- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার
বিশ্বায়নের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশের নাগরিক অধিকারের তুলনা Comparison the Citizen Right of Various Country in the Context of Globalization
বর্তমান যুগ বিশ্বায়নের যুগ। বিশ্বায়ন (Globalization) হলো একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংস্থা বা এজেন্সি বিশ্বজুড়ে নিজেদের মধ্যে নানা প্রকার সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিশ্বায়ন বলতে পুঁজি, অর্থ সম্পদ ও প্রযুক্তির এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অবাধ চলাচলকে বোঝায়। অর্থাৎ বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলের উৎপাদন বা প্রযুক্তির যেকোনো উপাদান অন্য যেকোনো প্রান্তে চলাচলের সুযোগ পাবে। ফলে সকল মানুষের কাছে সকল সুযোগ-সুবিধার দিগন্ত উন্মোচিত হবে। ভৌগোলিক সীমারেখা পেরিয়ে বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হচ্ছে। আর বিশ্বায়নের অর্থনৈতিক রূপ, মুক্তবাজার অর্থনীতি বিশ্বে ক্রমে জোরদার হচ্ছে। বিশ্বায়নের সাথে সমগ্র বিশ্বের নানাবিধ বিষয় যেমন- অর্থনীতি, বাণিজ্য, যোগাযোগ, রপ্তানি, শিল্পায়ন ইত্যাদি নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।
বিশ্লেষক মহল বিশ্বায়নের ধারণাকে অর্থনীতির সাথে সম্পর্কযুক্ত মনে করলেও এই প্রক্রিয়াটি নাগরিক অধিকারের সাথেও সম্পর্কিত। কারণ বিশ্বায়ন কোনো সংকীর্ণ ধারণা নয়, বরং এটি একটি বহুমাত্রিক প্রক্রিয়া। বিশ্বায়ন তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশ, বিশ্ব যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন, বিশ্বের সভ্যতা ও জনসমাজে পারস্পরিক নৈকট্য সুদৃঢ় করেছে। আর এসবের ফলে বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। বিশ্ব পরিসরে নাগরিকগণ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দাবিদার। নাগরিকগণ অধিকার উপভোগের ক্ষেত্রে শুধু নিজ রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং বিশ্বায়নের সুবাদে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে।
বিশ্বায়ন মানবজাতির প্রয়োজনেই উদ্ভূত এক ব্যাপক ভিত্তিক প্রক্রিয়া। কালের বিবর্তনে মানুষের রুচিবোধ ও মানসিকতার পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, মানুষের চাহিদাও ব্যাপকতা পেয়েছে বহুলভাবে। আর এসব চাহিদা পূরণ করা রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলের বাইরে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে তা পূরণের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। নাগরিকগণ শুধু নিজ রাষ্ট্রেরই সদস্য নয়; বরং বিশ্বসভারও সদস্য। ফলে বিশ্বায়নের পথ ধরে নাগরিক অধিকার তথা সুযোগ-সুবিধা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্বায়নের যুগে একজন নাগরিক শুধু একটি রাষ্ট্রের নাগরিক নয়, বিশ্বের নাগরিকও বটে। আজ নাগরিক অধিকার নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে না থেকে আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করছে। তবে বিশ্বের এক রাষ্ট্রের নাগরিক একই রকম অধিকার ভোগ করতে পারে না। এর কারণ হলো রাষ্ট্র, সমাজ ও সরকার ব্যবস্থার ভিন্নতা। এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহের নাগরিক অধিকার ভোগের সাথে ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলোর নাগরিকদের অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে মাত্রাগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
বিশ্বায়নের প্রভাবে নাগরিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে। যেমন- বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনে কোনো বাংলাদেশি নারী বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করলে সেই ব্যক্তির নাগরিকত্ব প্রদান না করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে নাগরিকত্ব আইনটি সংশোধন করে ৪ বছর এদেশে অবস্থানের শর্তে সেই ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব প্রদানের বিধান করা হয়। এই আইনটি সংশোধনের ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে।
সম্পত্তি অর্জন, ভোগ ও হস্তান্তরের বিষয়টি প্রায় সব দেশের জনগণের মৌলিক অধিকার হিসেবে গণ্য। বিশ্বের যেকোনো রাষ্ট্রের নাগরিক যেকোনো দেশে বসবাসের পাশাপাশি অনুমোদন সাপেক্ষে সে দেশে সম্পত্তি ক্রয়, ভোগ ও. হস্তান্তর করতে পারবে। যেমন- বাংলাদেশের কোনো নাগরিক অভিবাসনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের পাশাপাশি সম্পত্তি ক্রয়, ভোগ ও হস্তান্তরের অধিকার ভোগ করে। বিশ্বায়নের বদৌলতে এটা সম্ভব হয়েছে।
কর্মের বা পেশা নির্বাচনের অধিকার মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। তবে সব দেশে সমানভাবে এ অধিকার রক্ষিত হয় না। বিশ্বায়ন একজন নাগরিককে যেকোনো রাষ্ট্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশের কয়েক লক্ষ লোক আজ মধ্যপ্রাচ্যসহ আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছে। বর্তমানে নাগরিকদের পরিবার গঠনের অধিকার শুধু মৌলিক অধিকার নয় মানবাধিকারও। বিশ্বায়নের ফলে যেকোনো নাগরিক বিশ্বের যেকোনো রাষ্ট্রে বিধি মোতাবেক পরিবার গঠন করতে পারে।
বাংলাদেশের অনেক নাগরিক ব্রিটেন, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার গঠনের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছে। বিশ্বায়নের বদৌলতে গণতান্ত্রিক বিশ্বের জনগণ আজ জানতে পারছে গ্রেট ব্রিটেনের জনগণ যেভাবে 'আইনের শাসন', 'হেবিয়াস কর্পাস' আইনের সুরক্ষা ভোগ করছে, তা অনেক দেশেই নেই। ব্রিটিশ জনগণ রাষ্ট্রীয় জীবনে 'জেন্ডার বৈষম্যের' শিকার হয় না। কানাডায় নারী ও পুরুষের সমান অধিকার। সমতাকে আইন দ্বারা স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সকল প্রকার 'জেন্ডার বৈষম্যের' অবসান ঘটানো হয়েছে। অনেক দেশেই এ ধরনের অধিকার নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ আত্মরক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারে। অনেক দেশেই তা স্বীকৃত নয়। বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদ থেকে ৪৪ নম্বর অনুচ্ছেদ পর্যন্ত নাগরিকের বিভিন্ন অধিকারের উল্লেখ করা হয়েছে। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারসমূহ মেনে চলার চেষ্টা করছে।
বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থায় জনগণের মৌলিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে তারতম্য রয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে জনগণ মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভোট দেওয়ার অধিকারসহ যেসব মৌলিক অধিকার ভোগ করে সমাজতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তা অনেকটা সংকুচিত। তবে বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের সব মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকারের ধারণা বিশ্বজনীনরূপ লাভ করেছে। দাতা সংস্থা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ মানবাধিকারের ঘোষণা, মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ক্রমবর্ধমান চাপ এবং বিশ্বায়নের কল্যাণে বিশ্ব রাজনীতি ও বিভিন্ন রাষ্ট্রে অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে বিরাজমান বৈষম্য হ্রাস পাচ্ছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকার বিশ্বায়নের বিশ্বব্যাপী অব্যাহত চাপের মুখে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করছে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ