- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- ফরাসি বিপ্লব
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ফরাসি বিপ্লব
প্রাক-বিপ্লব ফ্রান্স
১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই ফ্রান্সের জাতীয় সভার (স্টেটস জেনারেলের) অধিবেশন আহ্বান করার ফলে ফ্রান্সে ফরাসি বিপ্লব দেখা দেয় বলে মনে করা হয়। ফরাসি বিপ্লব কেবল ফ্রান্সের ভৌগোলিক সীমার মধ্যে আবদ্ধ থাকেনি, এ বিপ্লব সমগ্র ইউরোপের রূপান্তর ঘটায়। ঐতিহাসিক রবার্ট পামারের মৃতানুসারে ফরাসি বিপ্লবকে ইউরোপীয় বিপ্লর বলাই সংগত।। ফ্রান্সে যা ঘটে তাকে ইউরোপীয় বিপ্লবের ফরাসি অধ্যায় বলা যেতে পারে। ফরাসি বিপ্লব কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। বরং এই বিপ্লবকে ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা প্রস্তুত ঘটনা বলা যায়। আসলে ফরাসি বিপ্লব ছিল ইউরোপীয় ক্ষয়প্রাপ্ত সমাজব্যবস্থার পতনের স্বাক্ষর। এই পতন প্রথমে ফ্রান্সে দেখা দেয়, পরে ইউরোপেও তা প্রসারিত হয়। ফরাসি বিপ্লবের সূচনা অষ্টাদশ শতকের ইউরোপের অবস্থার মধ্যেই নিহিত ছিল।
সামাজিক অবস্থা
ফরাসি দেশের সমাজব্যবস্থা বিশেষ অধিকার ও অসাম্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এ জন্য বলা হয়ে থাকে যে, "The Revolution of 1789 was much less rebellion against despotism than a rebellion against in equality." (১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দের বিপ্লব ছিল স্বৈরাচারী শাসন অপেক্ষা অধিকতর বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ)। অষ্টাদশ শতকে ইউরোপীয় সমাজ বিশেষ করে ফ্রান্সে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত-ছিল, যথা-যাজক শ্রেণি, অভিজাত শ্রেণি এবং সাধারণ শ্রেণি। প্রতিটি শ্রেণিকে এস্টেট (Estate) বলা হতো। যাজক ও অভিজাত শ্রেণি ছিল যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় এস্টেট। সাধারণ লোকেরা ছিল Third Estate বা তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু ভূমিকেই সম্পদের প্রধান উৎস বলে মনে করা হতো, সেহেতু ভূমির মালিকানাই সামাজিক প্রতিপত্তি লাভের চাবিকাঠি ছিল।
যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় ভূমির মালিকানা ও নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত। যাজক শ্রেণি দুই শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। যথা- উচ্চতর যাজক (Upper Clergy), অধস্তন যাজক (Lower Clergy)। ফ্রান্সে যাজকের সংখ্যা ছিল প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার। যাজকরা প্রার্থনা ও উপাসনা ছাড়া শিক্ষাদান, দরিদ্রসেবা, জন্ম-মৃত্যুর হিসাব রাখা প্রভৃতি কাজের দায়িত্ব বহন করতেন। গির্জার উচ্চ যাজক যথা- বিশপ শ্রেণি ছিল সাধারণত অভিজাত পরিবারের লোক। গির্জার জমিদারির আয়, গির্জার বিভিন্ন উপস্বত্ব তারা ভোগ করত। সমাজে তাদের দারুণ প্রতিপত্তি ছিল। উচ্চ যাজকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং শাসনকার্যে অংশ নিতেন। ফরাসি মন্ত্রী নেকারের মতে, ফরাসি গির্জার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল আনুমানিক ১৩ কোটি লিভর (ফরাসি পাউন্ড)।' কিন্তু তারা আধ্যাত্মিক কোনো দায়িত্বই পালন করতেন না।
অভিজাত শ্রেণি ছিল ইউরোপের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাবান ও সুবিধাভোগী শ্রেণি। ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে অভিজাতদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার। দেশের জনসংখ্যার ১২ শতাংশ ছিল অভিজাত। কিন্তু সংখ্যায় কম হলেও এরা সমাজের সর্বাধিক প্রভাবশালী ছিল। মধ্যযুগে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভবের ফলে অভিজাত শ্রেণির উদ্ভব হয়। অভিজাতরা ভূমি ও কৃষকদের উপর বহু অধিকার ভোগ করত। এরা বংশানুক্রমিকভাবে ভূমির উপর অধিকার ভোগ করত। অভিজাত শ্রেণি সরকারকে কর দেওয়ার ব্যাপারে বহু ছাড় ও সুবিধা ভোগ করত।
অভিজাতরা নানা প্রকার সামন্ত কর পেত। ম্যানর প্রথা বা খামারপ্রথার ফলে অভিজাতরা ম্যানর থেকে নানাভাবে অর্থ পেত। এছাড়া তারা রাজার সভাসদ, সেনাপতি, উচ্চ কর্মচারী হিসেবে কাজ করার একচেটিয়া অধিকার ভোগ করত। এরা যুদ্ধবিগ্রহ, শাসনকার্য পরিচালনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে রাজার সহায়তা করত। মোটকথা, অষ্টাদশ শতক ছিল ইউরোপে অভিজাত বা সামন্ত শ্রেণির কর্তৃত্বের যুগ।
তৃতীয় শ্রেণি বা Third Estate বলতে অভিজাত ও যাজক ছাড়া বাকি সকল লোককে বোঝাত। ধনী বুর্জোয়া যথা- শিল্পপতি, ব্যাংক মালিক প্রমুখের অর্থকৌলীন্য থাকলেও জন্মকৌলীন্যের অভাবে তারা তৃতীয় শ্রেণিভুক্ত ছিল। ফরাসি দেশে ধনী বুর্জোয়াদের নাম ছিল haute bourgeois বা ছুটে বুর্জোয়া। বুদ্ধিজীবী ও চাকরিজীবী সম্প্রদায়, যথা- শিক্ষক, আইনজীবী, সাধারণ কর্মচারী প্রমুখও তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদের মধ্যবিত্ত বা পাতি বুর্জোয়া বলা হতো। এই শ্রেণিও কায়িক শ্রমের দ্বারা জীবিকা অর্জন করত না। তৃতীয় শ্রেণির মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল কৃষকরা। কৃষক শ্রেণি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল, যথা- স্বাধীন কৃষক ও ভূমিদাস। ভূমিদাস শ্রেণি মালিককে বিভিন্ন কর দিত, যাজককে ধর্ম কর দিত, মালিকের জমিতে বেগার খাটত। এরা অত্যন্ত দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাত। তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার কিছুই ছিল না। কৃষক শ্রেণিই ছিল সমাজের সম্পদের উৎপাদনকারী। কিন্তু অভিজাত বুর্জোয়া ও শহরবাসীরা এদের হীন চোখে দেখত। তারা মনে করত যে, কৃষকরা ছিল নিরক্ষর কুৎসিত শ্রেণি। জমি চাষ করতে, কর দিতে ও উচ্চ শ্রেণির সেবা করতে কৃষকরা জন্মগ্রহণ করেছে। কৃষকদের জীবন ছিল শোষিত, করভারে জর্জরিত এবং অভিজাতদের দ্বারা নির্যাতিত। ঐতিহাসিক C. D. Hazen এ প্রসঙ্গে বলেন, এ সমস্ত কর দেওয়ার ফলে কৃষকরা প্রায় অনাহারে থাকত।
অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে মধ্যবিত্ত বা বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। এই শ্রেণির প্রভাব ইউরোপের সকল দেশে সমান ছিল না। সামন্তপ্রথার ফলে ফ্রান্সে অভিজাতদের একচেটিয়া অধিকার ছিল। অভিজাত শ্রেণি জন্মকৌলীন্যের জোরে সবকিছুই ভোগ করত। বুর্জোয়া শ্রেণি অর্থকৌলীন্যে বলীয়ান হলেও সমাজে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল না। পূর্ব ইউরোপে বুর্জোয়াদের সংখ্যা ছিল নামমাত্র। অন্তঃশুল্ক, বৈষম্যমূলক করব্যবস্থা, ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রতি সরকারি উদাসীনতা বুর্জোয়া শ্রেণিকে সামন্ত শাসনের প্রতি বিরূপ করে তোলে। বুর্জোয়ারা ছিল শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী শ্রেণি। এরা এজন্য পুরাতনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা হারায় এবং বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়। ঐতিহাসিক রাইকার ফরাসি বিপ্লবের কারণ সম্পর্কে যথার্থই বলেছেন, ফরাসি বিপ্লব মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের সাম্য লাভের আন্দোলনের ফলেই সৃষ্টি হয়েছিল।
গ্রামে ও শহরে এক শ্রেণির ভূমিহীন দিনমজুর ও শ্রমিক ছিল। এদের বাসগৃহ বা চাষের জমি বলতে কিছুই ছিল না। এরা অপরের জমিতে দিনমজুরি খাটত। শহরে এলে এরা কারখানার কাজ বা গৃহভৃত্যের কাজ করত। অভিজাতরা এই সর্বহারা শ্রমিক শ্রেণিকে সমাজের নিম্নশ্রেণি বলে গণ্য করত। এছাড়া ভিক্ষুক ও উপজীবিকাহীন লোকও এ যুগে দেখা যেত। ফ্রান্সের জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ ছিল উপজীবিকাহীন লোক। বিপ্লবের সময় এরা প্যারিসের জনতার সাথে যোগ দিয়ে ধ্বংসকারী মূর্তি ধারণ করে। নেপোলিয়নের মতে, "ফরাসি বিপ্লব সুবিধা ভোগকারী এবং ক্ষমতালিলু শ্রেণির বিরুদ্ধে একটি সুসংগঠিত জাতীয় গণ-আন্দোলন।" (The french Revolution was a general mass movement of the nation against the Privileged classes.")"
অর্থনৈতিক অবস্থা
অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের অর্থনীতি একটি পরিবর্তনমুখী অবস্থায় উপনীত হয়। মধ্যযুগের শেষ দিক থেকে কৃষির পাশাপাশি শিল্প, বাণিজ্য ও উপনিবেশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। যদিও অষ্টাদশ শতকে কৃষিই ছিল অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি, তবু শিল্প, বাণিজ্য ও মূলধন নিয়মিতভাবে বেড়ে পুরাতন সমাজের চরিত্রে পরিবর্তনের সূচনা করে। অর্থনীতিতে কৃষিরই ছিল অগ্রাধিকার। সমাজে মর্যাদালাভের প্রধান উপায় ছিল ভূসম্পত্তির মালিকানা। এমনকি বণিকরা বাণিজ্যে ভালো অর্থ রোজগার করার পর সে অর্থে জমি কিনে জমির মালিকানাকে তাদের আয় ও সম্মান লাভের পথ মনে করত। বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষাবাদের ব্যবস্থা তেমন ছিল না। দরিদ্র ও নিরক্ষর কৃষকরা এসব বিষয় বুঝত না। লেফেভারের মতে, কৃষকরা বৃষ্টি ও প্রকৃতির দয়ার উপর নির্ভর করে কৃষিকাজ করত। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে কৃষকের দুঃখ-কষ্টের সীমা থাকত না। জমিগুলো পালাক্রমে আবাদ করে এর উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা হতো না।
মার্কান্টাইল মতবাদ বা সংরক্ষণবাদ অনুযায়ী খাদ্যশস্য দেশের বাইরে রপ্তানি করা নিষিদ্ধ ছিল। খাদ্যশস্য রপ্তানি ও অবাধ বিক্রি নিষিদ্ধ থাকায় খাদ্যদ্রব্যের ন্যায্য দাম পাওয়া যেত না। সরকার মনে করত, কৃষকরা উদ্বৃত্ত খাদ্য চালান দিলে দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সংরক্ষণবাদকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। আলোচিত রাজা লর্ড অ্যাক্টনের মতে, "মার্কান্টাইলবাদ ছিল আলোচিত স্বৈরতন্ত্রের অনুরূপ বা অনুপূরক অর্থনৈতিক মতবাদ।" মার্কান্টাইলবাদীরা বিশ্বাস করত যে, পৃথিবীতে সম্পদের পরিমাণ সীমিত। সুতরাং বিদেশি মাল অবাধে আমদানি করলে বা খাদ্যদ্রব্য অবাধে রপ্তানি করলে সম্পদ ক্ষয় পাবে। ফলে অন্যান্য দেশের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চলত না। সেজন্য আমদানি মালের উপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো হতো।
মার্কান্টাইল বা সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে ফিজিওক্র্যাট (Physiocrats) নামক অর্থনীতিবিদরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। অবাধ বাণিজ্যবাদীরা একথা বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, বিশ্বে সম্পদের সীমা নেই। যতই খাদ্য ও শিল্পবস্তুর উৎপাদন বাড়বে ততই সম্পদ বাড়বে। এজন্য তারা শিল্প-বাণিজ্যের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ লোপ এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে অবাধ বাণিজ্যের দাবি জানান। মার্কান্টাইলবাদজনিত সংরক্ষণনীতির ফলে বাণিজ্যমন্দা এবং দারিদ্র্য বাড়ছে, একথা বোঝাতে তারা চেষ্টা করেন। অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে ফিজিওক্র্যাটদের তীব্র সমালোচনার ফলে সংরক্ষণবাদের তীব্রতা কিছুটা কমে যায়। তবু ইউরোপীয় শাসকদের চিন্তা মার্কান্টাইলবাদের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়নি।
ইউরোপের সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলো অষ্টাদশ শতকের উপনিবেশের সঙ্গে বাণিজ্য স্থাপনের চেষ্টা চালায়। ইংল্যান্ড, হল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন এ বিষয়ে কৃতিত্ব দেখায়। ভারত ও উত্তর আমেরিকায় উপনিবেশ দখলের জন্য ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে ১৭৪০-৬৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ যুদ্ধবিগ্রহ দেখা দেয়। ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডে শতকরা ৪০ ভাগ বাণিজ্য উপনিবেশের সাথে চলত। উপনিবেশের সম্পদ। ও দক্ষিণ আমেরিকার সোনা, রুপা আমদানির ফলে ইউরোপের এক শ্রেণির বণিকের হাতে প্রভূত সম্পদ জমা হয়। এরা মূলধনী বা ক্যাপিটালিস্ট (Capitalist) শ্রেণিতে পরিণত হয়। এই শ্রেণি তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারকে সুদে ধার দিত। বাকি অর্থ শিল্পে ও ব্যাংকে লগ্নি করত। এদের মূলধনের সাহায্যে লন্ডনের বেরিং (Baring), আমস্টারডামের হোপ (Hope), ফ্রান্সের সুইস (Swiss) ব্যাংক প্রভৃতি বিখ্যাত ব্যাংক চালু হয়। মোটকথা, অষ্টাদশ শতকে কৃষির কথা বাদ দিলে শিল্প-বাণিজ্যে পরিবর্তনের হাওয়া দেখা যায়। বুর্জোয়া বা মধ্যবিত্ত শ্রেণি ছিল পরিবর্তনের অগ্রদূত। এই পরিবর্তনের চাপে পুরাতন কৃষিকেন্দ্রিক সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতির ধ্বংসের পথ পরিষ্কার হয়। ফরাসি বিপ্লব ছিল তারই প্রকাশ।
রাজনৈতিক অবস্থা
অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সসহ ইউরোপে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র বিদ্যমান ছিল। এ সম্পর্কে সি. ডি. এম. কেটেলবির মন্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। তার মতে, "অষ্টাদশ শতাব্দীর ইউরোপীয় রাষ্ট্রসমূহ গণতান্ত্রিক কিংবা জাতীয়তাবাদী কোনোটাই ছিল না, আসলে সেগুলো ছিল রাজবংশসম্ভূত এবং রাজ্যকে রাজার ব্যক্তিগত কিংবা রাজবংশের সম্পত্তি বলে মনে করা হতো।" রাজাই ছিলেন সর্বেসর্বা। রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধি ও রাজ্য বিস্তারকে জাতির শক্তি ও মর্যাদার চিহ্ন বলে ধরা হতো। রাজা স্বর্গীয় অধিকার নীতি অনুসারে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি দাবি করতেন যে, তার কাজের জন্য তিনি একমাত্র ঈশ্বরের নিকট দায়ী। পার্থিব কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ অনুযায়ী তিনি চলবেন না। এভাবে রাজার স্বর্গীয় অধিকার তত্ত্ব মধ্যযুগের শেষ দিকে অষ্টাদশ শতক পর্যন্ত ইউরোপের রাজনৈতিক চিন্তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। এ মতবাদের আশ্রয় নিয়ে রাজারা যারপরনাই স্বৈরাচারী হন। ফ্রাস্ত্রের বুরবোঁ রাজবংশ ছিল রাজকীয় স্বৈরাচারী ক্ষমতার প্রকৃষ্ট নিদর্শন। ফরাসি রাজা চতুর্দশ লুই ঘোষণা করেন যে, 'আমিই রাষ্ট্র'। রাজশক্তিগুলো বংশানুক্রমিকভাবে শাসন করত। ইউরোপের জনসাধারণের বা প্রজাদের স্বাধীনতা বলে কিছুই ছিল না। অধিকাংশ দেশের শাসনব্যবস্থা ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত ও অত্যাচারী। জনসাধারণের ব্যক্তিস্বাধীনতা বা মত প্রকাশের অধিকার ছিল না। রাজা, অভিজাত ও ধর্মযাজকরা একযোগে জনসাধারণকে শাসন করতেন। ন্যায়বিচার বা আইনের শাসন ছিল না। কারণ বিচারব্যবস্থা রাজার হুকুমেই চলত। ফরাসি রাজা ষোড়শ লুই ছিলেন অযোগ্য ও অকর্মণ্য। দেশ শাসন করার নৈতিক অধিকার তিনি হারিয়ে ফেলেন।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

