• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধ

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধ

বাঙালি জনতার প্রতিরোধ যুদ্ধ

দেশে যখন গণহত্যা চলছে তখন ভারত সরকারের সহায়তায় সাবেক ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, সাবেক ই.পি.আর, পুলিশ, আনসার, ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী প্রভৃতি সম্প্রদায় থেকে আগ্রহী লোকদের নিয়ে দেশকে পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয়। তাদের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাত্র কয়েক সপ্তাহ প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে প্রকাশ্য ও গেরিলা পদ্ধতিতে পাকবাহিনীর উপর একের পর এক আঘাত হানতে থাকে।

২৫ মার্চের বর্বরতার প্রতিবাদে ২৬ মার্চ থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনী গঠনের মাধ্যমে বাংলার সর্বত্র তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়; যা আধুনিক বাংলার ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ নামে পরিচিত। দেশের বিভিন্ন স্থানে সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুল, কলেজ, গ্রামের খেলার মাঠ, ফুটবল গ্রাউন্ডে প্রভৃতি স্থানে সামরিক এবং আদা সামরিক বাহিনীর সদস্যগণ মুক্তিদ্ধোদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন। স্কুল-কলেজের ছাত্র, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, শিক্ষক, কৃষক ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিবাহিনী রাস্তায় গাছ কেটে হানাদার বাহিনীর চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সড়ক কেটে, ব্রিজ উড়িয়ে পাকবাহিনীর চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। প্রথম মুক্তিবাহিনীর বিদ্রোহের সূচনা হয় চট্টগ্রাম থেকে। এতে অংশগ্রহণ করেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনসার, যুব সম্প্রদায় ও হাজার হাজার সাধারণ মানুষ।

এরই অনুকরণে দেশের সর্বত্র বাঙালিরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৯ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে অপেক্ষমান পাকিস্তানি অস্ত্র বোঝাই জাহাজ 'সোয়াতের' অস্ত্র যাতে খালাস হয়ে হানাদার বাহিনীর হাতে না পৌঁছাতে পারে সেজন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে মুক্তিবাহিনী। কিন্তু অস্ত্রশস্ত্রের অভাবে সে প্রতিরোধ ভেঙে যায়। অতঃপর রামগড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে মুক্তিযোদ্ধারা কিন্তু তাও ভেঙে যায়। এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে ভারত থেকে যে সামান্য অস্ত্র সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল তা দিয়েও প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এ সময় যুদ্ধের বাস্তব অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে মেজর রফিকুল ইসলাম বলেন, "আমাদের সৈন্যরা ভীষণ অসহায় অবস্থায় যুদ্ধ করছিল। আমাদের গোলাবারুদ সরবরাহ ছিল খুবই কম। কেউ আহত হলেও তার প্রাথমিক চিকিৎসা কিংবা তাকে অন্যত্র স্থানান্তরের তেমন কোনো ব্যবস্থা আমাদের ছিল না।

আমরা যোগাযোগ এবং পরিবহনের অভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি বেশি।" হানাদার বাহিনী মে মাসের মধ্যেই বাংলাদেশের গ্রাম-গঞ্জের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এসময় পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের কতিপয় লোকদের নিয়ে গঠন করে রাজাকার বাহিনী, শান্তি কমিটি, আল-বদর ও আল-শামস। পাকবাহিনী এবং তাদের দোষরদের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রায় এক কোটি বাঙালি প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। 'এত লোকের পুনর্বাসন করা ভারতের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ফলে সেই শরণার্থীরা কী ধরনের মানবেতর জীবনযাপন করেছে সেই লোমহর্ষক কাহিনী বিভিন্ন লেখক, সাংবাদিক তাদের লেখনীতে প্রকাশ করেছেন। এত বিপুল সংখ্যক মানুষ ভারতে আশ্রয় নেওয়ায় বিশ্ববাসীর কাছে পাকিস্তানের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়; যার ফলে যে সকল দেশ পাকিস্তানকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা তা প্রত্যাহার করে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ