- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার
অধিকারের শ্রেণিবিভাগ Classification of Rights
অধিকারের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে অধিকারকে প্রথমত দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১। নৈতিক অধিকার (Moral rights) ও
২। আইনগত অধিকার (Legal rights)।
নিম্নে রেখাচিত্রের সাহায্যে অধিকারের শ্রেণিবিভাগ দেখানো হলো:
১. নৈতিক অধিকার (Moral rights): মানুষের বিবেক, বিচার-বুদ্ধি ও ন্যায়বোধ থেকে নৈতিক অধিকারের জন্ম। নৈতিকতার সাথে নৈতিক অধিকার সম্পৃক্ত। বিপদাপন্ন লোক তার প্রতিবেশীর সহযোগিতা চাওয়া; দুঃখী মানুষ অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়া; বৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষ অন্য মানুষের সহযোগিতা চাওয়া প্রভৃতি মানুষের নৈতিক অধিকার। নৈতিক অধিকার ভঙ্গ করলে কোনো শাস্তির মুখোমুখি না হলেও সামাজিক নিন্দা সহ্য করতে হয়। ধর্ম, মানবতাবোধ, ন্যায়বোধ নৈতিক অধিকারের উৎস।
২. আইনগত অধিকার (Legal rights): রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও বলবৎকৃত অধিকারকে আইনগত অধিকার বলা হয়। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য প্রায় সকল দেশেই এ ধরনের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। আইনগত অধিকারসমূহ ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান রয়েছে। মানুষের চলাফেরার অধিকার, শিক্ষা লাভের অধিকার প্রভৃতি আইনগত অধিকার। আইনগত অধিকার আবার কয়েক রকমের রয়েছে। নিম্নে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হলো:
(ক) সামাজিক অধিকার (Social rights): রাষ্ট্রে বসবাসকারী ব্যক্তির গুণাবলির বিকাশ এবং সুসভ্য-স্বাধীন সামাজিক জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় অধিকারসমূহকে সামাজিক অধিকার বলে। সম্পত্তির অধিকার, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, বাসস্থানের অধিকার প্রভৃতি সামাজিক অধিকার। বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের সর্বত্র সামাজিক অধিকার ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।
(খ) রাজনৈতিক অধিকার (Political rights): রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া বা শাসন নির্বাচনের অংশ হিসেবে জনগণ যেসব অধিকার ভোগ করে তাকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। যেমন- ভোট প্রদানের অধিকার, নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার অধিকার, রাজনৈতিক সংগঠন গড়ার অধিকার, সরকারি চাকরি লাভের অধিকার ইত্যাদি। বাংলাদেশ সংবিধানে নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার সংরক্ষিত করা হয়েছে।
(গ) অর্থনৈতিক অধিকার (Economic rights): অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন বা মৌলিক চাহিদাসমূহ পূরণে রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধাকে অর্থনৈতিক অধিকার বলা হয়। যেমন- কর্মের অধিকার, ন্যায্য মজুরি লাভের অধিকার, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার ইত্যাদি। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৪ ও ৪২ নং অনুচ্ছেদে এ অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।
(ঘ) ধর্মীয় অধিকার (Religious rights): নাগরিকগণ স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন, লালন ও গ্রহণ করার অধিকারকে ধর্মীয় অধিকার বলা হয়। ধর্ম পালনে কেউ অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকে বাধা বা বাধ্য করতে পারবে না। বাংলাদেশ সংবিধানের ৪১ নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
(ঙ) সাংস্কৃতিক অধিকার (Cultural rights): নাগরিকের নিজ নিজ ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নির্বিঘ্নে চর্চা, লালন ও পরিচর্যার অধিকার হলো সাংস্কৃতিক অধিকার। এ অধিকারের বলে একটি জাতি আরেকটি জাতি থেকে স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। আলাদা সত্তার জাগরণ ঘটে। বাংলাদেশ সংবিধানে সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
( চ) ব্যক্তিগত অধিকার (Personal rights): নাগরিকদের নির্বিঘ্নে জীবনযাপন ও জীবনধারণের অধিকারকে ব্যক্তিগত অধিকার বলা হয়। কেউ কারো জীবনের উপর হুমকি সৃষ্টি করতে পারে না। কারো জীবনের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩২ নং অনুচ্ছেদে এ অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ