• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ফরাসি বিপ্লব
ফরাসি বিপ্লব

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ফরাসি বিপ্লব

ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান

যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিতে সবকিছু বিচার করার মানসিকতাই ছিল জ্ঞানদীপ্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য। অষ্টাদশ শতাব্দী ছিল আধুনিক ইতিহাসে জ্ঞানদীপ্তির যুগ। রেনেসাঁপ্রসূত অনুসন্ধিৎসা ও সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি উক্ত শতাব্দীতে কার্যকর ছিল। জ্ঞানদীপ্তির প্রভাবে উদ্দীপ্ত এক শ্রেণির পণ্ডিত ফ্রান্সের পূর্বতন শাসনামলের তীব্র সমালোচনা করে সেই রাষ্ট্রব্যবস্থার স্তম্ভগুলোকে নড়বড়ে করে দিয়েছিলেন। ফরাসি, দার্শনিকদের মধ্যে মন্টেস্কু, ভলতেয়ার, রুশো, দিদারো প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।

অনেকের মতে, বিপ্লবে দার্শনিকগণ প্রত্যক্ষভাবে নেতৃত্ব গ্রহণ করেননি বা অংশগ্রহণ করেননি। তবে স্বীকার করতে হবে যে, দার্শনিকদের প্রকৃত কার্যের ক্ষেত্র ছিল মানুষের চিন্তা-চেতনা এবং ভাব-জগতে নতুন ভাবধারার সৃষ্টি করা। অন্যায়, অবিচার, বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর নীতিগত অধিকার সম্পর্কে তারা জনগণকে সচেতন করেন এবং অবহিত করেন। প্রকৃতপক্ষে এখানেই দার্শনিকদের অবদান।

মন্টেস্কু (১৬৮৯-১৭৫৫ খ্রিষ্টাব্দ): ফরাসি দার্শনিকদের মধ্যে সবচেয়ে খ্যাতিমান ছিলেন মন্টেন্ধু। তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে বিপ্লব বিমুখ এবং রাজতন্ত্রে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রে তার কোনো বিশ্বাস ছিল না। তিনি ছিলেন নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক। তিনি তার যুক্তিবাদী মনন দ্বারা ফ্রান্সের প্রচলিত সমাজ ও শাসনব্যবস্থা বিশ্লেষণ করেন। তিনি ছিলেন ক্যাথলিক গির্জার ও রাজার সীমাহীন ক্ষমতার ঘোরবিরোধী। 'স্বর্গীয় অধিকারপ্রাপ্ত রাজতন্ত্র' তত্ত্বকে অস্বীকার করে তিনি এর ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো তুলে ধরেন। তার রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে 'দ্য স্পিরিট অব লজ' (The spirit of laws-1748) এবং 'দ্য পারসিয়ান লেটারস্' (The Persian Letters) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তিনি 'Persian Letters' নামক ব্যঙ্গাত্মক লেখার মধ্য দিয়ে ফরাসি সমাজের অন্যায় শ্রেণিবৈষম্যের প্রতি কটাক্ষপাত করেন এবং The spirit of laws' গ্রন্থে তিনি শাসনব্যবস্থার মধ্যে, আইন বিভাগ, কার্যনির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগ- এই তিনটি বিভাগের ক্ষমতা বিভাজনের কথা বলেছেন। কারণ তার ক্ষমতার বিভাজন তত্ত্ব মতে, এই তিনটি বিভাগের ক্ষমতার একত্রীকরণের মাধ্যমে ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও লোপ পায়। সুতরাং মন্টেস্কুর রচনা জনগণকে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে সচেতন করে তুলেছিল। তিনি স্বৈরতন্ত্রের যে বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করেন এবং বিকল্প হিসেবে ক্ষমতা বিভাজনের যে প্রস্তাব দেন তা সমকালীন যুগে গভীর প্রভাব বিস্তার করে এবং ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। মন্টেফু ফরাসি বিপ্লব দেখে যেতে পারেননি। কিন্তু তার লেখনী ফরাসি জনতার মননে ব্যাপক প্রতিঘাত সৃষ্টি করেছিল। এজন্য ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দের বিপ্লব-পরবর্তী সংবিধানে তার ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ব্যবহারিক প্রয়োগ করা হয়।

ভলতেয়ার (১৬৯৪-১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দ) : ভলতেয়ার ছিলেন ফরাসি দার্শনিকদের মধ্যে অন্যতম প্রতিভাবান। তার প্রকৃত নাম ফ্রাঁসোয়া ম্যারি অ্যারাউয়্যে। তিনি নাটক, কাব্য, ইতিহাস, প্রবন্ধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন। তার লেখাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে Oedipe, Letters Philosophiques, Elements of Essays on Universal History এবং Zodig." তার লেখার লক্ষ্য ছিল চার্চের দোষ-ত্রুটি এবং ধর্মের সঙ্গে যুক্ত অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার সম্বন্ধে মানুষকে সচেতন করা। তিনি আপসহীনভাবে সামন্তপ্রথা ও খ্রিষ্টানধর্মের গোঁড়ামিবিরোধী ছিলেন। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল, যুক্তিবাদী ও অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী এক দার্শনিক। তাকে মানবজাতির 'বিবেক' আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও পরমতসহিষ্ণুতার প্রতি তার অগাধ শ্রদ্ধা ছিল। তিনি প্রচলিত রাষ্ট্র, সমাজ ও ধর্মনীতির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করে ফরাসি বিপ্লবের পথকে প্রশস্ত করেন। তিনি গির্জার দুর্নীতি ব্যঙ্গাত্মক লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ করলে গির্জার প্রতি জনসাধারণের শ্রদ্ধা ও ভীতি কমে যায়। তার বিখ্যাত উক্তি হলো, "ঈশ্বর না থাকলে তাকে বানাতে হতো। কেননা, প্রকৃতি বলছে ঈশ্বর আছে।"

রুশো (১৭১২-১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দ): বিপ্লবের প্রেরণা সৃষ্টিতে রুশোর অবদানও কিন্তু কম ছিল না। তিনি ফ্রান্সে সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী প্রচার করেন। সাম্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজ ও রাষ্ট্র ছিল তার আদর্শ। তার গ্রন্থগুলোর মধ্যে New Heloisic, Confession, Emile Social Contract বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার বিখ্যাত সোশ্যাল কনট্রাক্ট (Social Contract-1762) গ্রন্থ দ্বারা শাসনক্ষেত্রে জনমত তথা জনগণই সার্বভৌম এই মতবাদ প্রচার করেন। 'মানুষ স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করে কিন্তু মানুষ সর্বত্রই শৃঙ্খলবদ্ধ'- রুশোর এই মতবাদ বিপ্লবীদের কল্পনার আগুনে ফুলকি ধরিয়ে দেয়। প্রকৃতপক্ষে রুশো ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের অগ্রদূত। রুশো তার বিখ্যাত রচনায় এ সত্য প্রচার করেন যে, ঈশ্বর রাজা বা রাষ্ট্র সৃষ্টি করেননি। আদিতে' সব মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে স্বাধীন ও সুখী ছিল। জনসাধারণই রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস। সুতরাং রাজা জনসাধারণের মতানুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। তার এ তত্ত্ব ইউরোপীয় চিন্তাজগতে এক বৈপ্লবিক চেতনার জন্ম দেয়। এ কারণে রুশোকে ফরাসি বিপ্লবের মন্ত্রগুরু বলা হয়ে থাকে।

ডেনিস দিদারো (Denis Diderot): বিপ্লবের অব্যবহিত পূর্বের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ছিলেন ডেনিস দিদারো। তিনি এনসাইক্লোপিডিয়া বা বিশ্বকোষ রচনা করে ফ্রান্সে যুক্তিবাদী দৃষ্টি গঠনে সহায়তা করেছিলেন। এই গ্রন্থে মানুষের জ্ঞাতব্য সবকিছুই সন্নিবেশিত করা হয়েছিল এবং তদানীন্তন সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সমালোচনাও এ গ্রন্থে লিখিত হয়েছিল। মানুষের জন্মগত অধিকার, মানবধর্ম, শিক্ষা বিষয়ে তথ্যপূর্ণ লেখা। ছিল এ গ্রন্থে, যা বঞ্চিত মানুষের বিপ্লবী চেতনাকে উজ্জীবিত করে।

এভাবে দেখা যায় যে, বিভিন্ন পণ্ডিত, জ্ঞানী দার্শনিকদের লেখনীর মাধ্যমে ফরাসি জনগণের মন বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। তবু ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান সম্পর্কে ঐতিহাসিক বা গবেষকগণ একমত নন। অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, ফরাসি বিপ্লব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণেই সংঘটিত হয়েছিল, সামাজিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বা দার্শনিক কারণে নয়। এই বিতর্কের গভীরে না গিয়েও বলা যায় যে, দার্শনিকদের প্রভাব অনেক ক্ষেত্রেই বিপ্লবকে উৎসাহিত করেছিল। কারণ দার্শনিকগণ তৎকালীন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দোষ-ত্রুটির প্রতি ফরাসি জনগণের দৃষ্টি আর্কষণ করে এক বিরাট জাগরণের সৃষ্টি করেছিলেন। তারা এভাবে পূর্বতন শাসনের ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিলেন, ফলে বিপ্লব সম্ভবপর হয়েছিল। একথা মানতে হবে যে, দার্শনিকদের সমালোচনা ও যুক্তিবাদী রচনা ফরাসি জনগণকে বিপ্লব সংঘটনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করে তুলেছিল। সুতরাং ফরাসি বিপ্লবে মহান দার্শনিকদের প্রভাব ও অবদান ছিল অপরিসীম ও অনস্বীকার্য।

সমালোচনা

ফরাসি বিপ্লবের কারণগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে থাকেন। ঐতিহাসিক ফিসারের মতে, "ফরাসি রাজতন্ত্র সমাজের ঊর্ধ্বতন সম্প্রদায়ের বিশেষ অধিকার সমাধান করতে পারেনি বলে বিপ্লব ঘটেছিল। সামন্তপ্রথার দোষ-ত্রুটি অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোর ন্যায় ফ্রান্সের জাতীয় জীবনকে ভারাক্রান্ত করে তুলেছিল। ফরাসি রাজশক্তি এসব দোষ-ত্রুটি দূর করতে সক্ষম হয়নি।" ঐতিহাসিক মন্টেগু বলেন, "কৃষকদের দুরবস্থাই ছিল ফরাসি বিপ্লবের মূল কারণ।" জে. হল্যান্ড রুজের মতে, "ফরাসি দার্শনিকদের রচনার প্রভাবে জনমনে যে প্রাণশক্তি সঞ্চারিত হয়েছিল তাতে ফরাসি বিপ্লবের সৃষ্টি হয়।" মর্স স্টিফেনের মতে, "এ বিপ্লবের প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক- দার্শনিক বা সামাজিক নয়। "১৭ঐতিহাসিকদের উপর্যুক্ত মতামতগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যে, ফরাসি বিপ্লব কোনো একটি নির্দিষ্ট কারণে সংঘটিত হয়নি। প্রত্যেকটি কারণেরই এক-একটি বিশেষ প্রভাব ছিল। বিভিন্ন কারণের গুরুত্বে পার্থক্য থাকলেও সবগুলো কারণের সমষ্টিগত ফল হিসেবে ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে ঘটেছিল। তবে এটা সত্য যে, অন্য কারণগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক কারণ সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং এটি ফরাসি বিপ্লব সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছিল।

ফ্রান্সে বিপ্লব কেন প্রথম ঘটে

ইউরোপের সর্বত্র একই ধরনের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও অন্য দেশে বিপ্লব না ঘটে ফ্রান্সে কেন বিপ্লব প্রথম দেখা দিয়েছিল, তার কারণ আলোচনা করা দরকার। বিভিন্ন কারণে ফ্রান্সেই বিপ্লব প্রথম দেখা দেয়।

প্রথমত: ফ্রান্সের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা ইউরোপের অন্যান্য দেশের রাজতন্ত্র অপেক্ষা অধিকতর দুর্বল হয়ে পড়েছিল। বিপ্লবীদের শক্তি প্রতিহত করার মতো ক্ষমতা রাজা ষোড়শ লুইয়ের ছিল না।

দ্বিতীয়ত: সামন্তপ্রথার নিষ্ক্রিয়তা বিপ্লবীদের শক্তি বৃদ্ধি করেছিল। সামন্ত প্রভুদের সাথে কৃষকদের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত বিদ্বেষমূলক। এ পরিস্থিতি কৃষকদের বিপ্লব সৃষ্টিতে সহায়তা করেছিল।

তৃতীয়ত: ইউরোপীয় অপর দেশগুলোর তুলনায় ফরাসিরা অধিকমাত্রায় ব্যক্তিস্বাধীনতা আশা করত এবং এ কারণে রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভের জন্য তারা উদগ্রীব হয়ে বিপ্লবে জড়িয়ে পড়ে।

চতুর্থত: ইউরোপীয় অপর দেশগুলোর তুলনায় ফরাসি মধ্যবিত্ত শ্রেণি ছিল সমাজসচেতন ও শিক্ষাদীক্ষায় অধিক উন্নত। এ মধ্যবিত্ত শ্রেণির রাজনৈতিক উচ্চাশাই তাদের বিপ্লবী মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তোলে।

পঞ্চমত: ফরাসি কৃষকরা ছিল ইউরোপীয় অন্যান্য দেশের কৃষকের তুলনায় অধিক মর্যাদা ও অধিকারসচেতন। তাদের আর্থিক অবস্থা অপরাপর ইউরোপীয় দেশের তুলনায় ভালো ছিল। ফলে ফরাসি কৃষকরা বিপ্লবের মূলবাণী ধারণ করতে সময়ক্ষেপণ করেনি।

ষষ্ঠত: ফরাসি দার্শনিকদের রচনা ফরাসি জনগণের মনে নতুন আশা ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল। এ সমস্ত কারণেই ফ্রান্সে বৈপ্লবিক পরিস্থিতির পটভূমি তৈরি হয় এবং বিপ্লব ফ্রান্সেই প্রথম সংঘটিত হয়।

সপ্তমত: ষোড়শ লুইয়ের অর্থনৈতিক ধস ফ্রান্সে এক গভীর অর্থনৈতিক সংকটের সূচনা করে, যা রাজনৈতিক সংকটে পরিণত হয়।

পরিশেষে বলা যায়, ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার অনেক পূর্বেই ফ্রান্সে বিপ্লবের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। ঐতিহাসিক কেটেলবি বলেন, "দুর্বল স্বৈরতন্ত্রী এবং দুর্বল রাজতন্ত্র, দুর্নীতিগ্রস্ত গির্জা, অভিজাতদের সংখ্যা বৃদ্ধি, রাজকোষের দেউলিয়াত্ব, অসন্তুষ্ট বুর্জোয়া, উৎপীড়িত কৃষক শ্রেণি, আর্থিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা, বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ প্রভৃতি কারণ ফ্রান্সকে বিপ্লবের দিকে ঠেলে দেয়।

ফরাসি বিপ্লবের স্রষ্টা

এটি সর্বজনবিদিত যে, ফরাসি বিপ্লব তৃতীয় সম্প্রদায়েরই সৃষ্টি। কিন্তু তৃতীয় সম্প্রদায় একটি বিশেষ একক শ্রেণি ছিল না, এটি কৃষক ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির সমন্বয়ে গঠিত। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, বিপ্লবের সূচনা করেছিল কারা? এ সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে যথেষ্ট মতভেদ লক্ষ করা যায়। কতিপয় ঐতিহাসিক নির্যাতিত কৃষক শ্রেণিকে ফরাসি বিপ্লবের স্রষ্টা বলে অভিমত দেন। আবার কতিপয় ঐতিহাসিক মনে করেন বুর্জোয়া শ্রেণি ছিল ফরাসি বিপ্লবের সূচনাকারী। তাদের যুক্তি হচ্ছে, বিপ্লব ঘটানোর মতো যথেষ্ট জ্ঞান-বুদ্ধি বা যোগ্যতা কৃষকদের ছিল না। বরং বুর্জোয়ারা ছিল শিক্ষিত ও ব্যবসায়ী। তারা যথেষ্ট বিত্তবান হলেও সামাজিক মর্যাদা ছিল না। তাই সামাজিক মর্যাদা লাভের প্রত্যাশায় মধ্যবিত্ত বুর্জোয়া শ্রেণি বিপ্লবের স্রষ্টা, কৃষকরা তাদের অভিযোগ ও সমস্যা থেকে উত্তরণের আশায় বুর্জোয়াদের অনুসরণ করেছিল মাত্র।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ