• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অনার্স
  • আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি

আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় লোকায়তবাদের প্রভাব উল্লেখ কর।

ভূমিকা: লোক বা ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে যে তত্ত্বের উন্মেষ ঘটেছে তাকে লোকায়তবাদ বলে। লোকায়তবাদ বা ধর্ম নিরপেক্ষতার মূল কথা হলো ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না, ধর্ম ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার। ফরাসি বিপ্লবোত্তরকালে যে অভূতপূর্ব পরিবর্তন ঘটে তার ফলে স্থবির সনাতন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। মানুষ নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী উপযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে থাকে এবং তা করতে গিয়ে একদিকে যেমন চুক্তির আশ্রয় নেয় তেমনি অপর দিকে উদ্ভাবনী শক্তি প্রয়োগ করেছে। আর স্বাভাবিকভাবেই এ পরিবেশে লোকায়তবাদী চিন্তাধারা বিকাশ লাভ করে।

লোকায়তবাদের প্রভাব নিয়ে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় লোকায়তবাদের প্রভাব বৃদ্ধির কারণ আলোচনা করা হলো-

১. ফরাসি বিপ্লব: ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবকে লোকায়তবাদের অন্যতম উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়। ফ্রান্সে সনাতন ব্যবস্থা ফরাসি বিপ্লবের ফলে ভেঙ্গে পড়ে। বিপ্লবীদের মূলমন্ত্র সাম্য, মৈত্রী এবং ভ্রাতৃত্ব চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে এক প্রচণ্ড আলোড়ন সৃষ্টি করে। ব্যক্তিকেই সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়। আর এ চেতনার উৎস ধরেই লোকায়তবাদী ধারণা প্রবল হতে থাকে।

২. ব্যক্তিস্বাধীনতা: ব্যক্তির মত বা স্বাধীনতা পৃথক সত্তা এ ধারণাই ব্যক্তি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র। জে. এস. মিল তাঁর বিখ্যাত 'On Liberty' গ্রন্থে বলেছেন, "ব্যক্তিচরিত্রের সর্বাধিক বিকাশের জন্য ব্যক্তিস্বাধীনতা আবশ্যক। অর্থাৎ, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যক্তি পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে।"

৩. বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহ লোকায়ত চিন্তা-চেতনাকে প্রভাবিত করে। বৈজ্ঞানিকগণ পরম উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে নব নব আবিষ্কারের নেশায় মেতে উঠেন। তারা আত্মবিশ্বাসের সাথে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে আসেন সৃষ্টির অপার রহস্য উদঘাটনের কাজে এবং মানবকল্যাণ সাধনের উদ্দেশ্যে প্রকৃতি ও পরিবেশকে তারা সভ্যতা বিকাশের কাজে নিয়োজিত করার জন্য তৎপর হয়ে উঠে।

৪. জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: বৈজ্ঞানিকগণের গবেষণামূলক কর্ম ও আবিষ্কারের ফলে তারা কুসংস্কারমুক্ত হন এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গির আমূল পরিবর্তন ঘটে। জীবনের সকল ক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রাধান্যকে তারা মেনে নিতে নারাজ। তারা সবকিছু যুক্তি ও বিবেক দিয়ে যাচাই করে নিতে আগ্রহী হয়।

৫. উপযোগবাদ উপযোগবাদের সর্বপ্রথম প্রবক্তারূপে বেস্থাম, জেমস মিল ও তাঁর পুত্র জন স্টুয়ার্ট মিল আত্মপ্রকাশ করেন। বেস্থামের মতে, "সবকিছু মানুষে উপযোগিতা অনুসারে হওয়া উচিত।" তাঁর মতে, "শাসনব্যবস্থা এবং আইনব্যবস্থা যাই হোক না কেন, তার মূলনীতি হবে সর্বাধিক সংখ্যক ব্যক্তির জন্য সর্বাধিক সুখ নিশ্চিত করা।"

৬. আধুনিক চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠা: ম্যাকিয়াভেলী ষোড়শ শতাব্দীতে মধ্যযুগীয় সনাতন ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করে আধুনিক চিন্তাধারার সূচনা করেন যা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয় এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে, উপযোগবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রসহ বিভিন্ন মতবাদ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

৭. গণতান্ত্রিক আন্দোলন: লোকায়তবাদ বিকাশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের ঐতিহাসিক উক্তি 'of the people, by the people and for the people' ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। "গণতন্ত্রের মূল উৎস হচ্ছে জনগণ, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস" এই চেতনাবোধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পরিণত হয়।

৮. সামাজিক ধ্যানধারণা: শিল্পবিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভব ঘটে, পুঁজিবাদের পুঁজির অসম বিন্যাসের ফলে সমাজে কুফল দেখা দেয় এবং তা দূর করার জন্য উনবিংশ শতাব্দীতে সৃষ্টি হয় সমাজতান্ত্রিক মতবাদের। সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা লোকায়তবাদকে প্রভাবিত করেছে বিশেষভাবে।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সারা বিশ্বে জাতীয়তাবাদ ও লোকায়তবাদের প্রভাব মানুষের চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণার ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত করেছে। জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই দশকের মধ্যে প্রায় ১২৫ কোটি লোক মুক্তি লাভ করেছে সাম্রাজ্যবাদী শাসন থেকে। নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের অবসান ঘটেছে যা ছিল জাতীয়তাবাদী চেতনারই ফলশ্রুতি।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ