- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture
ইসলামি সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক- Different Aspects of Islamic Culture
মানুষের জীবনসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ের সমন্বয়ই হলো ইসলামি সংস্কৃতি। মানবজীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগগুলো ইসলামি সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। নিচে এ দিকগুলো তুলে ধরা হলো-
আধ্যাত্মিক দিক: মানুষের যেমন দেহ আছে, তেমনি আছে আত্মা। দেহের যেমন পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা বিধান রয়েছে, তেমনি আত্মারও পবিত্রতার বিধান রয়েছে। মানুষকে যে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে তার মূলে রয়েছে এ আত্মার পরিশুদ্ধতা অর্জন। ইসলামি সংস্কৃতির আধ্যাত্মিক দিক হলো আত্মাকে শুদ্ধ ও পবিত্র করে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব সংরক্ষণ করা। এ শ্রেষ্ঠত্ব সংরক্ষণের পদ্ধতি হলো, আত্মাকে আল্লাহর গুণাবলিতে গুণান্বিত করা। পবিত্র কুরআনে এসেছে—
صِبْغَةَ اللهِ وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً .
অর্থ: আল্লাহর রঙে নিজেকে রঙিন কর। তাঁর চেয়ে উত্তম রং আর কার? (সুরা আল বাকারা : ১৩৮)। নৈতিক দিক: ইসলামি সংস্কৃতির সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তার নৈতিক রীতিনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি। এখানে উন্নত নৈতিকতাকে মুমিনের অনিবার্য গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রাসুলুল্লাহ (স) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন কাজের জন্য অধিক লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি বলেছেন, 'আল্লাহর ভয় আর উত্তম চরিত্র' (তিরমিযি)। তিনি আরো বলেন, সত্যিকার মুমিন তারাই, যাদের চরিত্র সুন্দর। নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন মুমিনের পাল্লায় যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি ভারী হবে তা হলো উত্তম চরিত্র ।
বুদ্ধিবৃত্তিক দিক: ইসলামি সংস্কৃতির বুদ্ধিবৃত্তিক দিক হলো আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পন্থায় জ্ঞানচর্চা ও গবেষণা করা। ইসলামে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রতি অপরিসীম গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এজন্য আল্লাহর প্রথম নির্দেশ হলো-
إِقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ.
অর্থ: পড়, তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন (সুরা আলাক: ১)।
পরবর্তীতে এসেছে আরো উচ্চতর নির্দেশ-
فَاعْتَبِرُ وا يَا وَلِي الْأَبْصَارِ .
অর্থ: অতএব, হে চক্ষুষ্মানেরা! তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর (সুরা আল হাশর: ২)।
মহানবি (স) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের ওপর জ্ঞানার্জন করা ফরজ (বায়হাকি)। তিনি আরও বলেন, রাতের অল্পসময় জ্ঞান আহরণ করা সমস্ত রাতের ইবাদতের (নফল) চেয়ে উত্তম (দারিমি) ।
পারিবারিক দিক: ইসলামি সংস্কৃতিতে সমাজের ভিত্তি হলো পরিবার। পৃথিবীতে মানবজাতির যথাযথ আগমন ও বিকাশ সাধনের জন্য আল্লাহ তায়ালা শরিয়তসম্মত উপায়ে বিবাহের মাধ্যমে পরিবার প্রতিষ্ঠা করতে বলেছেন। আল্লাহ বলেন,
فَانْكِحُوا مَا طَابَ لَكُمْ مِّنَ النِّسَاءِ .
অর্থ: নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের পছন্দ হয় বিয়ে কর (সুরা আন-নিসা: ৩)।
ইসলামি সংস্কৃতিতে পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক অধিকার ও কর্তব্য পালনের বিধান রয়েছে। এ সংস্কৃতি অধিকার আদায় ও কর্তব্য পালনের ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَاتِ ذَا الْقُرْبى حَقَهُ
অর্থ: আর তোমার নিকটাত্মীয়ের হক দিয়ে দাও (সুরা বনি ইসরাঈল: ২৬)।
অর্থনৈতিক দিক: ইসলামি সংস্কৃতিতে উপার্জনের ক্ষেত্রে হালাল-হারাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে হালাল উপার্জনকে ফরজ ঘোষণা দিয়ে হারাম উপার্জন সম্পূর্ণভাবে বর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স) বলেন,
طلب كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ .
অর্থ: হালাল জীবিকা উপার্জন করা ফরজের পরে একটি ফরজ (সহিহ বুখারি)।
ইসলামি সংস্কৃতিতে সম্পদের নিয়ন্ত্রিত মালিকানা ও নির্ধারিত বিষয়ে ভোগ ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থব্যবস্থার ভারসাম্য রক্ষার জন্য জাকাতের মতো অবিসংবাদিত ব্যবস্থাও রয়েছে। আল্লাহ বলেন,
وَاقِيمُوا الصَّلوةَ وَأتُوا الزَّكوة .
অর্থ: আর তোমরা সালাত কায়েম কর এবং জাকাত দাও (সুরা আল বাকারা: ৪৩, ১১০) ।
জাতীয় দিক: জাতীয় জীবনে ইসলাম ঐক্যবদ্ধভাবে জীবননির্বাহের সংস্কৃতি প্রবর্তন করেছে। আল্লাহ বলেন,
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا .
পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)।
অর্থ: তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)। ইসলামি সংস্কৃতি জাতীয় সংহতি অক্ষুণ্ণ রাখার লক্ষ্যে সবরকমের বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কার্যাবলিকে হারাম ঘোষণা করেছে।
ধর্মীয় দিক: ইসলামি সংস্কৃতির ধর্মীয় দিক উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতা নীতির প্রবর্তক। এখানে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নিষিদ্ধ করে সবার জন্য নিজ নিজ ধর্মপালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, - অর্থ: ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই (সুরা আল-বাকারা: ২৫৬)।
পবিত্র কুরআনে আরও এসেছে, -
অর্থ: তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্য এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্য (সুরা কাফিরুন: ৬)। আন্তর্জাতিক দিক: ইসলামি সংস্কৃতিতে উৎসগত বিবেচনায় পৃথিবীর সব মানুষ এক ও অভিন্ন। পৃথিবীর সব মানুষ একই স্রষ্টার সৃষ্টি এবং একই পিতামাতার সন্তান। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন-
يَأَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَكُمْ مِنْ ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا ۔
অর্থ: হে মানবজাতি, তোমাদেরকে আমি একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা পরস্পরকে চিনতে পার (সুরা আল-হুজুরাত: ১৩)।
আন্তর্জাতিক জীবনে এ সংস্কৃতি শান্তি ও সৌহার্দের নির্দেশনা দেয়। সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতার মূলোৎপাটন করে ।
দলীয় কাজ: শ্রেণির সব শিক্ষার্থী কয়েকটি দলে ভাগ হবে। এবার একেক দল ইসলামি সংস্কৃতির একেক দিক সম্পর্কে আলোচনা করবে।