• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার

বিভিন্ন ধরনের অধিকার Different Types of Rights

সামাজিক অধিকার (Social rights)

যেসব অধিকার সমাজবদ্ধ মানুষের সভ্য জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য তাকে সামাজিক অধিকার বলে। একজন নাগরিক বহুবিধ সামাজিক অধিকার ভোগ করে থাকে। সামাজিক অধিকার বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

সামাজিক অধিকারগুলো নিম্নে ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো:

বিভিন্ন ধরনের অধিকার

নিম্নে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অধিকার সম্পর্কে সবিস্তারে আলোকপাত করা হলো:

(ক) জীবনধারণের অধিকার মানুষের মৌলিক ও সামাজিক অধিকারগুলোর মধ্যে জীবনধারণের অধিকার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্র কর্তৃক দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও আত্মরক্ষার অধিকারই হলো জীবনধারণের অধিকার। এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার সনদে ঘোষণা করা হয়েছে- "Every human being has the inherent right to life. This right shall be protected by law. No one shall be arbitrary deprived of his life."

(খ) স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার নাগরিকগণ যেসব সামাজিক অধিকার ভোগের সুযোগ পায় তার মধ্যে অন্যতম হলো স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অধিকার। রাষ্ট্রের সকল নাগরিক অবাধে (আইন মোতাবেক) চলাফেরা করতে পারবে। আর রাষ্ট্র নাগরিকের এ চলাফেরার সুযোগ সৃষ্টি করবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবিধানের মাধ্যমে এই অধিকার নিশ্চিত করা হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৬ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, সকল নাগরিক বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধে চলাফেরা করতে পারবে, যেকোনো স্থানে বসবাস করতে পারবে এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করতে পারবে। তবে জনস্বার্থে আইনের দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে।

(গ) মতামত প্রকাশের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিত্বের যৌক্তিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন বাক্স্বাধীনতা তথা স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার। পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক রাষ্ট্রেই (বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে) নাগরিকদের বাক্‌স্বাধীনতা তথা মতামত প্রকাশের অধিকার স্বীকৃত। সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করা যাবে।

(ঘ) ধর্ম পালনের অধিকার: একজন নাগরিক যেকোনো ধর্ম পালন, চর্চা ও প্রচারের অধিকার রাখে। রাষ্ট্র জোরপূর্বক কোনো কোনো ধর্মকে চাপিয়ে দিতে পারে না কিংবা কোনো ধর্ম পালনে কাউকে বাধ্য করতে পারে না। তবে নিজ ধর্ম পালনের মাধ্যমে কেউ অন্য ধর্মের প্রতি বিদ্রূপ করা যা অন্য ধর্মের অনুসারীদের হেয় করা বা কুৎসা রটাতে পারবে না। বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১(১) নং অনুচ্ছেদে এ মর্মে উল্লেখ আছে, প্রত্যেক নাগরিকের যেকোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে। প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রয়েছে।

(ঙ) সম্পত্তির অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তির মালিকানা অধিকার রয়েছে। যেকোনো নাগরিক যে কোনো স্থানে সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে। বাংলাদেশের নাগরিকদেরও সম্পত্তির অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত।

(চ) চুক্তির অধিকার। সম্পত্তির বিনিময়ে ব্যবসায়-বাণিজ্যের জন্য যেকোনো ব্যক্তি অপর কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে আইনানুসারে চুক্তি করতে পারবে। তবে দুর্নীতি, কালোবাজারি ইত্যাদি বেআইনি চুক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।

(ছ) সংঘবদ্ধ হওয়ার অধিকার মানুষ সংঘবদ্ধ জীব। সংঘবদ্ধভাবে মিলেমিশে বসবাস করা মানুষের সহজাত প্রবণতা। সামাজিক নানা প্রয়োজনে মানুষকে সংঘবদ্ধ হতে হয়। প্রায় সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই সংঘ গঠন, সভা-সমিতি করার অধিকার স্বীকৃত। ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য এ অধিকার অত্যন্ত প্রয়োজন।

(জ) শিক্ষার অধিকার: শিক্ষা মানুষের জন্মগত অধিকার। রাষ্ট্রের নাগরিকগণ যেসব পৌর বা সামাজিক অধিকার ভোগ করে তন্মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষার অধিকার। শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। এজন্য শিক্ষা লাভের সুযোগ সবার জন্য সমানভাবে থাকা বাঞ্ছনীয়। শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলির বিকাশ ঘটে, ব্যক্তির আত্মোপলব্ধি সম্ভব হয়।

(ঝ) আইনের দৃষ্টিতে সমানাধিকার: অধিকার সবার জন্য সমান হওয়া বাঞ্ছনীয়। আইনের দৃষ্টিতে সমানাধিকার নাগরিকের একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক অধিকার। আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। ধনী-গরিব, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকার ভোগের অধিকারী। কেননা, একমাত্র আইনের মাধ্যমেই সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা যেতে পারে।

(ঞ) সংবাদপত্রের অধিকার। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে মুদ্রণযন্ত্র তথা সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে অন্যতম সামাজিক অধিকার হিসেবে গণ্য করা হয়। সংবাদপত্র জনমত গঠন ও প্রকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনমত প্রকাশ পায়। সংবাদপত্র মানুষের চিন্তা, বিবেক ও মতামতকে জাতির সামনে তুলে ধরে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে একটি দেশের বাস্তব চিত্র ফুটে ওঠে। বাংলাদেশেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সাংবিধানিকভাবেই স্বীকৃত।

(ট) পরিবার গঠনের অধিকার নাগরিকদের সামাজিক অধিকারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অধিকার হলো পরিবার গঠনের অধিকার। সমাজ জীবনের মূল ভিত্তি হলো পরিবার। মানুষ প্রথমে পরিবারে জন্মগ্রহণ করে এবং পরিবারেই লালিত-পালিত হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল-এর মতে, "সমাজ জীবনের মূলভিত্তি হলো পারিবারিক জীবন।" সুতরাং প্রত্যেক নাগরিক পরিবার গঠনের অধিকার ভোগের সুযোগ পাবে।

রাজনৈতিক অধিকার (Political rights)

রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের জন্য নাগরিকদের যে সকল অধিকার প্রদান করা হয় তাকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকারগুলো নিম্নরূপ:

(ক) ভোট প্রদানের অধিকার রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ অধিকার হলো ভোট প্রদানের অধিকার। রাষ্ট্রের একজন প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছর) নাগরিক যেকোনো স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোট প্রদানের অধিকার ভোগ করে। প্রত্যেক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে থাকে। নির্বাচনে ভোট প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকগণ পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।

(খ) নির্বাচিত হওয়ার অধিকার ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকারের ন্যায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হওয়ার অধিকারও নাগরিকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক-অধিকার। একজন নাগরিক যোগ্যতা সাপেক্ষে যে কোনো নির্বাচনে প্রার্থী 'হতে পারবে। বাংলাদেশের নাগরিকগণও ২৫ বছর বয়স্ক হলে এবং সুস্থ মস্তিষ্ক ও জ্ঞানের অধিকারী হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারে।

(গ ) সরকারি চাকরি লাভের অধিকার সরকারি কাজে অংশগ্রহণের একটি সহজ উপায় হলো সরকারি চাকরি গ্রহণ। যেকোনো যোগ্য নাগরিক সরকারি চাকরি লাভের সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের নাগরিকগণও সাংবিধানিক স্বীকৃতি অনুযায়ী এ অধিকার ভোগ করে। যেমন- সংবিধানের ২৯ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এক্ষেত্রে গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ বা জন্মস্থানের কারণে কোনোরূপ বৈষম্য করা যাবে না। অর্থাৎ যোগ্যতা সাপেক্ষে সরকারি চাকরি লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ থাকা বাঞ্ছনীয়।

(ঘ) সমালোচনা করার অধিকার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে চিন্তা ও মতামত প্রকাশের অধিকার স্বীকৃত হলে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করার অধিকারও স্বীকৃত হয়। যেকোনো ব্যক্তি স্বাধীনভাবে গঠনমূলক উপায়ে সরকারের যেকোনো সিদ্ধান্ত, নীতি বা পদক্ষেপের ব্যাপারে সমালোচনা করার অধিকারও স্বীকৃত।

(ঙ) বিদেশে নিরাপত্তা লাভের অধিকার দেশের অভ্যন্তরে প্রত্যেক নাগরিকের রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার আছে। রাষ্ট্র প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে সচেষ্ট থাকে। স্বদেশের ন্যায় বিদেশে থাকাকালীন সময়েও নাগরিকের জীবন সম্পত্তির নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব নিজ রাষ্ট্রের। অর্থাৎ বিদেশে কোনো নাগরিক যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে সেক্ষেত্রে উক্ত নাগরিকের নিজের রাষ্ট্র সে ব্যাপারে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবে।

(চ) আবেদন করার অধিকার সরকারের বিরুদ্ধে যেকোনো নাগরিকের অভিযোগ থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে নাগরিকদের সরকারের কাছে আবেদন করার অধিকার থাকা বাঞ্ছনীয়। এ পদ্ধতিতে নাগরিকদের অভাব অভিযোগের প্রতিকার সম্ভব। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের এই অধিকার স্বীকৃত।

অর্থনৈতিক অধিকার (Economic rights)

মানুষ রাষ্ট্র প্রদত্ত যেসব অধিকার ভোগ করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিভিন্ন অর্থনৈতিক অধিকার। অর্থনৈতিক অধিকার ছাড়া সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার পূর্ণতা পায় না। এজন্য নাগরিক জীবনে অর্থনৈতিক অধিকারের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যধিক। অধ্যাপক লাঙ্কি (Prof. Laski) বলেন, "প্রাত্যহিক অন্ন সংস্থানের ব্যাপারে যুক্তিসঙ্গত অর্থ খুঁজে পাওয়ার সুযোগ-সুবিধাকে অর্থনৈতিক অধিকার বলে।" নিম্নে নাগরিকের অর্থনৈতিক অধিকারগুলো বর্ণনা করা হলো:

(ক) কর্মের অধিকার অর্থনৈতিক অধিকারগুলোর মধ্যে কর্মের অধিকার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ কর্মের দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করে। কর্মের অধিকার বলতে বোঝায় যোগ্যতা, দক্ষতা ও সক্ষমতা অনুযায়ী যেকোনো ব্যক্তির কর্মে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ। এ অধিকারটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রত্যেক নাগরিকের কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। কারণ কর্মের সুযোগের অভাবে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ব্যাহত হবে।

(খ) উপযুক্ত পারিশ্রমিকের অধিকার কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভের অধিকারী। কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী যথাযথ মজুরি প্রদান করা না হলে কর্মের অধিকার অর্থহীন হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক লাস্কি (Prof. Laski) বলেন, "A man has not only the right to work, he has the right also to be paid and adequate wage for his labour." সুতরাং জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান বজায় রাখার মতো পারিশ্রমিক প্রদান করা শ্রেয়।

(গ) অবকাশ যাপনের অধিকার নাগরিক জীবনে অবকাশের গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য বিশেষ করে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন যাপনের জন্য অবকাশ অত্যাবশ্যক। গ্রিক দার্শনিক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল (Aristotle)-এর মতানুসারে, "Leisure is essential for happiness" অর্থাৎ, "সুখী-সুন্দর জীবন যাপনের জন্য অবসর অপরিহার্য।" তাছাড়া জীবনের একঘেয়েমি দূর করে বৈচিত্র্য আনার জন্যও অবসর প্রয়োজন।

(ঘ) শ্রমিক সংঘ গঠনের অধিকার: শ্রমিক সংঘ গঠন নাগরিকের একটি অন্যতম অর্থনৈতিক অধিকার। শ্রমিক-কর্মচারীদের অর্থনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য শ্রমিক সংঘের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এছাড়া শ্রমিক অধিকার আদায়, শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে শ্রমিক সংঘ গড়ে ওঠে।

(ঙ) বার্ধক্য ও অক্ষমতায় সাহায্য পাওয়ার অধিকার কর্মচঞ্চল মানুষ যদি দুর্ঘটনার শিকার হয়, অন্য কোনো কারণে কর্মে অক্ষম হয়ে পড়ে কিংবা বার্ধক্যে উপনীত হয় তখন আর জীবিকা অর্জনের ক্ষমতা থাকে না। এরূপ অবস্থায় রাষ্ট্রের উচিত তাদের ভরণ-পোষণের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করা। কর্মক্ষম অবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তি সামর্থ্য অনুযায়ী শ্রম দেয়। কিন্তু এক সময়ে সে বার্ধক্যের কারণে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে কিংবা কর্মরত অবস্থায় কেউ যদি দুর্ঘটনার কারণে পঙ্গু বা অক্ষম হয়ে পড়ে তবে এরূপ অসহায় অবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়ানো রাষ্ট্রের কর্তব্য।

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অধিকার নাগরিকের ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত। রাষ্ট্র নাগরিকের অধিকার সৃষ্টি ও সংরক্ষণের মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথকে সুগম করে।

"প্রত্যেক রাষ্ট্রই এর প্রদত্ত অধিকারের দ্বারা পরিচিতি লাভ করে"- ব্যাখ্যা ("Every state is known by the rights that it maintains"- Explain)

অধ্যাপক লাস্কি (Prof. Laski) বলেন, "রাষ্ট্র অধিকার প্রদানের মাধ্যমে মানুষের আত্মবিকাশে সাহায্য করে।" রাষ্ট্র মানুষের জন্য অধিকার সৃষ্টি করে এবং সেগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে। আর এর মাধ্যমেই রাষ্ট্রের ধরন বা প্রকৃতি ফুটে ওঠে। এজন্য বলা হয়, "Every state is known by the rights that it maintains." অর্থাৎ, প্রত্যেক রাষ্ট্রই এর প্রদত্ত অধিকারসমূহের দ্বারা পরিচিতি লাভ করে। উক্তিটির ব্যাখ্যা নিম্নে দেওয়া হলো:

মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। সংঘবদ্ধভাবে বসবাসের মাধ্যমে মানুষ সমাজ বা রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার উপভোগ করে থাকে। কারণ সমাজজীবনের বাইরে মানুষ অধিকার উপভোগের কল্পনাও করতে পারে না। রাষ্ট্রের অধীনে অধিকার উপভোগ সহজতর হয়। তবে রাষ্ট্রের ধরন ও প্রকৃতিভেদে অধিকারের উপভোগও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। অর্থাৎ বিভিন্ন শাসনব্যবস্থায় অধিকার বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন-

প্রথমত, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নাগরিকগণ রাষ্ট্র প্রদত্ত সকল অধিকার উপভোগের সুযোগ লাভ করে। অর্থাৎ নাগরিকগণ স্বাধীনভাবে জীবনযাপন, চলাফেরা, স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ ও দল গঠন করতে পারে। এরূপ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ থাকে। সরকার এ অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।

দ্বিতীয়ত, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ব্যক্তিস্বাধীনতা স্বীকৃত হয় না। সুতরাং বাক্ স্বাধীনতা, স্বাধীনভাবে চলাফেরা, সংগঠিত হওয়া বা সংগঠন করার স্বাধীনতা, সরকারের সমালোচনা ইত্যাদি অধিকার নাগরিকগণ উপভোগের সুযোগ পায় না। কারণ সমাজতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে সবকিছু পরিচালিত হয়। এখানে ব্যক্তিমালিকানার পরিবর্তে সামাজিক মালিকানা স্বীকৃত হয়।
তৃতীয়ত, অতি সাম্প্রতিককালে কোনো কোনো রাষ্ট্রে সামরিক বাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার অর্থই গণতান্ত্রিক আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করা। কারণ সেখানে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের কোনো সুযোগ থাকে না।

সুতরাং কোন রাষ্ট্র কী পরিমাণ অধিকার উপভোগের সুযোগ প্রদান করে তার উপর উক্ত রাষ্ট্রের পরিচিতি নির্ভর করে। যেমন-আমাদের বাংলাদেশ একটি অন্যতম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে নাগরিকদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অধিকার স্বীকৃত। কিন্তু পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র মায়ানমারে সামরিক শাসন প্রচলিত বিধায় সেখানে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির কোনো অস্তিত্ব নেই।

উল্লিখিত আলোচনার নিরিখে বলা যায় যে, কোনো রাষ্ট্রের পরিচিতি নির্ভর করে উক্ত রাষ্ট্রের নাগরিকদের অধিকারের নিশ্চয়তার উপর। অর্থাৎ কোনো রাষ্ট্র সেই রাষ্ট্রের নাগরিকদের কী পরিমাণ অধিকার উপভোগের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে তার উপর ভিত্তি করেই উক্ত রাষ্ট্রের পরিচয় ফুটে ওঠে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ