• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

নাগরিক অধিকার ও কর্তব্য এবং মানবাধিকার

মানবাধিকারের ধারণা Concept of Human Rights

মানবাধিকারের ধারণা অত্যন্ত সুপ্রাচীন। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এই ধারণা বেশ গুরুত্ব লাভ করেছে। বর্তমানে মানবাধিকার' বিশ্বমানবতা ও সভ্যসমাজ কর্তৃক স্বীকৃত। মৌলিক অধিকারই মানবাধিকারের ভিত্তি। তবে মানবাধিকার মৌলিক অধিকার থেকে লাভ করলেও এর বিস্তৃতি বিশ্বব্যাপী। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ কর্তৃক মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত ও ঘোষিত হয়। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ওরেন কেসিনো মানবাধিকারসমূহ প্রণয়ন করেন। এদিকে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণায় বলা হয়, অধিকারের প্রশ্নে মানুষ সর্বদা স্বাধীন ও সাম্য অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে এবং সবসময় সেভাবেই থাকতে চায়। (Men are born and always continue free and equal in respect to their rights.)। জাতিসংঘের ঐ ঘোষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, মানবাধিকার ভোগের ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব যে ধরনের নাগরিক হোক না কেন, রাজনৈতিক মতামত-পদমর্যাদাই হোক না কেন, যে দেশের নাগরিক হোক না কেন, অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য বা বৈষম্য করা যাবে না। জাতিসংঘের মানবাধিকারের এ সর্বজনীন ঘোষণাই মানুষের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগের লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি বলিষ্ঠ ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

ব্যক্তি সমাজ জীবনে, রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেসব সুযোগ-সুবিধার দাবিদার হয় এবং যা ব্যতীত তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে না তাই মানবাধিকার।

অধ্যাপক আপাদোরিয়া (Prof. Appadoria) বলেন, "মানবাধিকার প্রকৃতির শাশ্বত ও সর্বজনীন রূপ যা মানবিকতার পূর্ণ বিকাশের জন্য প্রয়োজন।"

এস. পি. হান্টিংটন (S. P. Hungtington) বলেন, "মানবাধিকার মানুষের সহজাত, সমান সুযোগ সৃষ্টি করে এবং ফলে মানুষের মানবিকতা পরিপূর্ণতা লাভ করে।" ("The human right are interest, producing equal opportunity a perfect one.")

সুযোগ-সুবিধা জাতিসংঘের মতে, "মানবজীবনের জন্য যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগের দাবি করা হয়, যা ছাড়া ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে না, তাই মানবাধিকার।"

Encyclopedia Britannica - তে মানবাধিকারকে প্রাকৃতিক আইনের আওতায় প্রাপ্য মানুষের অধিকার হিসেবে অভিহিত করে। বলা হয়েছে- "Rights thought to belong to the individual under natural law as a consequence of his being human." অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে মানব পরিবারের সকল সদস্যদের জন্য সহজাত, সর্বজনীন ও অহস্তান্তরযোগ্য কিছু অধিকারই হলো মানবাধিকার।

অবাধ ও মুক্তচিন্তা, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ, প্রতিবাদের অধিকার মানবাধিকারের মূলকথা। মানবাধিকার একই সাথে জন্মগত ও প্রাকৃতিক অধিকার। অর্থাৎ মানুষ হিসেবে ব্যক্তি যে সম্মান, শ্রদ্ধা, অধিকার ও নিরাপত্তা লাভ করে তাই মানবাধিকার। বস্তুত বিশ্বমানবের সংগঠন জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত অধিকারসমূহ মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। এখানে উল্লেখ্য যে, নাগরিক অধিকার বা মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রীয় পরিমণ্ডলে সীমিত। আর মানবাধিকার সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব পরিমণ্ডলে বিস্তৃত।

মানবাধিকারের ধারণা বিশ্লেষণ করলে এর কতকগুলো বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। নিম্নে সেগুলো লিপিবদ্ধ করা হলো:

১. মানবাধিকার মানুষের জন্মগত ও প্রাকৃতিক অধিকার। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য এ অধিকার অপরিহার্য।

২. মানবাধিকার ব্যক্তির একান্ত ব্যক্তিগত অধিকার। এ অধিকার হস্তান্তরযোগ্য নয়।

৩. মানবাধিকার সর্বজনীন।

৪. মানবাধিকার অলঙ্ঘনীয়।

৫. মানবাধিকার সংরক্ষণের দায়িত্ব সমাজ এবং রাষ্ট্রের।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ