• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অনার্স
  • আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি

আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার সাম্প্রতিক প্রবণতা বর্ণনা কর।

ভূমিকা: রাষ্ট্রচিভার ইতিহাসে পনের শতকে পরিষদ আন্দোলনের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে মধ্যযুগের অবসান ঘটে। ষোল শতক থেকে শুরু হয় আধুনিক যুগ। রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস সুদীর্ঘকালের যা বহু ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে রাজনৈতিক চিন্তাধারাও পরিবর্তিত হতে থাকে। এরিস্টটল যেখানে মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে দেখেছেন, ম্যাকিয়াভেলি সেখানে মানুষকে স্বার্থপর হিসেবে মূল্যায়ন করেছেন। এভাবে রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন আসতে থাকে। প্রাচীন যুগে নগরভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তা আর মধ্যযুগে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রচিন্তা তথা রাষ্ট্র ও গির্জার সম্পর্কই ছিল প্রধান, তা আজ সভ্য সমাজে নেই। বর্তমান যুগ হলো ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদের যুগ। তাই রাষ্ট্রচিন্তা গতিশীল এবং বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ হয়ে বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে। মানুষের চিন্তা-চেতনা ও ধ্যানধারণা স্থবির নয় গতিশীল। ফলে গতিশীল সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন সূচিত হচ্ছে।

আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার সাম্প্রতিক প্রবণতা নিম্নে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলো আলোচনা করা হলো-

১. যুক্তির প্রাধান্য: আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় সাম্প্রতিককালে যুক্তির প্রাধান্য দেওয়া হয়। যুক্তির কষ্টি পাথরে বিচার বিশ্লেষণ করে এ যুগে মানুষ জানতে চায় কোনটা ভালো এবং কোনটা মন্দ। পূর্বে এই স্বাধীন বিচার বিশ্লেষণের কোনো সুযোগ ছিল না।

২. ধর্মনিরপেক্ষতা: ধর্মনিরপেক্ষতা সাম্প্রতিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। ধর্মনিরপেক্ষতার মূলকথা হলো ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার, তাই এ সম্পর্কে কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি মোটেই কাম্য নয়। রাষ্ট্র নিজ ধর্ম পালন করবে এবং অন্য ধর্মকেও মর্যাদা দিবে। সাম্প্রতিককালের রাষ্ট্রচিন্তার দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা এমনটিই দেখতে পাই।

৩. উদারনৈতিক গণতন্ত্র সাম্প্রতিককালে রাষ্ট্রচিন্তার উদারনৈতিক ধ্যানধারণার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন দেশে যে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রচলিত আছে তাকে উদারনৈতিক গণতন্ত্র বলে গণ্য করা হয়। এরূপ শাসন পদ্ধতিতে ব্যক্তির মতামতকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। উদারনৈতিক গণতন্ত্রে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথকে সুগম করা হয়।

৪. উপযোগবাদ সাম্প্রতিক রাষ্ট্রচিন্তায় উপযোগবাদ আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। উপযোগবাদের মূল কথা হলো সর্বাধিক সংখ্যক লোকের জন্য সর্বাধিক সুখ নিশ্চিত করা। মানুষ যাতে অধিক পরিমাণে সুখ ভোগ করতে পারে সেজন্য প্রতিটি রাষ্ট্রই যথাযথ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

৫. মানবতাবাদী ও জনকল্যাণমূলক সাম্প্রতিককালে বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রই এখন মানবতার অধিক কল্যাণের পথ অনুসরণ করছে। বিশ্বকে সুখী সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলার জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। আধুনিককালের রাষ্ট্রচিন্তা থেকেই কল্যাণমূলক রাষ্ট্রচিন্তার আবির্ভাব ঘটেছে।

৬. এলিটতত্ত্বের প্রভাব সাম্প্রতিককালে রাজনীতি বিশ্লেষণে এলিটতত্ত্বের আলোচনা ক্রমবর্ধমানহারে গুরুত্ব অর্জন করে চলেছে। এলিট তারা যারা পদগুলো আঁকড়ে থাকেন এবং জাতীয় আয়ের কম বেশি একটি বিরাট অংশ ভোগ করে থাকেন। তারা এমন কতিপয় সংখ্যালঘু যারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। সাম্প্রতিককালে এ মতবাদটির গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৭. সামরিক শাসন বিরোধী বর্তমানে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়। তবে এখন আর কোনো রাষ্ট্রেই সামরিক শাসনকে সহ্য করা হয় না। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও জনগণ সামরিক শাসনের ঘোর বিরোধী তারা যেকোনো মূল্যে সামরিক শাসনকে প্রতিহত করতে বদ্ধপরিকর। সুতরাং বর্তমান বিশ্ব সামরিক শাসন বিরোধী।

৮. নিয়মতান্ত্রিক সরকার নিয়মতান্ত্রিক সরকার সাম্প্রতিক রাষ্ট্রচিন্তায় বেশ আলোচিত একটি বিষয়। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে সরকারগুলো নিয়মতান্ত্রিক গঠিত ও পরিচালিত হয়। নিয়মিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ও ক্ষমতা বদল হয়। এই সরকারের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা।

৯. গণতন্ত্রের প্রাধান্য নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থা হিসেবে বর্তমানে গণতন্ত্র খুব জনপ্রিয়। পূর্ব থেকেই গণতন্ত্রের উপস্থিতি লক্ষণীয় হলেও একমাত্র আধুনিক যুগে এসে এটি পরিপূর্ণতা লাভ করে। ব্যক্তির স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, নারী-পুরুষের ভোটাধিকার প্রভৃতি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলো আধুনিক যুগে যথার্থ মূর্তিমান হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক কালে রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের বেশ প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়।

১০. স্নায়ুযুদ্ধের অবসান: স্নায়ুযুদ্ধের অবসান আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পূর্বে সারা বিশ্ব পুঁজিবাদ ও সমাজতান্ত্রিক দুটি ব্লকে বিভক্ত ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্রের পতন ঘটে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এই দুই ব্লকের মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধ বা ঠান্ডা লড়াই (Cold war) বিদ্যমান ছিল তার অবসান ঘটে।

১১. সন্ত্রাস নির্মূল অভিযান: সন্ত্রাস নির্মূল অভিযান আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার একটি নতুন দিক। বিশ্ব রাজনীতি যখন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। এই সন্ত্রাস নির্মূল অভিযানে গোড়াপত্তন শুরু হয় মূলত আমেরিকার টুইন টাওয়ার হামলার পর থেকে। এই হামলার জন্য ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে বড় বড় দেশসমূহ অবস্থান গ্রহণ করে এবং সন্ত্রাস নির্মূল অভিযান পরিচালনা করে। তাই সম্প্রতি বাংলাদেশে সিরিজ বোমা হামলার হোতা শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই-এর গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উপসংহার: পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশধারা ব্যাপক ও বিস্তৃত এবং এই যুগে সর্বাধিক রাষ্ট্রচিন্তাবিদের আবির্ভাব ঘটেছে এবং এসকল চিন্তাবিদের চিন্তাধারা সর্বাধিক পরিমাণ আলোচিত বা সমালোচিত হয়েছে। তাই আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশধারায় ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ, উদারাবাদ, উপযোগবাদ, লোকায়তবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র প্রভৃতি মতাদর্শ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাতাকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ