- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অনার্স
- আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার উৎপত্তি ও বিকাশ ধারা আলোচনা কর।
ভূমিকা: আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণা সর্বদা স্বীকৃত। প্রাচীন ও মধ্যযুগে আধুনিক রাষ্ট্রের ধারণা বিকাশিত হয়নি। রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে 'পনেরো শতকের পরিষদ আন্দোলনের ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে মধ্যযুগের উত্থান ঘটে। রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস সুদীর্ঘকালের বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে বর্তমান অবস্থায় উন্নীত হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে চিন্তাধারারও পরিবর্তন হতে থাকে। এভাবে রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন আসতে থাকে। যা বর্তমানে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় পরিণত হয়েছে।
আধুনিক রাষ্ট্রচিভার ক্রমবিকাশ সম্বন্ধে নিম্নে আলোচনা করো হলো:
১. রেনেসাঁর প্রভাব: যে শক্তি আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাকে রূপদানে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে তারমধ্যে রেনেসাঁ হচ্ছে অন্যতম। ষোল শতকে রেনেসাঁর মানসপুত্র ম্যাকিয়াভেলী মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তাকে ধর্মীয় প্রভাব থেকে আলাদা করেন এবং নতুনভাবে রাষ্ট্রচিন্তার ব্যাখ্যা দান করেন। মূলত রেনেসাঁই রাজনীতিকে নতুন প্রাণ দান করেছে। রেনেসাঁর জন্ম ইতালিতে। এটি মধ্যযুগীয় চিন্তাধারা ভেঙে দিয়ে সপ্তদশ শতাব্দীতে মানুষকে জীবনের মূল্যবোধ সম্পর্কে ধারণা দান করে।
২. ধর্মসংস্কার আন্দোলন: যে আন্দোলন রাষ্ট্রশক্তি বৃদ্ধি করতে ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্ম ও গণতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলেছিল তা হচ্ছে রেনেসাঁর ধর্মসংস্কার আন্দোলন। রেনেসাঁর মাধ্যমে মানুষ যখন জাতির জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে তখন তারা ধর্মীয় অনাসৃষ্টি এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। ক্যাথলিক ধর্মের বিরুদ্ধে পরিচালিত এই আন্দোলনের নাম Reformation বা সংস্কার আন্দোলন।
৩. জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণা: জাতীয় রাষ্ট্র ও সার্বভৌম ধারণার থেকে রাষ্ট্রচিন্তা মধ্যযুগীয় বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে এসে আধুনিকভাবে যাত্রা শুরু করে। মধ্যযুগীয় ব্যক্তির জন্য ধর্ম অপরিহার্য ধারণার বদলে ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র অপরিহার্য হয়ে পড়ে। জন্ম হয় প্রাকৃতিক অধিকার সামাজিক চুক্তি, ক্ষমতার বিভাজন ইত্যাদি ধারণার। ব্যক্তির নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষার জন্যে চরম রাজতন্ত্র ও জাতীয় রাষ্ট্র এবং সার্বভৌম তত্ত্বের উদ্ভব ঘটে আর এ সার্বভৌম ধারণার রাষ্ট্রচিন্তাকে আধুনিকযুগে রূপায়িত করে।
৪. ব্যক্তিস্বাধীনতার উন্মেষ: ক্রমে ব্যক্তিস্বাধীনতা ভাবধারার উন্মেষ ঘটতে থাকে। মানুষ ব্যাপকভাবে সচেতন হতে থাকে। ব্যক্তির অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি উন্নয়নের প্রেক্ষিতে মধ্যযুগীয় রাষ্ট্রচিন্তার শৃঙ্খল ভেঙে পড়ে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণের পক্ষে সচেতনতা ধর্মের নির্দেশের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি কুঠারাঘাত হানে। ক্রমেই মানুষের মধ্যে সাম্য ও গণতন্ত্রের আদর্শ দানা বেঁধে ওঠে।
৫. ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব : আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশ ধারায় ফরাসি বিপ্লবের সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের বাণী অত্যন্ত কার্যকর প্রভাব ফেলেছে এতে সন্দেহ নেই। রুশো, ভলতেয়ার প্রমুখ দার্শনিকগণ ফরাসি বিপ্লবের প্রবক্তা হিসেবে আধুনিককালে রাষ্ট্রদর্শনের ধারার নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছেন।
৬. শক্তিশালী রাজতন্ত্র: মধ্যযুগের শেষের দিকে এবং আধুনিক যুগের প্রারম্ভে এশিয়া, ইউরোপ, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে শক্তিশালী রাজতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে এবং মানুষের চিন্তাধারার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। ফলে মধ্যযুগীয় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানের ওপর আঘাত হানে। রাজার ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে চার্চের আইনগত ক্ষমতা রহিত হয়।
৭. মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার : মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে মাইলস্টোন হিসেবে ভূমিকা পালন করে। নতুন নতুন রাজনৈতিক চিন্তার ব্যাপক প্রচার প্রসার ও বিকাশ লাভ করে যা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে নতুন দিগন্তের উন্মেষ ঘটায়।
৮. জাগরিক ধারণার প্রভাব : Ealiatment ধারণার প্রসারের ফলে ব্যক্তি চিন্তাচেতনায় আসে শৃঙ্খল ভাঙার প্রবণতা তথা জাগতিক ভাবধারা। এ ভাবধারার পরিপ্রেক্ষিতেই ফরাসি ও আমেরিকার বিপ্লবের মতো যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে। যার ফলে জন্ম নেয় উদারনীতির ভাবধারা।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশ ঘটেছে ধারাবাহিকতার উপর ভিত্তি করে। মধ্যযুগীয় অযৌক্তিক চিন্তাচেতনা মানুষের মনে যে অনাস্থার জন্ম দিয়েছিল ও অসন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়েছিল, তার প্রতি বিদ্রোহ প্রদর্শনের উপায় হিসেবে বিভিন্ন কার্যকর ভাবধারা ও শক্তির প্রভাবে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার জন্ম। আধুনিক রাষ্ট্রদর্শনে ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বিস্তৃতি লাভ করছে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ