• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার

নাগরিক কর্তব্যসমূহ (Duties of citizen)

নিম্নে নাগরিকদের কর্তব্য সম্পর্কে বিশদভাবে আলোকপাত করা হলো:

১. রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য (Allegiance to the state): একজন নাগরিকের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো নিজ রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা। রাষ্ট্রের ভিত্তিই হলো আনুগত্য। আনুগত্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দেশপ্রেম মূর্ত হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত ও একাত্ম হয়ে নাগরিক রাষ্ট্রের স্বার্থকে নিজের স্বার্থ বলে বিবেচনা করে। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব তথা অখণ্ডতা রক্ষার জন্য যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকার মধ্যেই আনুগত্য নিহিত। অর্থাৎ রাষ্ট্র যেমন আমাদের বিভিন্ন অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করে তেমনি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে আমাদের যেকোনো ত্যাগ স্বীকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে।

২. আইন মেনে চলা (Obedience to law): সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য আইন অপরিহার্য। আইন ছাড়া রাষ্ট্র চলতে পারে না। আইনবিহীন রাষ্ট্র নৈরাজ্যের নামান্তর। তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন নাগরিকের পবিত্র ও প্রধান দায়িত্ব। আইন অমান্য করলে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়।

৩. ভোটাধিকার প্রয়োগ করা (Right to exercise of franchise): ভোটাধিকার নাগরিকের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক অধিকার। এটা তার পবিত্র আমানত। এ পবিত্র আমানতের যথার্থ এবং সততার সাথে ব্যবহার করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য। যেকোনো নির্বাচনে সততার সাথে যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে ভোট প্রদান করা নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। কেননা দক্ষ ও কল্যাণমূলক সরকার গঠনে যোগ্য ব্যক্তির কোনো বিকল্প নেই।

৪. নিয়মিত কর প্রদান করা (Regular tax imparting): রাষ্ট্রের শাসনকার্য ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়। সরকার বিভিন্ন খাত থেকে এ অর্থের যোগান দেয়। একজন নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য হলো রাষ্ট্র নির্ধারিত হারে কর প্রদান করা। নাগরিকের প্রদেয় করের অর্থে রাষ্ট্রের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এছাড়াও সরকার মাঝে মাঝে বিভিন্ন খাতে যে কর ধার্য করে তাও নিয়মিত পরিশোধ করা নাগরিকের কর্তব্য।

৫. রাষ্ট্রের সেবা করা (Public service): রাষ্ট্রের সেবা করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যুদ্ধকালীন, দুর্যোগময় মূহূর্ত বা জরুরি সময়ে রাষ্ট্রের আহ্বানে সাড়া দেওয়া এবং রাষ্ট্র প্রদত্ত দায়িত্ব পালন, রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রকে সেবা প্রদান নাগরিকের কর্তব্য। এছাড়া স্থানীয় সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ, রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সাক্ষ্য দেওয়া অবৈতনিকভাবে জুরি বা বিচারকের দায়িত্ব পালন নাগরিকের কর্তব্য।

৬. পরিবারের প্রতি দায়িত্ব (Duty towards family): প্রতিটি নাগরিকের নিজ পরিবারের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সন্তান-সন্ততির লালন-পালন, শিক্ষাদান করা পিতামাতার কর্তব্য। অন্যদিকে বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবা-শুশ্রূষা করা, দেখাশুনা করাও সন্তানের কর্তব্য।

৭. সন্তানসন্ততির সুশিক্ষা দান (Proper education to the children): শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষা জাতীয় উন্নয়নের চাবিকাঠি। বলা হয়, যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। যেমন- নেপোলিয়ন বলতেন, "Give me a good mother, I will give a good nation." শিক্ষিত জাতি তার অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন। শিক্ষিত জাতির ভবিষ্যৎ বংশধর যোগ্য নেতৃত্ব লাভ করতে পারে।

৮. সমাজের প্রতি কর্তব্য (Duties towards society): সমাজের প্রতিও প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য রয়েছে। মানুষ সমাজে জন্মগ্রহণ করে, সমাজে প্রতিপালিত হয় এবং সমাজেই তার জীবনাবসান ঘটে। সমাজকে সু-শৃঙ্খলভাবে গড়ে তোলা, সামাজিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বোধ অক্ষুণ্ণ রাখা, পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে সমাজের প্রতি সকল নাগরিকের কর্তব্য পালন করা উচিত।

৯. সরকারি কার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা (Properly perform of official duties): নাগরিকের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কর্তব্য হলো সরকারি কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা। সরকার গঠিত হয় জনগণের দ্বারা এবং জনগণের চরিত্রবল ও সৎ কাজের দ্বারা সরকার দক্ষতা ও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে। এজন্য সকলের উচিত অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে সরকার ও দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা।

১০. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অবদান (Contribution towards international affairs): বর্তমান যুগ আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সহাবস্থানের যুগ। রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে বহুপাক্ষিক সম্পর্ক স্থাপন দূরের মানুষকে নিকটে এনেছে। বিশ্বের একপ্রান্তে কোনো ঘটনা ঘটলে অপর প্রান্তে তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার মহান ব্রত নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ্ব মানবের সংস্থা জাতিসংঘ। জাতিসংঘের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি জাতিসংঘের গৃহীত বিভিন্ন মানব উন্নয়ন ও কল্যাণমূলক কর্মসূচিকে সফল করে তুলতে হবে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ