- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ই-গভর্নেন্স ও সুশাসন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ই-গভর্নেন্স ও সুশাসন
ই-গভর্নেন্সের ধারণা | Concept of E-governance
ই-গভর্নেন্স (E-governance)-এর পূর্ণ রূপ হলো Electronic governance। সাধারণ অর্থে ই-গভর্নেন্স হলো সরকারি কর্মকাণ্ড তথা রাষ্ট্র পরিচালনার যাবতীয় কর্মকাণ্ডে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ও উপকরণের ব্যবহার। কিন্তু ব্যাপক অর্থে ই-গভর্নেন্স হলো শাসনকার্যে স্বচ্ছতা ও দ্রুতগতি আনয়নের জন্য সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সর্বাধুনিক তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটানো।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া (Interaction) বা যোগাযোগ ঘটলে 'ই-গভর্নেন্স'-এর উদ্ভব ঘটে। এ মিথস্ক্রিয়া সরকার ও জনগণসহ অন্যান্যের মধ্যে, সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে এ ই-গভর্নেন্স, E-govt, Digital governance, Online governance, Connected governance ইত্যাদি নামেও সমধিক পরিচিত।
টমাস এফ, গর্ডন (Thomas F. Gordon) ই-গভর্নেন্সের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, "তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি তথা ইন্টারনেট ব্যবহার করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সেবা উন্নয়নের পদ্ধতিই হলো ই-গভর্নেন্স।" ("E-governance is simply the use of information and communication technology such as the internet to improve the process of government.")
Wikibooks-এ ই-গভর্নেন্সের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, "প্রচলিত পেপার ও ব্যবহারিক প্রক্রিয়ার বিদ্যমান সীমাবদ্ধতাসমূহ দূর করে অবাধ তথ্য প্রবাহের লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারই হলো ই-গভর্নেন্স।" ("E-governance is the use of information technology to free movement of information to overcome the physical bounds of traditional paper and physical systems.")
জাতিসংঘ প্রদত্ত এক সংজ্ঞায় বলা হয়, "সরকারি তথ্য ও সেবা ইন্টারনেট এবং ওয়ার্ড ওয়াইড ওয়েবের মাধ্যমে জনগণের নিকট পৌঁছানোর ব্যবস্থাই হচ্ছে ই-গভর্নেন্স।" ("E-governance is dezined as the employment of the internet and the world wide web for delivering government information and service do the citizens.")
বিশ্বব্যাংক ই-গভর্নেন্সের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছে, "ই-গভর্নেন্স বলতে সরকারি তথ্যপ্রযুক্তি (নেটওয়ার্কিং ইন্টারনেট, মোবাইল প্রভৃতি) ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিক, ব্যবসায়ী এবং সরকারের অন্যান্য ক্ষেত্রে যোগাযোগের সামর্থ্যকে বোঝায়।" ("E-governance refers to the use by Governance agencies of information & technologis (Such as networking internet, mobile etc.) that have the ability to transform relations with citizens, businesses and other forms of government.")
আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের 'ই-গভর্নেন্স আইন-২০০২'-এ বলা হয়েছে যে, "ই-গভর্নেন্স বলতে বোঝায় ওয়েব নির্ভর ইন্টারনেট এবং অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি।" (The use by the government of web-based internet application and other information technologies.)
ইউনেস্কো প্রদত্ত সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, "সরকার বলতে বোঝায় রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্ব যার অন্তর্ভুক্ত হলো নাগরিকের আইনগত অধিকার ও দায়িত্বের প্রশ্ন। অপরদিকে ই-গভর্নেন্স হলো এসব কার্যাবলি সম্পাদনের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষতা, দ্রুততা ও স্বচ্ছতার সাথে জনগণ এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনরত অন্যান্য সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করা।" (Governance refers to the exercise of political, economic and administrative authority in the management of a country's affairs, including citizens articulation of their interests and energies of their legal rights and obligations. E-governance may be understood as the performance of this governance via the electronic medium in order to facilitate an efficient, speedy and transparent process of disseminating information to the public and other agencies and for performing government administration activities.)
ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ড. এ.পি.জে. আব্দুল কালাম বলেছেন যে, "স্বচ্ছ, নিশ্চিত, গ্রহণযোগ্য ও অবাধ তথ্য প্রবাহ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং নাগরিকদের স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ও অবিকৃত সেবা দেওয়ার উৎকৃষ্ট মাধ্যমই হলো ই-গভর্নেন্স।" (A transparent, smart e-Governance with seamless access, secure and authentic flow of information crossing the interdepeartmental barrier and providing a fair and unbiased service to the citizen.)
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্তবাবু নাইডু ই-গভর্নেন্সকে Smart সরকার ব্যবস্থা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, "সহজ-সরল, জবাবদিহিমূলক, দ্রুত সাড়াদানকারী ও স্বচ্ছতাপূর্ণ সরকার ব্যবস্থাই হলো ই-গর্ভনেন্স।"
সি. এস. আর পরাবু (C. S. R Parabhu) তাঁর "E-governance concepts and cases studies"-এ বলেছেন, "ই-গভর্নেন্স হলো পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক মাধ্যমের প্রয়োগ-এই যোগাযোগ ঘটে সরকার ও জনগণের মধ্যে, সরকার ও চাকরিজীবীদের মধ্যে, সরকার ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে, সরকারের সাথে অন্যান্য দেশের সরকারের মধ্যে।"
অনেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন তথ্য ও সেবা জনগণের কাছে পৌঁছানোকেই ই-গভর্নেন্স বলে আখ্যায়িত করেন। আধুনিককালে অনেক দেশেই তথ্যপ্রযুক্তি ইন্টারনেট, সাবমেরিন কেবলস, সরকারি হোম পেজ, ওয়েবসাইট ইত্যাদির প্রচলন হলেও ই-গভর্নেন্সের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ও অনলাইনকে প্রধান নিয়ামক হিসেবে ধরা হয়। তবে যোগাযোগের অনেক ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি যেমন- টেলিফোন, ফ্যাক্স, ওয়ারলেস্, খুদে মোবাইল বার্তা (SMS), মিনি টিভি, ট্রাকিং সিস্টেম, রেডিও ও টেলিভিশন ইত্যাদি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত নয়।
উপরিউক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত এবং সরকারের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তথ্য ও প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারকে ই-গভর্নেন্স বলা হয়। ই-গভর্নেন্স হলো সামর্থ্যযোগ্য ব্যয়ে এবং সম্ভাব্য দ্রুত সময়ে সাধারণ মানুষের প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে সরকারি কর্মকাণ্ডে ইলেকট্রনিক মাধ্যমের প্রয়োগ।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ