• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ

ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা

১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। ৬ দফা ভিত্তিক বাঙালির জাতীয় জাগরণকে নস্যাৎ করতে জেনারেল আইয়ুব আগরতলা মামলার আশ্রয় নেন। আইয়ুব-মোনায়েম চক্র ১৯৬৭ সনের ডিসেম্বর মাসে পূর্ব বাংলার কয়েকজন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের স্বার্থবিরোধী এক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনে। প্রকৃতপক্ষে ৬ দফা আন্দোলনকে নস্যাৎ করাই ছিল এই মামলার মুখ্য উদ্দেশ্য। সরকার এ মামলাকে 'আগরতলা মামলা' বলে অভিহিত করে। ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুর্মিটোলা সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়।

ওই দিন পাক সামরিক সরকারের এক প্রেসনোটে অভিযোগ করা বলা হয় "শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগিরা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় গোপন বৈঠকে এক সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে পুরো পাকিস্তানকে স্বাধীন করার ষড়যন্ত্র করেছিল। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে "আগরতলা মামলা" দায়ের করে। তাঁর বিরুদ্ধে উক্ত ষড়যন্ত্র পরিকল্পন। ও পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়। ১১ জন রাজসাক্ষী হওয়ায় ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়। অভিযোগে বলা হয় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ভারতীয় যোগসাজশে এবং ভারতীয় অস্ত্রশস্ত্রের সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান হতে বিচ্ছিন্ন করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেছিল। এই মামলার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমান সহ কয়েকজন সৎ সাহসী বাঙালি সামরিক অফিসারকে দেশের দুশমনরূপে প্রমাণ করা এবং তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে পূর্ব বাংলার স্বার্থ ও প্রগতিবাদী আন্দোলনকে চিরদিনের জন্য স্তব্ধ করে দেওয়া।

১৯৬৮ সালের ৬ জানুয়ারি এক প্রেস নোটে ২৮ জনকে গ্রেফতারের খবর প্রকাশ করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি অপর এক ঘোষণায় শেখ মুজিবুর রহমানকে এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। নিরাপত্তা আইনে ১৯৬৬ সালের ৯ মে থেকে জেলে আটক শেখ মুজিবুর রহমানকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে সামরিক আইনে পুনরায় গ্রেফতার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট সামরিক হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজনীতিবিদ, বেসামরিক কর্মকর্তা, সামরিক ও প্রাক্তন সামরিক কর্মকর্তা এবং বেসামরিক ব্যক্তিসহ মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানি দণ্ডবিধির ১২১-এ ও ১৩১ ধারায় তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানকে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করার অভিযোগে চার্জশীট দাখিল করা হয়।
মামলার বিচার কার্যক্রম: আগরতলা মামলার বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১৯৬৮ সালের ২১ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এম এ রহমানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

১৯৬৮ সালের ১৯ জুন কুর্মিটোলা সেনানিবাসে কড়া প্রহরায় "রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যদের মামলা"র বিচার কাজ শুরু হয়। মামলা শুরু হওয়ার পর তা প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলন শুরু হয় এবং ছাত্র সমাজের ১১ দফার মধ্যে এই মামলা প্রত্যাহার ও সকল বন্দীদের মুক্তির দাবি সংযুক্ত হয়। ১১ দফার ভিত্তিতে কৃষক-শ্রমিক ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এদিকে ঢাকা সেনানিবাসে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার শুরু হলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাঙালিরা ব্রিটেনের প্রখ্যাত আইনজীবী স্যার টমাস উইলিয়াম এম পিকে শেখ মুজিবুর রহমানের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করেন। প্রখ্যাত আইনজীবী আবদুস সালাম খানের নেতৃত্বে অভিযুক্তদের আইনজীবীদের নিয়ে একটি ডিফেন্স টিম গঠন করা হয়।

শেখ মুজিবুর রহমান একে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিকট হতে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য তাদের ওপর অমানুষিক ও বর্বরোচিত অত্যাচার করা হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণে দেখা গেল সম্পূর্ণ মামলাটিই ছিল একটি হীন ষড়যন্ত্র। এ মামলার প্রতিক্রিয়ায় সরকার যা আশা করেছিল, ফল হয়েছিল তার সম্পূর্ণ উল্টো। শেখ মুজিবুর রহমানকে এ মিথ্যা মামলায় জড়ানোর প্রেক্ষিতে পূর্ব বাংলার জনগণের মনে দারুণ ক্ষোভ ও অসন্তোষের আগুন জ্বলে ওঠে। ছাত্ররা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু করে। সরকার এ আন্দোলন দমন করার জন্য পুলিশ, ই.পি. আর এবং সামরিক বাহিনী মোতায়েন করে। ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে এবং ১৯৬৯ সালের প্রথম ভাগে এ আন্দোলন ব্যাপক ও তীব্রতর হয় এবং শেষ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানের রূপ গ্রহণ করে। উপায়ান্তর না দেখে প্রচণ্ড গণ আন্দোলনের মুখে পাক সামরিক শাসক আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এক বেতার ভাষণে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিঃশর্ত মুক্তি প্রদানের ঘোষণা দেন।

আগরতলা মামলায় যাদের অভিযুক্ত করে বিচারকার্য শুরু হয় তাদের তালিকা:

১. শেখ মুজিবুর রহমান।

২. লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন (নৌবাহিনী)।

৩. স্টুয়ার্ড মুজিবুর রহমান (নৌবাহিনী)।

৪. এল.এস. সুলতান উদ্দিন আহমেদ (নৌবাহিনী)।

৫. নূর মোহাম্মদ (নৌবাহিনী)।

৬. আহমেদ ফজলুর রহমান সিএসপি (বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা)।

৭. ফ্লাইট সার্জেন্ট মফিজুল্লাহ (বিমানবাহিনী)।

৮. এ.বি.এম. আবদুস সামাদ (বিমানবাহিনী)।

৯. হাবিলদার দলিল উদ্দিন হাওলাদার (সেনাবাহিনী)।

১০. রুহুল কুদ্দুস সি.এস.পি (বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা)।

১১. ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক (বিমানবাহিনী)।

১২. ভূপতি ভূষণ চৌধুরী (মানিক চৌধুরী) (আওয়ামী লীগ নেতা)।

১৩. বিধান কৃষ্ণ সেন (আওয়ামী লীগ নেতা)।

১৪. সুবেদার আবদুর রাজ্জাক (সেনাবাহিনী)।

১৫. হাবিলদার মুজিবুর রহমান (সেনাবাহিনী)।.

১৬. ফ্লাইট সার্জেন্ট আবদুর রাজ্জাক (বিমানবাহিনী)।

১৭. সার্জেন্ট জহুরুল হক (বিমানবাহিনী)।

১৮. এ.বি.এম. খুরশীদ (নৌবাহিনী)।

১৯. খান শামসুর রহমান সি.এস.পি (বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা)।..

২০. রিসালদার এ.কে.এম. শামসুল হক (সেনাবাহিনী)।

২১. হাবিলদার আজিজুল হক (সেনাবাহিনী)।

২২. মাহফুজুল বারী (বিমানবাহিনী)।

২৩. সার্জেন্ট সামসুল হক (বিমানবাহিনী)।

২৪. মেজর (ডা.) শামসুল আলম (সেনাবাহিনী)।

২৫. ক্যাপ্টেন আবদুল মোতালেব (সেনাবাহিনী)।

২৬. ক্যাপ্টেন শওকত আলী (সেনাবাহিনী)।

২৭. ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা (সেনাবাহিনী)।

২৮. ক্যাপ্টেন এ.এন.এম. নুরুজ্জামান (সেনাবাহিনী)।
২৯. ফ্লাইট সার্জেন্ট আবদুল জলিল (বিমানবাহিনী)।

৩০. মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী (বেসরকারি চাকরিজীবী)।

৩১. লে.এম.এস.এম রহমান (নৌবাহিনী)।

৩২. সুবেদার এ.কে.এম. তাজুল ইসলাম (সেনাবাহিনী)।

৩৩. মোঃ আলী রেজা (বেসামরিক প্রশিক্ষক)।

৩৪. ক্যাপ্টেন (ডা.) খুরশীদ উদ্দিন আহমেদ (সেনাবাহিনী)।

৩৫. লে. আবদুর রউফ (নৌবাহিনী)।

আগরতলা মামলার কারণ (Causes of Agartala case)

আগরতলা মামলা বাঙালি জনগণ ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র ও দমননীতিরই বহিঃপ্রকাশ। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তি সনদ হিসেবে ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলে তাকে ও আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার হীন ষড়যন্ত্রে এ মামলা দায়ের করা হয়। নিম্নে আগরতলা মামলার কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো:

১. ৬ দফা দাবি নস্যাৎ ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ৬ দফা দাবি নস্যাৎ করাই ছিল আগরতলা মামলার মুখ্য উদ্দেশ্য। ৬ দফার আন্দোলন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হলে স্বৈরাচারী আইয়ুব-মোনায়েম সরকার শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগকে জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য আগরতলা মামলার নীলনকশা (Blueprint) তৈরি করে।

২. শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আইয়ুব সরকার পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন রাজনৈতিক ও সামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের স্বার্থবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনয়ন করে। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে আরও ৩৪ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা।

৩. বাঙালিদের মধ্যে একাত্মতার সংকট সৃষ্টি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের প্রতি প্রবল সমর্থন ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে যে একাত্মতার সৃষ্টি হয় তাতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই মামলার মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগকে স্তব্ধ করে বাঙালিদের মধ্যে একাত্মতাবোধের সংকট সৃষ্টির প্রয়াস চালানো হয়।

৪. পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতার ভিত শক্তিশালী করা: আগরতলা মামলার একটি অন্যতম কারণ ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতার ভিত আরও শক্তিশালী করা। এজন্য তারা ঘৃণ্য আগরতলা মামলার আশ্রয় গ্রহণ করে শেখ মুজিবুর রহমানকে 'পাকিস্তানের শত্রু' এবং 'ভারতের দালাল' বলে প্রচার চালায়।

৫. স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন নস্যাৎ করা আগরতলা মামলার একটি কারণ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দীর্ঘদিনের স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন নস্যাৎ বা বানচাল করা। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানে গড়িমসি করে আসছিল।

৬. শাসন ও শোষণ অব্যাহত রাখা পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শাসক গোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর শাসন ও শোষণের যে স্টিম রোলার চালিয়ে আসছিল তা অব্যাহত রাখাও এ মামলার অন্যতম কারণ বলে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন।

৭. গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বন্ধ করা: পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তানে অবাধ, সুষ্ঠু, সাধারণ নির্বাচনে অনীহা প্রকাশ করে আসছিল। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা পরাজিত হবে বলে তাদের মনে আশঙ্কা ছিল। এই মামলার এটিও অন্যতম কারণ।

আগরতলা মামলার ফলাফল (Results of Agartala case)

আগরতলা মামলার ফলাফল ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী। এ মামলার মধ্য দিয়ে পাক সামরিক চক্রের হীন উদ্দেশ্য ফাঁস হয়ে পড়ে এবং পূর্ব বাংলার জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি করে। এ ক্ষোভ ১৯৬৯ সালের প্রবল গণআন্দোলনের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। নিম্নে আগরতলা মামলার ফলাফল ও তাৎপর্য উল্লেখ করা হলো:

১. ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান: আগরতলা মামলার কারণে ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। সরকার এ আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। এ উদ্দেশ্যে সরকার সমগ্র দেশে জরুরি অবস্থা ও ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-জনতা জরুরি অবস্থা অমান্য করে রাস্তায় নেমে পড়লে শুরু হয় প্রচণ্ড আন্দোলন ও বিক্ষোভ। পুলিশের গুলিতে আসাদ নিহত হলে এ আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।

২. আইয়ুব খানের পতন: ১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলার কারণে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে তীব্র আইয়ুব বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয় এবং এ সময় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। অবশেষে কোনো উপায়ান্তর না দেখে আইয়ুব খান ইয়াহিয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন।

৩. বাঙালি জাতীয়তাবোধের সুসংহতি লাভ: ১৯৬৮ সালের আগরতলা মামলার ফলে বাঙালি জাতির মধ্যে জাতীয়তাবোধ আরও সুসংহত হয়। কেননা এ মামলার প্রধান আসামি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সম্মোহনী নেতৃত্বের কারণে বাঙালিদের স্বাধিকার আন্দোলন আরও তীব্র থেকে তীব্রতর হয়।

৪. স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় অত্যাসন্ন করে তোলে আগরতলা মামলা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে অত্যাসন্ন করে তোলে। এ মামলা বাঙালিদের আরও ঐক্যবদ্ধ করে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যোগায়। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ এবং গ্রেফতারের পূর্বে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণায় উদ্দীপ্ত হয়ে বাঙালি জনগণ স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তি সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ