- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অনার্স
- আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
সাম্প্রতিক কালের রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহ আলোচনা কর।
ভূমিকা: বিজ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গিতে রাষ্ট্রীয় বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে রাজনৈতিক মতবাদ বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান আর দার্শনিকের দৃষ্টিভঙ্গিতে রাষ্ট্র সংক্রান্ত আলোচনা হচ্ছে সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন দার্শনিক মানবসমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি সম্পর্কে যে দার্শনিক মতবাদ দিয়েছেন তাকে সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন বলে। তাত্ত্বিকভাবে রাষ্ট্রের দার্শনিক মূল্যাবোধ ধারণই হচ্ছে সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন। সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন আদর্শনিষ্ঠ। কেননা রাষ্ট্রদর্শনে কোনো এক আদর্শ যা মানদণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রব্যবস্থার, মানুষের রাজনৈতিক জীবনের মূল্যায়ন করা হয়।
১. সামগ্রিকতা: সমকালীন রাষ্ট্রদর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো সামগ্রিকতা। দার্শনিক মানুষের বিচ্ছিন্ন অস্তিত্বে বিশ্বাসী নয়। বৃহৎ জগৎ সংসারের প্রেক্ষাপটে মানুষের সমগ্র জীবনকে ব্যাখ্যা করাই হলো দর্শনের কাজ। সামগ্রিকতার বৈশিষ্ট্যযুক্ত সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন রাষ্ট্রদর্শনকে এক রিশেষ মহিমা দান করতে পারে। কারণ দর্শনকে রাষ্ট্রতত্ত্বের সঙ্গে যুক্ত করলে তখন রাষ্ট্রায়ত্ত লাভ করে এক বিশেষ সামগ্রিকতা। এই সামগ্রিকতার পটভূমিকা রাষ্ট্রের সমস্যা এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে রীতিনীতি ও বিভিন্ন সাংগঠিনক ক্ষমতার মধ্যে আর সীমাবদ্ধ থাকে না।
২. আদর্শনিষ্ঠ রাষ্ট্রদর্শন : সাবেকী মতে, সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন, আদর্শনিষ্ঠ। কেননা রাষ্ট্রদর্শনে কোনো এক আদর্শের মানদণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে 'রাষ্ট্রব্যবস্থায় মানুষের রাজনৈতিক জীবনের মূল্যায়ন করা হয়। ঐসব বাস্তবতা যেমন সেভাবে তাদের বর্ণনা দেওয়া হয় না। সাবেকী মতে এখানেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে সমকালীন রাষ্ট্রদর্শনের প্রধান পার্থক্য।
৩. রাজনৈতিক কৃষ্টি ও মূল্যবোধ : সমকালীন রাষ্ট্রদর্শনের আলোচ্য বিষয় হলো কৃষ্টি বা সংস্কৃতি যা এমন একটি জীবন প্রণালি যার দ্বারা পূর্ব পুরুষদের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রীতিনীতি, ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস, শিল্পকলা, নীতিকথা, আইনকানুন প্রভৃতির ভাণ্ডার। রাজনৈতিক কৃষ্টি ও মূল্যবোধকে যথাযথভাবে ধারণ করা সমকালীন রাষ্ট্রদর্শনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
৪. রাজনৈতিক সচেতনতা দান : সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন রাজনৈতিক সচেতনতা দানে ভূমিকা রাখে। সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন পাঠের ফলে মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন হয়ে নিজেদের মানবকল্যাণে নিয়োজিত রেখে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে উদ্বুদ্ধ হয়। এভাবে সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন রাজনৈতিক সচেতনতা দানের মাধ্যমে কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা ব্রাখে।
৫. শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা : বিশ্বের বিভিন্ন শাসনব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনার জন্য সমকালীন রাষ্ট্রদর্শনের জ্ঞান অপরিহার্য। কারণ এরূপ তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে কোনো দেশের শাসনব্যবস্থা ও সংবিধান জানা যায়। এভাবে দেশবাসী উন্নত জীবনের সোপান তৈরি করতে পারে। এভাবে কোনো দেশের সংবিধানের ত্রুটিগুলো পরিহার করে গুণগুলো আহরণ করে নিজেদের শাসনব্যবস্থাকে উন্নত করা যায়।
৬. ধর্ম, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ সম্পর্কিত আলোচনা: রাষ্ট্রদর্শনকে শুধু রাষ্ট্রের বাস্তবধর্মী কর্মকাণ্ডের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে আদর্শগত, ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হওয়াও বাঞ্ছনীয়। রাষ্ট্রের নাগরিকের ঐচ্ছিক ক্রিয়া ও অভ্যাসলব্ধ ক্রিয়ায় ধর্মীয় এবং নৈতিক উৎকর্ষ সাধন করে মূল্যবোধ জাগ্রত করাও সমকালীন রাষ্ট্রদর্শনের আলোচ্য বিষয়।
৭. রাজনৈতিক তত্ত্ব ও দর্শন: রাষ্ট্রদর্শনে রাজনৈতিক তত্ত্ব ও দর্শনকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যয়ন করা হয়। এক্ষেত্রে বিখ্যাত রাষ্ট্রদার্শনিকদের ধ্যানধারণা আলোচনা করা হয়। বিশেষ করে আমাদের দেশের পাঠ্যসূচিতে প্রাচীন যুগের প্লেটো থেকে সাম্প্রতিককাল অবধি সময়ের প্রায় সকল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য রাষ্ট্রদার্শনিকদের রচনাই অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সমকালীন রাষ্ট্রদর্শনের বৈশিষ্ট্যসমূহ অনুধাবন করলে এর পরিধি ও কার্যাবলি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। সমকালীন রাষ্ট্রদর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও সমকালীন রাষ্ট্রদর্শনের পরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। সমকালীন রাষ্ট্রদর্শনের পরিচিত ও আলোচ্য বিষয়সমূহ জানতে হলে আমাদেরকে আগে অবশ্যই এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ