে।
প্রথমত: ভার্সাই সন্ধির ঔপনিবেশিক শর্তসমূহের প্রয়োগে জাতিপুঞ্জের ম্যান্ডেট ব্যবস্থা ও যুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতির পুরস্কারস্বরূপ জার্মানির প্রায় এক মিলিয়ন বর্গমাইলের অধিক ঔপনিবেশিক এলাকা কেড়ে নেওয়া হয়। অথচ মিত্রশক্তিসমূহ নিজেদের উপনিবেশগুলো ত্যাগ করেনি।
দ্বিতীয়ত: উইলসনের চৌদ্দ দফায় জার্মানি মিত্রশক্তিকে অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণ দেবে এমন শর্ত ছিল না। কিন্তু মিত্রপক্ষ ক্ষতিপূরণ সংগ্রহের নামে একদিকে জার্মানির প্রধান প্রধান খনিজ সম্পদ অঞ্চলগুলো কেড়ে নিয়েছিল, অন্যদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু জার্মানিকে নগদ ক্ষতিপূরণ প্রদানে বাধ্য করেছিল, যা জার্মান অর্থনীতির উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছিল। পরাজিত জার্মানি সম্পর্কে বিজয়ী শক্তিবর্গের মনোভাব সম্পর্কে এজন্যই বলা হয়েছে, "To starve the goose and yet expect it to pay golden eggs." অর্থাৎ, মিত্রশক্তি চেয়েছিল হাঁসকে উপবাসী রেখে তার কাছ থেকে সোনার ডিম আদায় করতে। আসলে মিত্রশক্তি ভার্সাই চুক্তির সাহায্যে জার্মানিকে স্থায়ীভাবে দমন করে রাখার প্রয়াসই পেয়েছিল।"
তৃতীয়ত: ভার্সাই সন্ধির সামরিক শর্তসমূহের প্রয়োগে জার্মানিকে সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্র করে ফ্রান্সের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মিত্রপক্ষ তাদের অস্ত্র ত্যাগ করেনি।
চতুর্থত: উইলসনের চৌদ্দ দফার মূল সুর ছিল আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার। কিন্তু ভার্সাই সন্ধিতে অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের নীতি গৃহীত হলেও জার্মানির ক্ষেত্রে তা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করা হয়। সাত মিলিয়ন জার্মানকে মাতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। তাছাড়া জার্মান ভাষাভাষী অস্ট্রিয়ানদের জার্মানির সাথে সংযুক্ত হতে না দিয়ে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিকে অস্বীকার করা হয়।
পঞ্চমত: জার্মান প্রতিনিধিদলের নেতাকে চুক্তির শর্তসমূহ আলোচনার অধিকার না দিয়ে চরম অগণতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচয় দেওয়া হয়। জার্মান প্রতিনিধিদলের নেতা ফনব্রুক রান্টসাউকে সশস্ত্র প্রহরায় সম্মেলনস্থলে আনা-নেওয়া করা এবং স্বাক্ষরকারীদ্বয়কে মিত্রপক্ষের সাথে এক টেবিলে বসার সুযোগ না দিয়ে জার্মান জাতির প্রতি অবিচার ও অবমাননা করা হয়। মার্শাল ফসের মতে, "এটা শান্তি নয়, এটা বিশ বছরের জন্য যুদ্ধবিরতি।"" বস্তুত, এসব অমানবিকতার মাধ্যমে ভার্সাই সন্ধিতে বপন করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ। এ জন্যই ভার্সাই চুক্তি সম্পর্কে ঐতিহাসিক Riker মন্তব্য করেছেন, "Its greatest condemnation is that it contained within it the germs of a second world war.""
ভার্সাই সন্ধিতে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসনের চৌদ্দ দফা প্রস্তাব মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল, যার মূলবাণী ছিল বিভিন্ন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার। কিন্তু ইউরোপীয় প্রধান নেতৃবর্গ উইলসনের চৌদ্দ দফাকে পাশ কাটিয়ে যুদ্ধকালীন স্বাক্ষরিত গোপন চুক্তি অনুযায়ী জার্মানিকে দুর্বল করা ও নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির মানসিকতার পরিচয় দিয়ে ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে জুন যে ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষর করেন, তাতে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিকে চরমভাবে অবহেলা করা হয়।
সাধারণভাবে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার বলতে কোনো জনগোষ্ঠীর নিজস্ব চিন্তা ও চেতনার স্বীকৃতি এবং নিজেদের অধিকার নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগকে বোঝায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বিশ্বের অনেক জাতি এই আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। তাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জানুয়ারি মার্কিন কংগ্রেসে উত্থাপিত বিখ্যাত চৌদ্দ দফায় বিভিন্ন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের কথা তুলে ধরেছিলেন। এই চৌদ্দ দফার ভিত্তিতে জার্মানি আত্মসমর্পণ ও যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর করেছিল। স্বাভাবিক কারণে প্রত্যাশা ছিল, চৌদ্দ দফার মূলনীতিসমূহের উপর ভিত্তি করে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করা হবে। মানবতার কল্যাণে প্রেসিডেন্ট উইলসন তার আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের মূলনীতি নিয়ে হাজির হলেও গোপন চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রসমূহ নিজ নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য পরাজিত শক্তিসমূহের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তার মানবতাবাদী আদর্শসমূহের বিরোধিতা করে।
উইলসনের চৌদ্দ দফার নবম দফায় পরিচিত জাতীয় সীমারেখা অনুসারে ইতালির সীমানা পুনর্বিন্যাসের কথা বলা হয়েছিল। যার অর্থ হচ্ছে ইতালির সীমারেখা পুনর্নির্ধারণের সময় বিভিন্ন জাতির মানুষের উপস্থিতিকে বিবেচনা করা। কিন্তু যুদ্ধ চলাকালীন মিত্রপক্ষে ইতালির অংশগ্রহণের পুরস্কারস্বরূপ সে অ্যাড্রিয়াটিক, বলকান ও নিকট প্রাচ্যে তার স্বার্থ ও প্রভাবের প্রসারণ দাবি করে। ভার্সাই চুক্তিতে ইতালির এই দাবিকে কিছুটা হলেও স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন এলাকার জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারকে অস্বীকার করা হয়। যেমন-
১। সার অঞ্চলের জার্মান অধিবাসীদের জাতিপুঞ্জের ম্যান্ডেট ব্যবস্থার নামে ফ্রান্সের অধীনে,
২। স্লেজভিগের জার্মানদের ডেনমার্কের অধীনে,
৩। ডানজিগের জার্মানদের পোল্যান্ডের অধীনে দিয়ে অন্য দেশের সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে আপার সাইলেশিয়ায় যে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তাতে শতকরা ষাট ভাগ লোক জার্মানির সাথে সংযুক্ত হতে চেয়েছিল। ভার্সাই সন্ধিতে উপনিবেশগুলোর ব্যাপারে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করা হয়নি। উপনিবেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার স্বীকার করা হয়নি। জার্মান উপনিবেশগুলো মিত্রশক্তি বিনা দ্বিধায় গ্রহণ করেছিল।
১। চীনে অবস্থিত জার্মান উপনিবেশ কিয়চো ও সানটুং জাপানের হস্তগত হয়।
২। নিউজিল্যান্ড সামোয়ায় জার্মান অধিকৃত স্থানগুলো দখল করে।
৩। প্রশান্ত মহাসাগরে বিষুব রেখার দক্ষিণে জার্মান উপনিবেশগুলো অস্ট্রিয়ার কুক্ষিগত হয়।
৪। দক্ষিণ আফ্রিকান সরকার দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকা এবং ব্রিটেন জার্মান-পূর্ব আফ্রিকা দখল করে।
৫। জার্মান উপনিবেশ টোগো ও ক্যামেরুন জাতিপুঞ্জ নামে ব্রিটেন ও ফ্রান্স অধিকার করে।
এসব ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ন্যায়নীতি বা আদর্শের প্রতি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়নি। এতে স্থানীয় জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছারও কোনো প্রতিফলন ছিল না।
ভার্সাই সন্ধিতে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের অনেক অস্বীকৃতির মাঝেও কিছু স্বীকৃতি খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন-
১। পোলগণের অধিকৃত এলাকা নিয়ে স্বাধীন পোল্যান্ড রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছিল। একই সাথে নবগঠিত পোল্যান্ডকে সমুদ্রের সাথে যুক্ত করা হয়েছিল।
২। চেকোস্লোভাকিয়া, যুগোশ্লাভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া প্রভৃতি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা হয়েছিল।
৩। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিকে স্বীকৃতি দেওয়ার কিছু বাস্তব অসুবিধাও ছিল। এতে সংখ্যালঘুদের বহু ক্ষেত্রে সীমানা অতিক্রম করে অন্য স্থানে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হতো। ফলে সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করত। বস্তুত ভার্সাই সন্ধিতে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের দাবিকে ততটা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল, যতটা মিত্রশক্তির স্বার্থের অনুকূলে এবং জার্মানির স্বার্থের প্রতিকূলে ছিল।
ভার্সাই সন্ধির গুরুত্ব
বিশ্বশান্তি রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার শর্তাদি ভার্সাই সন্ধির সাথে যুক্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যুদ্ধের আশঙ্কা দূরীভূত হয়েছিল, যা ভার্সাই সন্ধির উল্লেখযোগ্য তাৎপর্য। ভার্সাই সন্ধিতে জাতীয়তাবাদ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এ দুটি নীতির উপর ইউরোপ পুনর্গঠন করা হয়। অর্থাৎ একই জাতি ও একই কৃষ্টিসংবলিত জনগণকে নিয়ে পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার গৃহীত হয়, যা ছিল ভার্সাই সন্ধির গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। যদিও ভার্সাই সন্ধির নানা ত্রুটি থাকায় তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল, তথাপি ভার্সাই সন্ধি ইউরোপীয় পরস্পর সংঘাতময় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সাময়িক স্বস্তি এনে দিয়েছিল। ভার্সাই সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়েছিল বিধায় ইউরোপের মানচিত্রে অনেকগুলো স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়, যা ছিল-ভার্সাই সন্ধির উল্লেখযোগ্য ফলাফল।
ভার্সাই সন্ধির মূল্যায়ন
প্যারিস শান্তি সম্মেলনে স্বাক্ষরিত চুক্তিসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে ভার্সাই সন্ধি। তবে এ চুক্তির সমালোচনার আগে আমাদের মনে রাখতে হবে, যুদ্ধের ক্ষত শুকানোর আগেই এ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছিল। ফলে সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিবর্গের ক্ষেত্রে তাদের দেশের জনমতকে উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। সংকীর্ণ কাঠামোর মধ্যে কাজ করেও তারা অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক চিন্তার পরিচয় দিয়েছেন। যেমন-জাতিপুঞ্জের জন্ম, নিরস্ত্রীকরণের ধারণা প্রভৃতি। প্যারিসের বিক্ষুব্ধ জনমত সম্মেলনের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করেছিল, এ কারণে প্যারিসকে সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করে মিত্রপক্ষ বিজ্ঞতার পরিচয় দেয়নি। জাতিপুঞ্জকে ভার্সাই সন্ধির সাথে সংযুক্ত করা উচিত হয়নি। এর ফলে জার্মানরা প্রথম থেকে সংগঠনটিকে বিজয়ী মিত্রশক্তির হাতিয়ার বলে মনে করতে থাকে, যা জাতিপুঞ্জের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। উইলসনীয় আদর্শবাদের পরিবর্তে শক্তি সাম্যের ধারণাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। কাইজারের জার্মানি ছিল আগ্রাসী, কিন্তু শাস্তি দেওয়া হয় প্রজাতান্ত্রিক জার্মানিকে।
ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলির প্রয়োগ জার্মানির জাতীয় জীবনে তীব্র অর্থনৈতিক সংকট ও বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও ভার্সাই সন্ধির অবমাননাকর পরিণতি থেকে মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে হিটলার ক্ষমতা দখল করেন। এর পরবর্তী ইতিহাস ভার্সাই সন্ধির শর্তসমূহ ভঙ্গের ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সূচনার ইতিহাস। অধ্যাপক ই. এইচ. কারের মতে, "ভার্সাই সন্ধির মাধ্যমে জার্মানির উপর যে সকল দাসত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয় কালক্রমে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সেগুলো হয় চুক্তি দ্বারা অথবা সময় অতিক্রান্ত হওয়ার কারণে অথবা জার্মানির প্রত্যাখ্যানের কারণে একে একে রদ হয়ে যায়। "
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

