- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অনার্স
- আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
রাষ্ট্রচিন্তার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ আলোচনা কর।
ভূমিকা : রাষ্ট্র হলো সমাজ জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান। যেসব সামাজিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে মানুষ যুগ যুগ ধরে চিন্তাভাবনা করে আসছে তন্মধ্যে রাষ্ট্র অন্যতম। এর মাধ্যমেই মানুষের সামাজিক জীবনের সূচনা এবং এর গতি প্রবাহমান। প্রাচীন রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রাচীন গ্রিসে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চিন্তাবিদ বা রাষ্ট্রদার্শনিক জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রাচীন গ্রিস ছিল সভ্যতার লীলাভূমি। তখনকার গ্রিস থেকে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে অন্যান্য রাষ্ট্র সমৃদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে রাজনীতিতে ন্যায়বোধ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, যুক্তি ইত্যাদি বিষয় ছিল গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তার মৌলিক দিক। বর্তমান রাষ্ট্রচিন্তার যে বিস্ত ত ক্ষেত্র দেখা যায়, তা একদিনে তৈরি হয়নি। এটি বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন মনীষীর দীর্ঘদিনের চিন্তাধারার ফসল।
রাষ্ট্রচিন্তার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিম্নে রাষ্ট্রচিন্তার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশকে গবিভাগের মাধ্যমে আলোচনা করা হলো-
১. প্রাচীন যুগ: প্রাচীন যুগের রাষ্ট্রচিন্তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্রিক রাষ্ট্রদর্শন। সকল যুগের রাষ্ট্রদর্শনই তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার দ্বারা প্রবাহিত হয়। গ্রিক রাষ্ট্রদর্শনও এর ব্যতিক্রম নয়। প্রাচীনকালে পুরো গ্রিস অনেকগুলো নগররাষ্ট্রের সমষ্টি ছিল। তন্মধ্যে স্পার্টা ও এথেন্স ছিল বিখ্যাত। এই দুই নগররাষ্ট্রে বিজ্ঞান, শিল্পকলা প্রভৃতির যেমন বিকাশ ঘটে তেমনি এ দুই নগররাষ্ট্রের মধ্যে ত্রিশ বছর যাবৎ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। বর্তমানের গণতন্ত্রের জন্মও এ দুই নগররাষ্ট্রের রাজনৈতিক শিক্ষা থেকে হয়েছে। তবে এ দুটি নগররাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বিদ্যমান ছিল। তন্মধ্যে স্পার্টার গণতন্ত্র ছিল অনেকটা অভিজাততান্ত্রিক। ঐ সময়ের রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের চিন্তাজগতে এথেন্সের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র, স্পার্টার অভিজাততান্ত্রিক গণতন্ত্র, দুই নগররাষ্ট্রের মধ্যকার যুদ্ধ প্রভৃতি যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিল। প্রাচীন যুগে রাষ্ট্রচিন্তার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে যেসব মনীষী অবদান রেখেছেন তাদের সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
(ক) সক্রেটিস: গ্রিক চিন্তাজগতের প্রবাদপুরুষ সক্রেটিস ছিলেন মূলত একজন দার্শনিক, তদুপরি রাষ্ট্রচিন্তায় তিনি যথেষ্ট অবদান রাখেন। তাকেই রাষ্ট্রচিন্তার প্রথম দার্শনিক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সক্রেটিসের রাষ্ট্রচিন্তার মূল ভিত্তি হচ্ছে সদগুণই জ্ঞান (Virtue is knowledge) ।
(খ) প্লেটো: সক্রেটিসের পর রাষ্ট্রচিন্তা প্রায় পূর্ণতা পেয়েছিল সক্রেটিসের অন্যতম শিষ্য প্লেটোর মাধ্যমে। প্লেটোই প্রথম সফল রাষ্ট্রদার্শনিক। সুচিন্তিত দর্শনতন্ত্রের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রেক্ষিতে তিনিই প্রথম ব্যক্তি। রাষ্ট্রচিন্তায় তার উল্লেকযোগ্য অবদান নিম্নরূপ:
(i) ন্যায়বিচার তত্ত্ব: ন্যায়বিচার তত্ত্ব প্লেটোর 'The Republic' গ্রন্থের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। তার রিপাবলিকের রাষ্ট্রীয় মতবাদ চূড়ান্ত রূপ লাভ করেছে ন্যায়বিচারের ধারণার মাধ্যমে। ন্যায়বিচার তত্ত্বকে কেন্দ্র করেই প্লেটো বলতে চেয়েছেন, রাজনৈতিক চিন্তাকে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। তিনি মনে করেন, স্বাভাবিকভাবে রাজনৈতিক চিন্তা ও কর্মকাণ্ড সবসময়ই হবে নীতিবাচক।
(ii) আদর্শ রাষ্ট্র: প্লেটোর রাষ্ট্রদর্শনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল একটি আদর্শ রাষ্ট্র গঠন করা। তার মতে, কেবল আদর্শ রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার নিহিত। তিনি আদর্শ রাষ্ট্রতত্ত্বের মাধ্যমে নাগরিকের শ্রেণিবিভাগ, শ্রমবিভাজন, রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয়তা, শিক্ষাব্যবস্থা, সম্পত্তির সাম্যবাদ, নারীর সমঅধিকার, সর্বাত্মকবাদ, অভিজাততন্ত্র প্রভৃতি বিষয়কে ফুটিয়ে তুলেছেন।
(গ) এরিস্টটল প্রাচীন যুগের রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের মধ্যে এরিস্টটল অন্যতম। বিজ্ঞানভিত্তিক ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা ছিল তার রাষ্ট্রদর্শনের মূল ভিত্তি। "The Politics" তার সর্বোৎকৃষ্ট গ্রন্থ। এতে তিনি তার রাষ্ট্রদর্শনের স্বাতন্ত্র্য ফুটিয়ে তুলেছেন। রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে তার উল্লেখযোগ্য অবদানসমূহ নিম্নে প্রদত্ত হলো:
(i) মৌলিকত্ব: এরিস্টটল রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেন। রাষ্ট্রচিন্তায় যুক্তির ব্যবহার তিনিই প্রথম চালু করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, তুলনামূলক পদ্ধতির মতো মৌলিক বিষয়গুলো তারই সৃষ্টি।
(ii) বিপ্লবতত্ত্ব: রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে এরিস্টটলের অনুসন্ধিৎসা অত্যন্ত গভীর ছিল, তা বিপ্লব সম্পর্কিত ধারণা থেকে বুঝা যায়। তিনি প্রতিটি রাষ্ট্রব্যবস্থার সম্ভাব্য বিপ্লবের কারণ, নিয়ে গবেষণা করেন এবং তা থেকে উত্তরণের পথ বা বিপ্লব প্রতিরোধের উপায়ও তিনি খুঁজে বের করেন।
(iii) সংবিধানবাদ: এরিস্টটল ১৫৮টি নগররাষ্ট্রের সংবিধান নিয়ে গবেষণা করেন এবং এগুলোর শ্রেণিবিন্যাস করেন, দুর্বলতা খুঁজে বের করেন এবং কোনটি উত্তম সংবিধান তা খুঁজে দেখেন। তিনি সংবিধান ও রাষ্ট্রকে একই অর্থে ব্যবহার করেন। তিনি তার সংবিধানবাদ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আইনের সার্বভৌমত্বের কথা বলেন, যা বিবর্তনের ধারা অব্যাহত রেখে বর্তমানে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কার্যকর রয়েছে।
২. মধ্যযুগ: রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে মধ্যযুগীয় রাজনৈতিক চিন্তাধারা তেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে আর্নেস্ট বার্কার মন্তব্য করেন, "হাজার বছরব্যাপী পাশ্চাত্যের ইতিহাসের এ অধ্যায়ে সভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে তেমন কোনো মূল্যবান মণিমুক্তা সংগৃহীত হয়নি।" এছাড়া অধ্যাপক ডানিং বলেন, "মধ্যযুগ ছিল অরাজনৈতিক। এ যুগের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং মতাদর্শ ধর্মীয় বিশ্বাসের রূপ ও প্রকৃতি দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল।" তদুপরি এ যুগে যেসব রাষ্ট্রচিন্তাবিদ ও দার্শনিক তাদের মতবাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রচিন্তাকে সমৃদ্ধ করেছেন ও বিকাশে সহায়তা করেছেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
(ক) সেন্ট অগাস্টিন: মধ্যযুগে পোপপন্থি দার্শনিকদের মধ্যে যার প্রভাব রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনি হলেন সেন্ট অগাস্টিন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো 'The City of God'। তিনি রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে সংশয়বাদ ও নব্য প্লেটোবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর পর অগাস্টিনই প্রথম ব্যক্তি যিনি ন্যায়বিচার সম্পর্কে মৌলিক ও তথ্যবহুল আলোচনা করেছেন। ন্যায়বিচারের ন্যায় শাস্তি সম্পর্কেও অগাস্টিন মূল্যবান মতবাদ প্রদান করেন। তার মতে, শত্রু ছাড়া যেমন যুদ্ধ হয় না, তেমনি সৌভাতৃত্ব বা মিলনের অংশীদার ছাড়া শাস্তি হয় না।
(খ) সেন্ট টমাস একুইনাস সেন্ট টমাস একুইনাস তের শতক তথা সমগ্র মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা সফল দার্শনিক। তিনি এরিস্টটলের দর্শন দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন। এজন্য তাকে মধ্যযুগের এরিস্টটল বলা হয়। তার রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান দিকসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
(i) আইন তত্ত্ব: একুইনাসের সামগ্রিক দর্শন তার আইন তত্ত্বের মধ্যে অধিকতর মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে। তার মতে, মানুষের অভিন্ন কল্যাণ নিশ্চিত করাই আইনের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, 'আইন সার্বভৌম এবং সরকার আইনের ভৃত্য'।
(ii) সরকারের শ্রেণিবিভাগ: সরকারের শ্রেণিবিভাগের ব্যাপারে একুইনাস এরিস্টটলের নীতি অবলম্বন করেছেন। সকলের মঙ্গল ও শুধু শাসকের মঙ্গল এই দুই লক্ষ্যের ভিত্তিতে তিনি সরকারকে ন্যায়পরায়ণ ও বিকৃত- এই দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন।
৩. আধুনিক যুগ পনের শতকের শেষ দিকের পরিষদ আন্দোলনের ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে মধ্যযুগের অবসান ঘটে এবং ষোল শতকে আধুনিক যুগের সূত্রপাত হয়। রেনেসাঁ আন্দোলন, দীপ্তিবাদ, ফরাসি বিপ্লব প্রভৃতি রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে আধুনিক যুগের সূত্রপাত ঘটায়। বিজ্ঞানভিত্তিক বস্তুবাদী চিন্তার প্রসার আধুনিক যুগের রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আধুনিক যুগের যেসব দার্শনিক রাষ্ট্রচিন্তাকে প্রভাবিত করেছে নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:
(ক) ম্যাকিয়াভেলী: আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার পথপ্রদর্শক এবং মধ্যযুগের রাজনৈতিক মতাদর্শের বিরুদ্ধে যিনি প্রথম সোচ্চার হয়েছিলেন তিনি হচ্ছেন নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি। জাতীয় রাষ্ট্র বা স্টেট (State)-এর কথা তিনিই প্রথম উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে তিনি যথেষ্ট অবদান রাখেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
(i) রাষ্ট্র: ম্যাকিয়াভেলি রাষ্ট্রকে প্রাকৃতিক বা দৈব আইনের আওতা থেকে মুক্ত করেন। তিনি ঘোষণা করেন, রাষ্ট্রই সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান, তবে তার উপরে কোনো পার্থিব বা দৈবশক্তি থাকতে পারে না। রাষ্ট্র যথার্থই স্বাভাবিক একটি প্রতিষ্ঠান- এরিস্টটলের এ উক্তিকে তিনি নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাছাড়া তিনিই জাতীয় রাষ্ট্রের প্রথম প্রবক্তা।
ii. মূল্যবোধ বিবর্জিত দৃষ্টিভঙ্গি: ম্যাকিয়াভেলি ধর্ম ও নৈতিকতা থেকে রাষ্ট্রদর্শনকে পৃথক করেন। এর মাধ্যমে তিনি রাষ্ট্রচিন্তার জগতে মুক্ত ও বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করেন। তিনি রাষ্ট্রচিন্তাকে মূল্যবোধ বিবর্জিত দৃষ্টিভঙ্গির উপর প্রতিষ্ঠা করেন যা আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
(খ) টমাস হবস: সতের শতকের অন্যতম দার্শনিক টমাস হস ইউরোপের রাষ্ট্রদর্শনের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে তার বিশেষ অবদান নিম্নে আলোচনা করা হলো:
(১) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ টমাস হবস রাষ্ট্রচিন্তার বিশ্লেষণে সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করেন তার সময়ে বিজ্ঞানে যে উৎকর্ষ সাধিত হয় তাকে তিনি পরিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রচিন্তা বিশ্লেষণে প্রয়োগ করেন। তিনি সমাজের মানুষের আবেগ-অনুভূতি, আশা-আকাঙ্ক্ষা এমনকি ধর্ম ও নৈতিকতা প্রভৃতিকে বস্তুবাদের মানদণ্ডে বিচার করেন।
(ii) সামাজিক চুক্তি মতবাদ হবসের মতে, দ্বিতীয় প্রাকৃতিক আইনের বিধান অনুসারে প্রকৃতির রাজ্যের সকল মানুষ তাদের যাবতীয় প্রাকৃতিক অধিকার তৃতীয় কোনো ব্যক্তিবর্গের হাতে নিঃশেষে অর্পণ করে দেয়। হবস সামাজিক চুক্তি মতবাদের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে রাষ্ট্রের উৎপত্তি বর্ণনা করেন।
(গ) জন লক: বিখ্যাত ইংরেজ দার্শনিক জন লক রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে যে অবদান রাখেন তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
(i) সম্পত্তি তত্ত্ব: লকের রাষ্ট্রদর্শনে সম্পত্তি তত্ত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার মতে, রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার আগে মানুষ যেসব প্রাকৃতিক অধিকার ভোগ করতো তার মধ্যে সম্পত্তির অধিকারই প্রধান।
(ii) সামাজিক চুক্তিমতবাদ লকের মতানুসারে প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ যে প্রাকৃতিক অধিকার ভোগ করতো তা হবসের প্রাকৃতিক অধিকারের ন্যায়। যা ইচ্ছা করার সীমাহীন কোনো ক্ষমতাকে বুঝায় না। লকের প্রকৃতির রাজ্য আইনের দ্বারা সীমিত।
(ঘ) জ্যাঁ জ্যাক রুশো আঠার শতকের বিখ্যাত ফরাসি দার্শনিক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ জ্যাঁ জ্যাক রুশো। রাষ্ট্রচিন্তার বিকাশে তার অবদান অপরিসীম। রুশো তার 'Social Contract' গ্রন্থে প্রকৃতির রাজ্যের যে চিত্র অঙ্কন করেছেন তা হবস ও লকের চিত্রের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তার মতে, 'প্রকৃতির রাজ্য' ছিল সুখ-স্বাধীনতা ও সমতার রাজ্য। রাষ্ট্রচিন্তায় রুশোর সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে তিনি ছিলেন গণতন্ত্রের অগ্রদূত। বাস্তব ক্ষেত্রে তার রাষ্ট্রদর্শন ফরাসি বিপ্লবের দিক-নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছিল।
উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমান যুগের রাষ্ট্রচিন্তা একদিনে বিকশিত হয়নি। এটি ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। এই রাষ্ট্রচিন্তার মূল স্রোতধারা হচ্ছে গ্রিক রাষ্ট্রচিন্তা। গ্রিকদের রাষ্ট্রচিন্তার উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে বিভিন্ন দার্শনিক বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রচিন্তা নিয়ে আলোচনা করেছেন তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। একথা বলা যায় যে, আজ পর্যন্ত যত রাজনৈতিক চিন্তা, তথ্য ও দর্শনের উৎকর্ষের কথা বলা হয়ে থাকে তার সবগুলোর সূচনায় রয়েছে প্রাচীন গ্রিসের রাষ্ট্রচিন্তা। তবে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার মূলভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল ম্যাকিয়াভেলির দ্বারা। রাষ্ট্রচিন্তা আদি থেকে ষোল শতক পর্যন্ত যতটুকু বিকশিত হয় তার চেয়ে বেশি বিকশিত হয় পরবর্তী কয়েকশ বছরে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ