- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধ
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধ
স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে ইয়াহিয়া খান টালবাহানা শুরু করে। প্রথমে তিনি ৩ মার্চ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের তারিখ নির্ধারণ করেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানি শাসকচক্র সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, যে করেই হোক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের মসনদে বসতে দেওয়া হবে না। তারা ষড়যন্ত্র শুরু করে। এই ষড়যন্ত্রের হোতা ছিলেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো। আরও ছিলেন মুসলিম লীগ নেতা খান আবদুল কাইয়ুম, পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পপতিগণ, আমলা এবং সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ। ষড়যন্ত্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ জাতিকে স্তম্ভিত করে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করলেন, আগামী ৩ মার্চের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত থাকবে। বাঙালি জাতির জন্য এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। স্তম্ভিত হয়ে গেল বাঙালি জাতি। কোনো কারণ ছাড়াই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর সাথে পরামর্শ না করেই জাতীয় পরিষদের নির্ধারিত অধিবেশন স্থগিত ঘোষণায় বাঙালি জাতি ক্ষোভে ফেটে পড়ে। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণাই বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। মূলত এখান থেকে বাঙালিদের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত হয়। ৯ মার্চের জনসভায় মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী দৃপ্তকণ্ঠে পাকিস্তানি শাসকচক্রকে বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে নেওয়ার জন্য আহ্বান জানান। অন্যথায় তিনি তাদের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পরিণতির কথা। স্মরণ করিয়ে দেন। ১৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার শাসনভার গ্রহণের কথা ঘোষণা করলে ইয়াহিয়া খান ঐ দিন বিকালে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার জন্য ঢাকা আসেন। ২২ মার্চ আসেন জুলফিকার আলী ভুট্টো।
ইয়াহিয়া-মুজিব-ভুট্টোর মধ্যে চলে প্রহসনের দীর্ঘ আলোচনা। ইয়াহিয়া গোপন আলোচনার নামে কালক্ষেপণ, আলোচনার অন্তরালে ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে টিক্কা খান (পূর্ব বাংলার নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত গভর্নর) পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও সৈন্য পূর্ব পাকিস্তানে জমা করতে থাকে। সাংবাদিকরা আলোচনার অগ্রগতি জানতে চাইলে ইয়াহিয়া খান সুকৌশলে বলেন, আলোচনা সন্তোষজনক। পাকিস্তান সৈন্যবাহিনীর উচ্চপদস্থ জনসংযোগ কর্মকর্তা সিদ্দিক সালিক "উইটনেস টু সারেন্ডার" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ২০ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পূর্ববাংলার গভর্নর টিক্কা খান, লেফটেনেন্ট জেনারেল খাদিম হোসেন ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী "অপারেশন সার্চলাইট" বা বাঙালির ওপর নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালনার নীল নকশা প্রস্তুত করেন।
অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় নিম্নোক্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়:
১ একযোগে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে অপারেশন শুরু হবে।
২. সর্বাধিক সংখ্যক রাজনীতিক, ছাত্রনেতা, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংস্থার চরমপন্থিদের গ্রেফতার করতে হবে। বিশেষ সার্ভিস গ্রুপের এক প্লাটুন কমান্ডো সৈনিক শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি আক্রমণ ও তাকে গ্রেফতার করবে।
৩. ঢাকার অপারেশন শত ভাগ সফল করতে হবে। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দখল করতে হবে।
৪. সেনানিবাসের নিরাপত্তা অবশ্য নিশ্চিত করতে হবে।
৫. যাবতীয় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ মাধ্যম বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।
৬. ইপিআর সৈনিকদের নিরস্ত্র করে তদস্থলে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈনিকদের পাহারায় নিয়োগ করতে হবে।
৭. প্রথম পর্যায়ে এ অপারেশনের এলাকা হিসেবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা, যশোর, রংপুর, সৈয়দপুর ও সিলেট চিহ্নিত করা হবে। চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, রংপুর, সৈয়দপুর ও সিলেটে প্রয়োজনে বিমানযোগে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
২০ মার্চ সরকার পূর্ব পাকিস্তানের সৈন্যদের অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। বোয়িং ৭০৭ বিমানটি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও রসদ নিয়ে ঢাকা আসে। পাশাপাশি পশ্চিম পাকিস্তানের পর্যাপ্ত সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই করা জাহাজ "সোয়াত" চট্টগ্রাম বন্দরে অপেক্ষা করতে থাকে। সব প্রস্তুতির শেষে ২৫ মার্চ রাতকে গণহত্যার জন্য বেছে নেওয়া হয় এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে ঢাকা শহরের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

