• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি || Islamic Education and Culture

ইসলাম শিক্ষার বৈশিষ্ট্য - Characteristics of Islamic Education

উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের দিক থেকে ইসলাম শিক্ষা এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কেননা সৃষ্টির সামগ্রিক কল্যাণের জন্যই মহান স্রষ্টা এ শিক্ষা অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মানুষের ইহ ও পারলৌকিক জীবনে মঙ্গলসাধনই ইসলাম শিক্ষার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

তাওহিদভিত্তিক শিক্ষা: ইসলাম শিক্ষা তাওহিদভিত্তিক। 'তাওহিদ' শব্দের অর্থ একত্ববাদ। ইসলাম শিক্ষা আল্লাহর একত্ববাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় একে তাওহিদভিত্তিক শিক্ষা বলা হয়। ইসলাম শিক্ষার মূলকথা হলো— অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।

আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা এবং ইবাদত ও আনুগত্যের যোগ্য এক ও অদ্বিতীয় সত্তা হিসেবে মুখে স্বীকার ও অন্তরে বিশ্বাস করার নাম তাওহিদ। তাওহিদে বিশ্বাস ছাড়া কোনো ব্যক্তিই মুমিন বা মুসলমান হতে পারে না। একজন মুমিনের জীবনের প্রতিটি কাজই তাওহিদকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় যা ইসলাম শিক্ষা ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষাব্যবস্থায় পাওয়া যায় না। পৃথিবীতে যত নবি-রাসুল এসেছেন তাদের প্রত্যেকেই মানুষকে এই তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন ।

কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক শিক্ষা: ইসলাম শিক্ষার মূল উৎসই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার বাণী আল-কুরআন এবং রাসুল (স) প্রদর্শিত জীবনপদ্ধতি যা হাদিস বা সুন্নাহ নামে পরিচিত। রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন— আমি তোমাদের মধ্যে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি। এ দুটিকে দৃঢ়ভাবে ধরে থাকলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। এগুলো হলো আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের সুন্নাহ বা হাদিস (মুয়াত্তা) ।

ওহিভিত্তিক শিক্ষা: ইসলাম শিক্ষার সূচনা হয়েছে ওহির মাধ্যমে। কুরআনে উল্লেখ আছে, সব জ্ঞানের উৎস আল্লাহ তায়ালা (সুরা আহকাফ: ২৩)। পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ)কে সৃষ্টির পর আল্লাহ তায়ালা প্রত্যক্ষ ওহির মাধ্যমে তাঁকে জ্ঞানদান করেছেন। আল্লাহ বলেন- وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا .

অর্থ: আর আল্লাহ আদমকে প্রতিটি বিষয়ের নাম শেখালেন (সুরা আল-বাকারা: ৩১)।

পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমেই এ শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে।

সমন্বিত শিক্ষা: ইসলাম শিক্ষা মানুষকে আখিরাতের জন্য পৃথিবীর যাবতীয় কাজ পরিত্যাগ করতে বলেনি, আবার নিজেকে সম্পূর্ণভাবে দুনিয়ামুখী করার ব্যাপারেও এ শিক্ষা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। এ শিক্ষা পার্থিব ও পরকালীন জীবনকে সমান গুরুত্ব দিয়ে দুই জীবনের জন্যই কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে এসেছে- رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ .

অর্থ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের পার্থিব জীবনে কল্যাণ দান করো, পরকালেও কল্যাণ দাও এবং আমাদের রক্ষা করো আগুনের শাস্তি থেকে (সুরা আল-বাকারা: ২০১)।

আদর্শিক শিক্ষা: ইসলাম শিক্ষা আদর্শনির্ভর শিক্ষা। কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সুনির্দিষ্ট জীবনদর্শন এ শিক্ষার মূল বৈশিষ্ট্য। এর বাইরে এ শিক্ষা নিজে নিজে কোনো রীতি-পদ্ধতি ও ধারা সংযোজন করে না। এ শিক্ষা ইসলামি আদর্শিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে মানুষের কথা ও কাজ পরিশোধন করে।

ইবাদতমূলক শিক্ষা: ইসলাম শিক্ষার মূলকথা হলো আল্লাহর ইবাদত। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونَ .

অর্থ: আর আমি জিন ও মানবজাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি (সুরা আয-যারিয়াত: ৫৬)। জীবনের সবক্ষেত্রে মহান আল্লাহ যে কাজ করতে বলেছেন তা করা এবং তিনি যে কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, তা না করাই হলো ইবাদত। ইসলাম শিক্ষায় মানুষের জীবন এবং সব কাজ মহান আল্লাহর ইবাদতে পরিণত হয়। এমনকি এ শিক্ষাটাই একটি ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। মানুষ যতক্ষণ ইসলাম শিক্ষায় রত থাকবে ততক্ষণ ইবাদত হিসেবে গণণা করা হবে। রাসুল (স) বলেছেন, রাতে অল্প সময় কুরআন ও হাদিস অধ্যয়ন করা সমস্ত রাতের ইবাদতের (নফল) চেয়ে উত্তম (সুনানে দারেমি)।

নৈতিক শিক্ষা: ইসলাম শিক্ষা মূলত নৈতিক শিক্ষা। এ শিক্ষা মানুষকে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করে। মানুষ মিথ্যা, প্রতারণা, পাপাচার, খিয়ানত, জুলুম, পরনিন্দা, ফিতনা, ফাসাদ প্রভৃতি থেকে মুক্ত হয়ে উন্নত নৈতিক চরিত্র গঠনে সহায়তা করে ।

তাকওয়াভিত্তিক শিক্ষা: ইসলাম শিক্ষা তাকওয়ানির্ভর। এ শিক্ষার নেপথ্যে রয়েছে আল্লাহপ্রেম ও ভয়। মানুষ প্রকাশ্যে বা গোপনে যে কাজই করুক স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তা জানেন— এ বিশ্বাস ও অনুশীলনের ভিত্তিতে ইসলাম শিক্ষা তার সব নীতিমালা পেশ করে।

পবিত্র ও পরিশুদ্ধকারী শিক্ষা: মানবিক দুর্বলতা ও পাশবিক কলুষতা থেকে মানুষকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধকারী শিক্ষা হলো ইসলাম শিক্ষা। এ শিক্ষা মানুষের আত্মা শুদ্ধ করে। তাকে ঘৃণা, হিংসা, কপটতা প্রভৃতি মানসিক ত্রুটি এবং নানাবিধ পাপাচার মুক্ত করে।

সর্বজনীন শিক্ষা: ইসলাম শিক্ষা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত নয়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে এটি সম্পূর্ণ মানানসই। এ শিক্ষা কোনো বিশেষ দেশ, জাতি বা অঞ্চলের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। এটি পৃথিবীর সব স্থানে, সব জাতির জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। কোথাও এটি অকার্যকর নয়। এর আবেদন বিশ্বময়। ইসলাম শিক্ষা সবার জন্যই কল্যাণকর । সঠিক পথের দিশা: ইসলাম শিক্ষায় মানুষকে আল্লাহর পথে অবিচল থাকতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। প্রকৃত পক্ষে আল্লাহর পথে অবিচল থাকলে সঠিক পথের দিশা লাভ করা যায়। আল্লাহ বলেন,
وَمَن يَعْتَصِمُ بِاللهِ فَقَدْ هُدِي إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ .

অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে, তাকে সঠিক পথের দিশা দেওয়া হয় (সুরা আলে ইমরান: ১০১)। আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্কসেতু: ইসলাম শিক্ষা মানুষকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরির পথ বলে দেয়। এ শিক্ষা আল্লাহ তায়ালা ও অন্যান্য সৃষ্টির প্রকৃত সম্পর্ক এবং সৃষ্টি রহস্য ব্যাখ্যা করে।

পরিপূর্ণ শিক্ষা: ইসলাম শিক্ষা একটি পরিপূর্ণ শিক্ষা। মানুষের জীবনের এমন কোনো দিক ও বিভাগ নেই, যা এ শিক্ষায় আলোচিত হয়নি। এ শিক্ষা মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণকে যেমন সুন্দর ও নমনীয় করে তোলে তেমনি মানসিক দিককেও পরিশুদ্ধ করে। পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য একজন মানুষকে নিষ্ঠাবান ও কর্তব্যপরায়ণ করার মাধ্যমে আল্লাহর খাঁটি গোলামে পরিণত করে। নিজের প্রতি দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, সমাজ ও দেশের প্রতিও দায়িত্ববান করে তোলে। আর তাই আল্লাহ বলেন, اليَوْمَ اكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا.

অর্থ: আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীন (ইসলাম) পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহও সম্পূর্ণ করে দিলাম আর তোমাদের জন্য জীবনবিধান হিসেবে ইসলামকেই মনোনীত করলাম (সুরা আল-মায়িদা: ৩)। খিলাফতের দায়িত্ব পালনের উপযোগী শিক্ষা: আল্লাহ তায়ালা তাঁর খলিফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মানুষকে এ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর খিলাফতের এ মহান দায়িত্ব পালনের জন্য যে যোগ্যতার প্রয়োজন, ইসলাম শিক্ষা মানুষকে সে যোগ্যতা অর্জন করতে সহায়তা করে ।
বাস্তবমুখী শিক্ষা: মহানবি (স) বলেন,

অর্থ: জ্ঞানী তারা যারা যা জানে, সে অনুযায়ী কাজ করে (মুসতাদরাক লিল হাকেম)।

এজন্য ইসলাম এমন শিক্ষা প্রবর্তন করেছে, যা বাস্তবসম্মত এবং বৈষয়িক ও ব্যাবহারিক জীবনে প্রয়োজনীয়। ফলে ইসলাম শিক্ষা পরিণত হয়েছে বাস্তবমুখী বৈজ্ঞানিক শিক্ষায় ।
আল্লাহ চিরন্তন শিক্ষা: ইসলাম শিক্ষার উৎস স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা। কেননা রাসুল (স) এ শিক্ষার যেসব নীতি প্রণয়ন করেছেন, মূলত তা আল্লাহ প্রদত্ত। আল্লাহ বলেন وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى إِنْ هُوَ إِلَّا وَى يُوحَى .

অর্থ: আর তিনি (মুহাম্মাদ ) নিজ প্রবৃত্তি থেকে কিছুই বলেন না; যা তাঁর কাছে ওহি হিসেবে প্রেরিত হয় তা ছাড়া (সুরা আন-নাজম: ৩-৪)। আল্লাহ তায়ালার অবিনশ্বর-শাশ্বত সত্তা থেকে উৎসারিত বলে ইসলাম শিক্ষাও শাশ্বত এবং চিরন্তন। নির্ভুল ও মানব প্রকৃতিসম্মত শিক্ষা: আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন । ইসলাম শিক্ষার প্রবর্তকও তিনি। তাই ইসলাম শিক্ষা নির্ভুল ও মানুষের প্রকৃতি স্বভাবসম্মত। এ শিক্ষায় এমন কোনো বিধান দেওয়া হয়নি যা মানুষের পক্ষে পালন করা অসম্ভব। আল্লাহ বলেন,لا يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا .

অর্থ: আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো দায়িত্ব দেন না (সুরা আল-বাকারা: ২৮৬)।

একক কাজ: ইসলাম শিক্ষার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য লেখো ।