• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • অনার্স
  • আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি
আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার আর্থসামাজিক পটভূমি

আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় জাতিবাদের প্রভাব বৃদ্ধির কারণ আলোচনা কর।

ভূমিকা: ষোড়শ শতাব্দী থেকে অদ্যাবধি মানুষের চিন্তা-চেতনা ও ধ্যানধারণাকে যেসব রাষ্ট্রীয় আদর্শ বিশেষভাবে প্রভাবিত করে আসছে জাতিবাদ তাদের অন্যতম। যুগ যুগ ধরে এক সাথে বসবাস করার ফলে একই ভাষা, ঐতিহ্য, আচার-ব্যবহার, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সুখ ও দুঃখ ইত্যাদির প্রভাবে একত্রিত হয়ে একটি বিশেষ জনগোষ্ঠী জাতিতে পরিণত হয়। আর ঐ নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর অন্তর্গত সম্মিলিত চেতনাই জাতিবাদ নামে অভিহিত।

জাতিবাদের প্রভাব নিয়ে আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তায় জাতিবাদের প্রভাব বৃদ্ধির কারণ আলোচনা করা হলো-

১. ফরাসি বিপ্লব: ফরাসি বিপ্লব হচ্ছে জাতীয়তাবাদের প্রভাব বিস্তারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ফরাসি বিপ্লবের অভিঘাত পুরানো সমাজকাঠামো রাষ্ট্রব্যবস্থা ও গতানুগতিক রাষ্ট্রের সীমা সম্পর্কিত ধারণা চূর্ণ করে দেয়। প্রধান তিনটি ধারায় বিপ্লবোত্তর ইউরোপে জাতীয়তাবাদ প্রবাহিত হয়। যথা- (ক) রক্ষণশীল জাতিবাদ, (খ) উদারনৈতিক জাতিবাদ ও (গ) গণতান্ত্রিক জাতিবাদ।

২. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি: যোগাযোগ ব্যবস্থায় দ্রুত বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হওয়ায় মানুষের মধ্যে পারস্পরিক লেনদেন, নতুন মূল্যবোধ, ধ্যানধারণা ও মনোভাব বিনিময়ে পূর্বের তুলনায় সহজতর হয় যা রাষ্ট্রচিন্তায় জাতীয়তাবাদের প্রভাব বিস্তারে বিশেষভাবে সহায়তা করেছে।

৩. জাতীয়তাবাদী স্বাধীন চেতনা বৃদ্ধি: ফরাসি বিপ্লব যেমন 'জাতীয়তাবাদের প্রভাব বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করেছে, তেমনি শিল্প বিপ্লবোত্তরকালেই, জাতীয়তাবাদী চেতনা ইউরোপে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কেননা এ বিপ্লবের ফলে বুর্জোয়া ও পুঁজিবাদী সমাজ বিকাশ লাভ করে। বিপুল পরিমাণ উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী বাজার সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে শুরু হয় প্রতিযোগিতা। এর ফলে জাতীয়তাবাদী চেতনা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

৪. জাতীয় রাষ্ট্রের সৃষ্টি: জাতীয়তাবাদের বিকাশধারা চৌদ্দ শতক থেকে আঠার শতক পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। বিশেষ করে মধ্যযুগীয় প্রতিষ্ঠান ও সমাজব্যবস্থা পতনের সাথে সাথে চিন্তার ক্ষেত্রে যে বিশ্বজনীন ধারণাটি প্রবাহমান ছিল তা রোমক আইনের ঐতিহ্য ও ধর্মীয় আইন। পরবর্তী পরিস্থিতিতে সার্বভৌমত্বভিত্তিক জাতিরাষ্ট্রের চিন্তা ও চেতনার বিকাশে এসবের অবসান ঘটে। অতএব এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মধ্যযুগীয় ঐতিহ্য ও পশ্চিমা কৃষ্টির বিশ্বজনীন ধারায় ভগ্নস্তূপ জাতীয় রাষ্ট্রের বুনিয়াদ সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।

৫. আদর্শগত বুনিয়াদ সৃষ্টি: সনাতন ধ্যানধারণা ও ধর্মীয় চেতনার পতনের ফলে অগণিত মানুষ ধর্মীয় আনুগত্যের পরিবর্তে জাতীয়তাবাদকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করার ফলে এর প্রভাব আরও বৃদ্ধি পায়। প্রায় সকল আধুনিক রাষ্ট্রের আদর্শগত বুনিয়াদ জাতীয়তাবাদের প্রভাবকে আরও বৃদ্ধি করে। বিভিন্ন প্রকার কৃষ্টি, আচার-অনুষ্ঠান, যেমন- জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনার ইত্যাদি জাতীয়তাবাদকে দ্রুতগতিতে প্রভাবিত করেছে।

৬. জাতীয় চেতনাবোধ সৃষ্টি জাতীয় চেতনাবোধ জাতিবাদ বিকাশের অন্যতম কারণ। রাজশক্তি নয় জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার ধারক ও বাহক এ ধারণা রুশোর লেখনীতেই প্রথম প্রকাশ পায়। আঠার শতকে রুশোর ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে ফরাসি বিপ্লবীরা রাজশক্তির কবল থেকে জনশক্তির হাতে সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে সোচ্চার হয়ে বিপ্লবের পথে অগ্রসর হয়।

৭. বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটে। ফলে মানুষ সবকিছুকেই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করতে শেখে। এতে জাতীয়তাবাদের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

৮. ভাষা আন্দোলন ঊনিশ শতকের প্রথমার্ধে ভাষা আন্দোলন জাতীয় রাষ্ট্রীয় চেতনার প্রধান কৃষ্টির উপর বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সাবেক পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের জাতীয় চেতনাকে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন তীব্রভাবে প্রভাবিত করেছিল।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে, সারা বিশ্বে জাতীয়তাবাদ ও লোকায়তবাদের প্রভাব মানুষের চিন্তা-চেতনা ও ধ্যানধারণায় ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত করেছে। জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই দশকের মধ্যে প্রায় ১২৫ কোটি লোক মুক্তি লাভ করেছে সাম্রাজ্যবাদী শাসন থেকে। নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের অবসান ঘটেছে যা ছিল জাতীয়তাবাদী চেতনারই ফলশ্রুতি।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ