• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture

মক্তবের কার্যাবলি- Activities of Maktab

কুরআন শিক্ষায় মক্তব

ইসলাম শিক্ষার মূল উৎস আল-কুরআন। এর ওপর ভিত্তি করেই ইসলাম শিক্ষা আবর্তিত হয়। ইসলামে যে শিক্ষা গ্রহণকে ফরজ করা হয়েছে তার পুরোটাই কুরআনের শিক্ষা। রাসুলুল্লাহ (স) বলেন,

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَمَه .

অর্থ: তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম, যে নিজে কুরআন শিখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয় (বুখারি, ইবনে হিব্বান)। শিক্ষার্থীরা মক্তবে কুরআন শিক্ষা গ্রহণ করে। মক্তবের মাধ্যমেই সাধারণ মুসলমানগণ জীবনের প্রাথমিক স্তরে আল- কুরআন শিক্ষার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

অক্ষর জ্ঞানদান: মত্তবে নিরক্ষর শিক্ষার্থী অক্ষরজ্ঞান লাভ করে তার শিক্ষাজীবন শুরু করে। এ জ্ঞান তার অন্য সব জ্ঞানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে। সাধারণ শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থী আরবি ও প্রয়োজনীয় অন্য বর্ণমালার অক্ষরগুলো এখান থেকেই চিনতে ও পড়তে পারে।

শুদ্ধ উচ্চারণ শিক্ষা: শুদ্ধ উচ্চারণ ছাড়া শব্দ অর্থবহ হয় না, ভাষায় বিকৃতি ঘটে। শুদ্ধ তিলাওয়াত ছাড়া কোনো ইবাদত কবুল হয় না। এজন্যই আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন,
salatus, অর্থ: আল-কুরআন তিলাওয়াত কর সুবিন্যস্ত ও সুস্পষ্টভাবে (সুরা মুযযামমিল: ৪)।

মক্তবে শিক্ষার্থীরা বিশেষ করে শিশুরা খুব সহজে শুদ্ধ আরবি উচ্চারণ করতে শেখে।

অনুশীলন ও পাঠাভ্যাস গঠন: মক্তব শিশুর প্রথম পাঠশালা। এখান থেকেই সে ভবিষ্যতের জন্য ভালো কিছু করার এবং বড় হওয়ার প্রেরণা পায়। তার মধ্যে পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠে। সে নিজেকে যোগ্য ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে নিয়মিত অনুশীলন শুরু করে।

হাদিস শিক্ষায় মক্তব

হাদিস কুরআন মাজিদের সর্বোত্তম ব্যাখ্যা এবং ইসলামি শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস। ইসলামি জীবনব্যবস্থায় হাদিসের গুরুত্ব অপরিসীম। গুরুত্বের দিকে লক্ষ রেখে মক্তবে দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় কিছু হাদিস শিক্ষা দেওয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন অল্প বয়সে প্রয়োজনীয় কিছু হাদিস মুখস্থ করার সুযোগ পায়, তেমনি বাস্তব জীবনেও সেসব হাদিস মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ হয়। আদর্শ জীবন গঠনে কুরআনের পাশাপাশি হাদিসের শিক্ষা খুবই সহায়ক।

ইসলামের মৌলিক জ্ঞানদানে মক্তব

ইমান শিক্ষা: মুমিনের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ইমান। ইমান ছাড়া সব ইবাদত অর্থহীন। মক্তব শিক্ষার্থীকে ইমানের শিক্ষা দেয়। আল্লাহ, ফেরেশতা, আসমানি কিতাব, নবি-রাসুল, পরকাল, তাকদির এবং কিয়ামতে বিশ্বাসের শিক্ষা দেয়। পাশাপাশি ইমানের দাবি অনুযায়ী ইবাদতে অভ্যস্ত হওয়ার প্রয়োজনীয় শিক্ষা হাতে কলমে পাওয়া যায় মক্তবে। প্রাথমিক শিক্ষা: মক্তবে শিশুদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়া হয়। কেননা মক্তব প্রতিষ্ঠিত হয় সাধারণত বাড়ির কাছে। তাই শিশুরা সেখানে সহজে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করতে পারে ।

গণশিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষায় ভূমিকা: মক্তব কেবল শিশুদের ক্ষেত্রেই নয়, বরং নিরক্ষর বয়স্ক লোকদের অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন করে তোলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মক্তবের ক্ষুদ্র অবকাঠামোর মধ্যেই বয়স্কদের সুবিধামতো সময়ে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা যায়। তারা নিরক্ষরতার অভিশাপমুক্ত হয়ে প্রকৃত মুসলিম হওয়ার সাধনায় লিপ্ত হতে পারে।

ইসলামের রীতিনীতি শিক্ষাদানে মক্তব

নৈতিক শিক্ষা: ইসলামি জীবনদর্শনে উন্নত নৈতিক চরিত্র অর্জনকে অনিবার্য বিষয় হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়া ইহ ও পরকালে সাফল্য লাভ অসম্ভব। মক্তবের শিক্ষা শিশুকে শৈশবেই নীতিবান করে তোলে। এখানে সে সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, হালাল-হারাম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করে।

ধর্মের ব্যাবহারিক শিক্ষা: মক্তবের শিক্ষক যেমন ইমান শিক্ষা দেন তেমনি ইসলামের বিভিন্ন ইবাদতের আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেন ৷ এখানে শিশুরা পবিত্রতা অর্জনের পদ্ধতি, সালাত ও অন্যান্য ইবাদত পালনের নিয়ম শিখতে পারে। তারা এখানে হাতে-কলমে প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল শিখতে পারে।

ইসলামের আচার-আচরণ শিক্ষাদানে মক্তব

পবিত্র ও পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা: সুস্থ, সুন্দর ও পবিত্র জীবনযাপনের জন্য পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। পরিচ্ছন্ন পোশাক, শরীর, মন এবং পরিবেশ কাঙ্ক্ষিত শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটায়। মানুষের জীবন শান্তিপূর্ণ করে তোলে। পরিচ্ছন্নতা ছাড়া কোনো ইবাদতই কবুল হয় না। রাসুলুল্লাহ (স) বলেন, অর্থ: পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক (সহিহ মুসলিম)।

শিশুরা মক্তবেই পবিত্র থাকার গুরুত্ব ও প্রাথমিক জ্ঞান পেয়ে থাকে। এখানে সে পোশাক, শরীর ও পরিবেশ পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়োজনীয়তা ও পদ্ধতি শেখে । সৎসঙ্গের শিক্ষা: মক্তবে শিশুদের সৎ মানুষ ও ভালো শিশুদের সাথে বন্ধুত্ব করার শিক্ষা দেওয়া হয়। তাদেরকে সৎ বন্ধুর গুণাবলি সম্পর্কে অবহিত করা হয়। পাশাপাশি অসৎ বন্ধুকে সংশোধনের নির্দেশনা দেওয়া হয় দেশপ্রেম শিক্ষা: মহানবি (স)সহ সব নবি-রাসুলের মধ্যে প্রবল দেশপ্রেম ছিল। মক্তবের শিক্ষা শিশুদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। তারা দেশের প্রতি অনুগত ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠে

ইসলামি আদব-আখলাক শিক্ষাদানে মক্তব

আদব-কায়দা শিক্ষা: মুমিন জীবনের আসল সৌন্দর্য সদাচার ও সৌজন্যবোধ। সুন্দর আচরণ ছাড়া প্রকৃত মুমিন হওয়া যায় না। মক্তবে শিক্ষার্থীকে আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া হয়। এখানকার শিক্ষার্থীরা ছোটদের স্নেহ আর বড়দের শ্রদ্ধা করতে শেখে। সহপাঠী, বন্ধু, মা, বাবা, ভাই, বোন, আত্মীয় ও অন্যান্য লোকের সাথে কেমন আচরণ করা যাবে তা সে অবহিত হয়। ভালোবাসা শিক্ষা: এক মুমিনের জন্য অপর মুমিনের প্রবল ভালোবাসা থাকতে হয়। এটা ইমানের অনিবার্য দাবি। রাসুলুল্লাহ (স) এজন্যই পুরো মুসলিম উম্মাহকে তুলনা করেছেন একটি দেহের সাথে। মত্তবে শিশুদেরকে ভালোবাসার শিক্ষা দেওয়া হয় । শিক্ষার্থীরা এক সাথে পড়তে শেখে এবং পরস্পরকে ভালোবাসতে শেখে। একে অপরকে সহযোগিতা করা ও সহানুভূতি দেখানোর নির্দেশনা পায়।

সালামের প্রচলন শিক্ষা

মক্তবে শিক্ষার্থীকে ছোট-বড় সবাইকে সালাম দেওয়া এবং সালামের উত্তর দিতে শিক্ষা দেওয়া হয়। কেননা রাসুল (স) বলেছেন- অর্থ: কারো সাক্ষাতে কথা বলার আগে সালাম দাও (তিরমিযি)।

দলীয় কাজ: শিক্ষার্থীরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রথম দল ইসলামের মৌলিক জ্ঞানদানে, দ্বিতীয় দল ইসলামের রীতিনীতি শিক্ষাদানে এবং তৃতীয় দল ইসলামের আচার-আচরণ শিক্ষাদানে মক্তবের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করবে।

জেনে রাখো:

পারস্পরিক সাক্ষাতে সালাম বিনিময় করা ইসলামি সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। সালাম আরবি শব্দ। এর অর্থ শান্তি। সালাম দেওয়া সুন্নত এবং সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। কেউ সালামের উত্তর না দিলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী গুনাহগার হবে। আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আদম (আ)- কে সালামের শিক্ষা দেন। হযরত আদম (আ)-কে সৃষ্টির পর আল্লাহ তাকে ফেরেশতাদের সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি সালাম দিলে ফেরেশতারাও এর উত্তর দেন।